ডেস্করিপেৃাট:- ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর গত সাত মাসে দেশে ৭৭ লাখ সিমকার্ড বা মোবাইল ফোন সংযোগ বন্ধ হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশ থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীর চলে যাওয়া মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভূমিকা রেখেছে। আবার দেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে অনেক ব্যবহারকারী তাদের সিমকার্ড বন্ধ রেখেছেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত (সাত মাস) মোবাইল কোম্পানিগুলোর গ্রাহক কমেছে ৭৭ লাখ। একই সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে ১ কোটি ১০ লাখ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮ কোটি ৬৫ লাখে নেমে এসেছে, যা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছিল ১৯ কোটি ৪২ লাখ। একইভাবে গত বছরের জুলাইয়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৪ কোটি ১০ লাখ থেকে কমে গত জানুয়ারি শেষে দাঁড়ায় ১৩ কোটিতে। অপারেটরদের মধ্যে বাংলালিংক সবচেয়ে বেশি ৪৫ লাখ গ্রাহক হারিয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে বাংলালিংক ব্যবহারকারী ছিল ৪ কোটি ৩৫ লাখ। এ সংখ্যা গত জানুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৯০ লাখে। গ্রামীণফোন হারিয়েছে ৭ লাখ ব্যবহারকারী। এতে এ অপারেটরের মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৫২ লাখ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৪৫ লাখে। আর একই সময়ে রবি হারিয়েছে ২৫ লাখ ব্যবহারকারী। এতে এ অপারেটরের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ থেকে কমে জানুয়ারিতে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৬৫ লাখ।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক বি এম মাইনুল হোসেন গতকাল বলেন, দেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে অথবা অর্থনৈতিক কারণেও অনেক ব্যবহারকারী তাদের সিমকার্ড বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পূর্ববর্তী তথ্য ভুল ছিল কি না তা মূল্যায়নের জন্য নিয়ন্ত্রণ কমিশনের প্রয়োজনীয় জরিপ এবং তদন্ত করা উচিত। কারণ সিম ব্যবহারকারীর ক্রমহ্রাসমান সংখ্যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। ইন্টারনেট এবং মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা রাজনৈতিক না অর্থনৈতিক অথবা উভয় কারণে কমেছে কি না তা বিশ্লেষণ করে বের করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা হ্রাস প্রসঙ্গে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘গ্রাহক সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে। অপারেটরদের রাজস্ব ঘাটতি, ডিজিটাল বিভাজন বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল রূপান্তর বাধাগ্রস্ত হবে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য নীতিনির্ধারকদের করনীতি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। বর্তমানে প্রতি ১ টাকার বিপরীতে ৫৬ পয়সা সরাসরি সরকারের কোষাগারে কর হিসেবে চলে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে গ্রাহকের ব্যয় হ্রাসে সহায়তা করবে এমন নীতি প্রবর্তন করা উচিত সরকারের। এ ছাড়া অপারেটরদের মাঝে ইকুইপমেন্ট (সরঞ্জাম) ভাগাভাগি, স্পেকট্রাম খরচ হ্রাস এবং কোনো অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করছে না এমন অপ্রয়োজনীয় সেবার খাত (সার্ভিস লেয়ার) অপসারণ করার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি অপারেটরদের ফাইবার এবং সাইট নির্মাণসহ নিজস্ব নেটওয়ার্ক স্থাপন করার অনুমতি দিতে হবে, যা বিদ্যমান বিধিমালার অধীনে করা সম্ভব নয়।’বাংলাদেশ প্রতিদিন