ডেস্ক রিপোট:-৬৫ হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক ১০ লেনে উন্নীত এবং দুই পাশে দুইটি করে চারটি স্লো মুভিং ভ্যাহিক্যাল (এসএমভি) লেন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত সমীক্ষা শেষে বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রিপোর্ট দাখিল করেছে। রিপোর্ট যাচাই বাছাই শেষে প্রকল্প সারপত্র তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত এই মহাসড়কটিকে বিদ্যমান ৪ লেন থেকেই দশ লেনে উন্নীত করা হবে। যাতে অন্তত আগামী কয়েক দশকের চাহিদা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। উল্টো গাড়ি চলাচলের প্রবণতা রোধ করতে দুই পাশে দুইটি করে সার্ভিস লেন নির্মাণ এবং যেসব স্থানে হাট–বাজার বা যানজটের প্রবণতা রয়েছে সেখানে ওভার পাশ নির্মাণ করা হবে। সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি সেল গঠন করে দেয়া হয়েছে। ওই সেলের আওতায় পুরো প্রকল্পটির কাজ চলছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ঢাকা চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে সূত্র মন্তব্য করেছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ের উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই সড়কটিকে এমনভাবে ১০ লেনে উন্নীত করা হচ্ছে যাতে ঢাকা থেকে কোনো গাড়ি চট্টগ্রামে আসতে চাইলে কিংবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে চাইলে কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা ছাড়া যাতায়াত করতে পারে। প্রথম ছয় কিলোমিটার থাকবে এঙেস কন্ট্রোল। যেখানে যে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। ওখানে প্রবেশ করা গাড়িকে নির্দিষ্ট গন্তব্য পর্যন্ত ওই রাস্তায় নির্দিষ্ট গতিতে চলতে হবে। ফেনী কিংবা কুমিল্লা থেকে কোনো গাড়ি এই রোডে প্রবেশ করতে হলে ওগুলো হুট করে রাস্তায় উঠে যেতে পারবে না। নিজেদের রোড ধরে এগিয়ে তবেই মূল সড়কে উঠতে হবে। রাস্তাটির মাঝের ছয় লেন থাকবে ডেটিকেটেড। দুই পাশে দুই লেন করে মোট চার লেন থাকবে স্লো মুভিং ভ্যাহিক্যাল রোড। যেখানে স্বল্প গতির এবং স্থানীয় গাড়িগুলো চলাচল করবে। ঢাকা চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, মহাসড়কটি নির্মাণ–পরবর্তী ১৫ বছর যেন ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে আর কোনো কাজ করতে না হয়, সে লক্ষ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে ও সাসেক করিডোরে সংযুক্ত হবে। কঙবাজার এবং তিন পার্বত্যজেলার সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও যাতে এই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব থাকে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মহাসড়কটি সমপ্রসারণের জন্য প্রায় এক বছর আগে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমইসির নেতৃত্বে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়াম মাঠপর্যায়ে সমীক্ষাটি পরিচালনা করছে। সওজ অধিদফতরের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, মহাসড়কটি সমপ্রসারণে একটি বিস্তারিত নকশাও তৈরি করে দিয়েছে এ কনসোর্টিয়াম। এসব কাজে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে বিস্তারিত সমীক্ষা সড়ক ও জনপথ বিভাগের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই সমীক্ষা রিপোর্ট যাছাই বাছাই করে এখন ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। ডিপিপি অনুমোদনের পর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান কর প্রকল্প বাস্তবায়নের ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়ে সূত্র বলেছে যে, প্রকল্পের আওতায় ব্রিজ, ওভারব্রিজসহ যাবতীয় কাজ মিলে ৬৬ হাজার ৫শ’ ৮৯ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র বলেছে, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার দূরত্বের এই মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট থেকে সিটি গেট পর্যন্ত যেসব স্থানে যানজট তৈরি হতে পারে, সেগুলোয় ওভারপাস করে দেয়া হবে। যেসব স্থানে সড়ক বাঁকা, সেগুলো সোজা করা হবে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটিতে অর্থায়নে অনেক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আগ্রহও দেখিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালে মহাসড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করতে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এই সড়ক দিয়ে দৈনিক অন্তত ত্রিশ হাজার হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচল করে বলেও সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে। যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এতে করে বিদ্যমান চার লেনে সক্ষমতার চেয়ে বেশি যানবাহন চলাচল করায় মহাসড়কটির বিভিন্ন অংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতেই সড়কটিকে দশ লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটিকে সরকার অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করছে বলেও সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান।আজাদী