গাইবান্ধা:- খরা মৌসুমে চারদিকে কেবল বালু আর বালু, বর্ষা মৌসুমে থইথই পানি। গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার এমনি একটি গ্রামের নাম বাজে ফুলছড়ি! সে গ্রামেই বাড়ি ফরিদা বেগমের। তাঁর বয়স ৩৪ বছর।
বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনে বাড়িঘরসহ মূল্যবান সম্পদ নদীতে বিলীন হয়ে যায় অনেক পরিবারের। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকেন চরের মানুষেরা। বেঁচে থাকার এই লড়াই-ই হয়তো ফরিদা বেগমকে জীবনের সব প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচতে শিখিয়েছে। ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। তিন সন্তান জন্মের পর ভেঙে যায় সংসার। সন্তানদের নিয়ে ফিরে আসতে হয় মা-বাবার ঠিকানায়। হতদরিদ্র বাবার বোঝা হয়ে থাকতে চাননি তিনি। কাজের বিনিময়ে দুবেলা দুমুঠো খাবারের আশায় বিভিন্ন জায়গায় ছুটতে থাকেন ফরিদা। বারবার প্রত্যাখ্যাত হতে থাকেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। ফলে তিন সন্তান নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। জীবনে নেমে আসে হতাশা।
হঠাৎ এলজিইডির অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে দুস্থ জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধি (প্রভাতি) প্রকল্পের চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক দলে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। পরে গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ জীবনমান উন্নয়নভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেই মজুরির টাকা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসার চালানোর পাশাপাশি সঞ্চয় করতে থাকেন। সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে গাভি পালন শুরু। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
একসময় যাঁর মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, সেই ফরিদা এখন নিজে বসতবাড়ি-ভিটেসহ আবাদি জমি কিনে ফসলের চাষাবাদ করছেন। ২০২১ সালে এলজিইডির সেক্টরভিত্তিক আত্মনির্ভরশীল নারীদের মধ্যে পল্লি উন্নয়ন সেক্টরে ফরিদা বেগম দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
এলসিএস মনিটরিং জীবিকা কর্মকর্তা খন্দকার জাকির হোসেন জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে প্রান্তিক গোষ্ঠী অবহেলিত নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এরই আওতায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার চরবেষ্টিত দুস্থ নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করার জন্য কাজ শুরু করেন। এই প্রকল্পে কাজ করে ফরিদার মতো অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। জাকির হোসেনের ব্যক্তিগত চাওয়া, অবহেলিত নারীরা কাজের দক্ষতা অর্জন করে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।