শিরোনাম
খাগড়াছড়ির ‘নিউজিল্যান্ড’ যে সড়ক বাড়িয়েছে মুগ্ধতা চাঁদাবাজির ঘৃণ্য চক্রে বিপর্যস্ত পার্বত্য জনপদ আবারও কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি, চরম উত্তেজনা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি,৫০ হাজার চাকরিজীবীর যাচাই-বাছাই শেষ দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির ৯৭২ স্থাবর সম্পত্তি,বিপুল টাকা বিনিয়োগ করে পেয়েছেন গোল্ডেন ভিসা বান্দরবানে এক অফিসারকে গুলি করে ৫ লাখ টাকা লুট বান্দরবানে শিক্ষিকাকে পর্দা নিয়ে লাঞ্ছনা করার অভিযোগ রাখাইনে মানবিক করিডোর ইতিবাচক হতে পারে,কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সতর্ক আশাবাদ বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু, এসএসটিএএফ’র উদ্বেগ চাঁদা আদায়কালে অস্ত্র ও চাঁদার সরঞ্জামসহ ইউপিডিএফ সদস্য আটক

রাখাইনে মানবিক করিডোর ইতিবাচক হতে পারে,কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সতর্ক আশাবাদ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫
  • ২৩ দেখা হয়েছে

বাংলাদেশের অন্যতম শর্ত হলো, এই করিডোর ব্যবহার করে পাঠানো সহায়তা জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে নাজুক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে হবে।

ডেস্ক রির্পোট:- আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর লড়াইয়ের কারণে উত্তর রাখাইনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা পাঠাতে বাংলাদেশ থেকে মানবিক করিডোর তৈরিতে শর্তসাপেক্ষে সম্মত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বেশ আগে থেকেই এই মানবিক করিডোর তৈরির আহ্বান জানিয়ে আসছিল। গেল মাসে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজের বাংলাদেশ সফরের সময় ইস্যুটি নিয়ে সরকারের সাথে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের ওই সফরের অন্যতম লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা।

জানা গেছে, রাখাইনে মানবিক করিডোর নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম শর্ত হলো, এই করিডোর ব্যবহার করে পাঠানো সহায়তা জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে নাজুক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে হবে। বাংলাদেশ চায় না খাদ্যাভাবের কারণে রাখাইনে অবস্থানরত অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে চলে আসুক। পরিস্থিতি অনুকূলে হলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে সব পক্ষকে সহযোগিতা করতে হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির গতকাল সাথে আলাপকালে বলেছেন, রাখাইনে মানবিক করিডোর দেয়ার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তকে আমি সতর্কতার সাথে ইতিবাচকভাবে দেখছি। এটা যদিও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সাথে সরাসরি যুক্ত নয়, কিন্তু এই সুযোগটা প্রত্যাবাসনের জন্য কিভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এতে সৃজনশীল কূটনীতির প্রয়োজন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ সমন্বয় যতটা ভালো হবে, ফলাফলও ততটা ভালো হবে বলে আশা করা যায়।

সঙ্ঘাতকবলিত রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর চালুর ক্ষেত্রে নিরাপত্তাঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা একটি নতুন উদ্যোগ। এই করিডোরের কারণে মিয়ানমারের পাশাপাশি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানকারীদের দিক থেকেও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এই ঝুঁকিকে মাথায় নিয়েই সরকারকে কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের ইতিবাচক অবস্থানকে কাজে লাগানো হবে- এটাই আমার প্রত্যাশা।

গত রোববার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মানবিক করিডোর তৈরি করতে চায় জাতিসঙ্ঘ। এ বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে নীতিগতভাবে সম্মত আছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদি শর্তাবলি প্রতিপালিত হয়, তবে অবশ্যই আমরা সহায়তা করব।

রাখাইনে মানবিক করিডোর বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালপত্র যাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে, অস্ত্র নেয়া হচ্ছে না।

সম্প্রতি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কথা উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ সীমান্তে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কাজেই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই কোনো না কোনো যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। আমরা অবশ্যই আরাকান আর্মির মতো একটি নন স্টেট অ্যাক্টরের (রাষ্ট্রবহির্ভূত পক্ষ) সাথে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে পারি না। কিন্তু একেবারে বিচ্ছিন্নও থাকতে পারব না। কাজেই যতটুকু যোগাযোগ করা আমাদের প্রয়োজন, ততটুকু করব।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটা পরে আসছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির সাথে আমাদের স্বার্থ জড়িত। মিয়ানমারের একটি বিরাট জনগোষ্ঠী আমাদের এখানে আশ্রয় নিয়ে আছে। আমরা তাদের ফেরত পাঠাতে চাই। তাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আমাদের যা কিছু করা প্রয়োজন সেটা আমাদের করতে হবে।

আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যভিত্তিক একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড লিগ অব আরাকানের (ইউএলএ) সামরিক শাখা হলো আরাকান আর্মি। আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবি তুলে এর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। রাখাইন নৃগোষ্ঠীর (আরাকানি) বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই সংগঠন নিজেদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখতে স্বায়ত্তশাসন চায়। মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের সাথেও তাদের সম্পর্ক ভালো না। মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সঙ্ঘাতের সময় রোহিঙ্গাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে আরাকান আর্মি। অনেক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা যুবকদের সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে সামনে ঠেলে দেয়া হয়েছে। মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীও রোহিঙ্গাদের একইভাবে ব্যবহার করেছে। ২০২৩ সালের পর আরাকান আর্মির সাথে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। অনেকে বাংলাদেশেও আশ্রয় নেয়। পরে তাদের জাহাজে করে মিয়ানমার ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এ দিকে রাখাইন রাজ্য থেকে নতুন করে এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। নতুনদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়কে চিঠি দিয়েছে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিমসটেক সম্মেলনের সাইড লাইনে বাংলাদেশের রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমানের সাথে মিয়ানমার সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে আলোচনার পর প্রথম পর্যায়ে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের পর আরাকান আর্মি ও এর রাজনৈতিক সংগঠন ইউএলএ ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি চিঠি দেয়। চিঠিতে সাতটি শর্তের উল্লেখের কথা জানা যায়। এতে বিমসটেক বৈঠকের সাইডলাইনের সভায় মিয়ানমার সরকারের সাথে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জান্তা সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, ফলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার যা কিছুই বলুক না কেন বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না।

চিঠিতে উল্লিখিত আরাকান আর্মির সাতটি শর্তের মধ্যে রয়েছে- প্রথমত, আরসা ও এর সাথে যুক্ত সব গোষ্ঠীর সশস্ত্রকার্যক্রম আরাকানে বন্ধ করতে হবে। সেখানে শান্তিশৃঙ্খলা পুরোপুরি ফিরে না আসা পর্যন্ত প্রত্যাবাসনের কাজ হবে না। দ্বিতীয়ত, প্রত্যাবাসিতদের জন্য প্রয়োজনীয় আবাসন, স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র, শিক্ষা অবকাঠামো সংবলিত নিরাপদ জোন তৈরি করতে হবে। এর নিরপেক্ষতা ও মান বজায় রাখার জন্য তাতে আন্তর্জাতিক তদারকির ব্যবস্থা থাকতে হবে। তৃতীয়ত, প্রত্যাবাসিতদের জীবন জীবিকার জন্য যথোপযুক্ত ভোকেশনাল ট্রেনিং ও চাকরি সৃষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভর ও সমন্বিত হতে পারে। চতুর্থত, অতীতে সৃষ্ট সঙ্ঘাত সংঘর্ষ ও ঘৃণামূলক কার্যক্রমে সৃষ্ট দূরত্ব দূর করে সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টির পদক্ষেপ নিতে হবে। পঞ্চমত, সশস্ত্র সংগঠনের সাথে সম্পর্কহীনদের চিহ্নিত করে বেসামরিক নাগরিকদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। ষষ্ঠত, প্রত্যাবাসন কাঠামো সৃষ্টির সাথে সাথে সামঞ্জস্য রেখে পর্যায়ক্রমিকভাবে ছোট ছোট গ্রুপে আন্তর্জাতিক তদারকির মাধ্যমে পুনর্বাসনকাজ এগিয়ে নিতে হবে। সপ্তমত, স্থানীয় (রাখাইন) ও মুসলিম (রোহিঙ্গা) উভয় সম্প্রদায়কেই পরিকল্পিত পুনর্বাসন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের পরে এবং দুই মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের আগে দেয়া আরাকান আর্মির এই চিঠিতে তাদের অবস্থান বেশ নমনীয় বলে মনে হয়। এই চিঠিতে রোহিঙ্গাদের সামরিক সরকার যেভাবে রোহিঙ্গা হিসেবে উল্লেখ করেছে সেভাবে না করে মুসলিম সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা না হলেও তাদের স্থায়ী পুনর্বাসনের অঙ্গীকারই চিঠিতে ব্যক্ত হয়েছে বলে মনে হয়।নয়া দিগন্ত

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions