শিরোনাম
আদালতে সাবেক সিইসি নুরুল হুদার দায় স্বীকার মুক্তি পেলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৫৬ বন্দি রাঙ্গামাটিতে দুই অটোরিকশার সংঘর্ষে মাছ ব্যবসায়ী নিহত শব্দনিরোধক কক্ষে যমটুপি পরিয়ে ১০ কায়দায় চলত নির্যাতন—গুম কমিশনের প্রতিবেদন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও যুগ্ম সচিব কংকন চাকমার যেসব অভিযোগে অপসারণ চাইছে পার্বত্যবাসী জুলাই অভ্যুত্থান ছিল রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়া–প্রধান উপদেষ্টা আরও উত্তপ্ত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক দুদকের জালে তানভীরসহ ৩৬ প্রেস মালিক চেতনার মানচিত্রে রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থান অগ্নিঝরা জুলাই,এক বছরেও হয়নি শহীদ ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা,৬ জনের মরদেহ এখনো মর্গে পড়ে আছে

প্রতিদিন আন্দোলন, প্রতিদিন জনদুর্ভোগ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫
  • ৯২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর এবার সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পুনরায় আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছেন। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরাও আবার আন্দোলনে নামবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনে রয়েছেন নার্সিং শিক্ষার্থীরাও। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনে প্রায় প্রতিদিনই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে।

সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আবারও আন্দোলনে নামতে যাচ্ছেন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। রোববারের মধ্যে সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’-এর জন্য অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে শিক্ষার্থীরা আবার মাঠে নেমে কর্মসূচি পালন করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। দাবি আদায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলছেন আন্দোলনের নেতারা। এবার রাজপথ থেকে দাবি আদায় করেই তারা ক্যাম্পাসে ফিরবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আবার রাজপথে নামার কথা জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘আমরা আমাদের শিক্ষার অধিকারটুকু চাই। আমরা আর রাজপথে নামতে চাই না। রোববারের (১৮ মে) মধ্যে যদি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি না হয়, তাহলে সোমবার (১৯ মে) থেকে আবার মাঠের কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব। যদি আবার মাঠে নামতে হয়, তাহলে এবার রাজপথ থেকেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরব। ’

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে আরও রয়েছে— অন্তর্বর্তী প্রশাসন নিয়োগের পর সেশনজট নিরসনসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার বানাতে হবে; বিভিন্ন ইস্যুতে অতিরিক্ত ফি আদায় এবং যাবতীয় অসংগতি স্পষ্টভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে; পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা, লোগো, মনোগ্রাম প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া আগামী ১৬ জুনের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। একইসঙ্গে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট নির্ধারণ করার দাবি করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

কয়েক বছর ধরেই আন্দোলনে রয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে তারা জোরালো আন্দোলন করছেন। দাবি আদায়ে মিছিল-সমাবেশ, রাস্তা ও রেললাইন অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি তারা পালন করেছেন।

সরকারি, বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীরা ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে আন্দোলন করছেন। গত মাসে এই কারিগরি ছাত্র আন্দোলন ছয় দফা দাবি দেয়। তাদের দাবিগুলো হলো—
১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবতর্ন ও মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।

৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) এর পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

৫. কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরাবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

এসব দাবি নিয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ফের মাঠে নামবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ডেন্টাল সার্জন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করছেন বিডিএস পাস করা ডেন্টাল সার্জনরা। আসন্ন ৪৮তম বিসিএসে ৫০০ ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। বিসিএসের মাধ্যমে ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের দাবি জানিয়ে ডেন্টাল সার্জনরা বলছেন, দেশের ১৮ কোটি জনগণের জন্য মানসম্মত দন্তসেবা নিশ্চিত করতে বিসিএসের মাধ্যমে ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষিত বেকারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব ভোগ করছেন ডেন্টাল সার্জনরা। কিন্তু প্রতিবারই বিসিএসে ডেন্টাল সার্জনদের পদ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

গত ১৫ মে ডিপ্লোমা নার্সিং শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনকারীরা সরকারের কাছে দাবি জানান, ডিপ্লোমা নার্সিংকে ব্যাচেলর ডিগ্রির সমমান ঘোষণা করা হোক। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় নীতিগত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।

নার্সিং শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দাও’, ‘ডিপ্লোমা ও বিএসসিকে সমমান ডিগ্রি দাও’, ‘বৈষম্য আর নয়’ ইত্যাদি। নার্সিং সেক্টরে চলমান দুর্নীতি, বৈষম্য দূর করতে নার্সদের ১৭ দফা দাবি আছে। গত বছর আগস্ট থেকে ‘সচেতন নার্স ও মিডওয়াইফ সমাজ’ নামে তারা আন্দোলনে নামেন। ১৭ দফা দাবিতে তারা বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন।

নার্সদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার পদে একজন যোগ্য নার্স নিয়োগ এবং বর্তমানে কর্মরত দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপসারণ; পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টদের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি সমমানের প্রজ্ঞাপন বাতিল এবং ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর কোর্স বন্ধ করা; ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স দুটির সনদের মান স্নাতক (পাস) কোর্স সনদের সমমান করা এবং নার্সিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা; নার্সিংয়ে বিসিএস চালু, পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিসিএস ও বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে পদ বণ্টন।

এসব দাবিতে গত বছর নার্সরা আন্দোলন করেছিলেন। তাদের ১৭ দফার কিছু কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে তাতে তারা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় বলে জানা গেছে।

এভাবে একের পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা তাদের নানান দাবিতে একের পর এক আন্দোলন করছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তখন থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের নানান দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নামতে শুরু করে। এতে নানাবিধ সংকট ও জনদুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে— এত আন্দোলন কেন? সরকার কি স্বল্প সময়ে একসাথে সব দাবি পূরণে সক্ষম?

পেশাজীবীরা সবসময়ই তাদের নিজস্ব নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামেন। সরকারি-বেসরকারি প্রত্যেক পেশার মানুষের বিভিন্ন ধরনের দাবি-দাওয়া থাকেই। পাওয়া না পাওয়া, বঞ্চনা-বৈষম্যসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে দাবিগুলো তৈরি হয়। এসব দাবি আদায় করতে অনেক সময় তারা আন্দোলনে নামেন এবং কোনো কোনো আন্দোলন বেগবান ও দুর্বার হয়ে ওঠে। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দুর্বার হয়ে ওঠে। সরকার দাবি মেনে নেওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন।

তবে সবসময় সব দাবি-দাওয়া সরকারের পক্ষে মেনে নেওয়াও সম্ভব নয়। আর উত্থাপিত সব দাবি যৌক্তিকও হয় না। অন্তর্বর্তী সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে এবং প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই যৌক্তিক সমাধানও বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু একের পর এক আন্দোলনের ঢেউ চলতেই থাকলে জনদুর্ভোগ মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা রাজধানীবাসীর। বাংলানিউজ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions