দেশের ৩৫ জেলায় হামলা-আগুন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙতে শুরু করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ প্রায় পুরো বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: ডেস্ক রির্পোট:- রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবারও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী স্লোগান দিয়ে হাতুড়ি-শাবলে চালানো হয় ভাঙচুর। দেওয়া হয় আগুন। অনেক স্থানে ভেঙে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও নামফলক। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহসহ অন্তত ৩৫ জেলায় বিভিন্ন স্থাপনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গত বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল ছাত্র-জনতা। বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ওই ভবন। ওই বাড়ির বিভিন্ন আসবাব, লোহা, ভাঙা গ্রিল, কাঠ– যে যেভাবে পেরেছে, লুট করে নিয়ে গেছে।

গতকাল সকালে গিয়ে সেখানে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন দেখা যায়। বুধবার রাতে আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডি-৫-এর শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও। গতকাল সকালেও সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন লাগার খবর পেয়েও নিরাপত্তাহীনতার কারণে নির্বাপণ করতে যেতে পারেননি তারা। এদিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হামলা-ভাঙচুরের পর একই ধরনের ঘটনা বাধাহীনভাবে বুধবার রাত থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘটতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল নিষ্ক্রিয়।

নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ভোলায় দলটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ঝালকাঠি ও বরিশালে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, নওগাঁয় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, রাজশাহীতে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বরিশালে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় হামলা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় জামালপুর সদরের নরুন্দি রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওনের গ্রামের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

এদিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলার ঘটনায় গতকাল বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ ছাড়া দিল্লিতে বসে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শেখ হাসিনা ক্রমাগত মিথ্যা-বানোয়াট মন্তব্য ও বিবৃতি দেওয়ায় ভারতের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে তাঁর হাতে একটি প্রতিবাদপত্র তুলে দেয়।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

গতকাল এক অনুষ্ঠানে ৩২ নম্বরে হামলা-ভাঙচুরের ব্যাপারে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। গভীর রাত পর্যন্ত আমি নিজে সেখানে ছিলাম।’

সেখানে সাংবাদিকদের ওপরও হামলা হয়েছে– এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলার কোনো তথ্য আমি পাইনি।’

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা রাফি আল ফারুক বলেন, সুধা সদনসহ অনেক জায়গায় আগুন লাগার খবর পাওয়ার পরও নিরাপত্তাহীনতা কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছা যায়নি। এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া নিয়ে ফেসবুকে ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ ও ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের কথা ছড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে বুধবার বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেয় ইনকিলাব মঞ্চ।

দিনভর ভাঙচুর, বিকেলে গরু জবাই
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে গতকাল দিনভরও ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। সকালে এক্সক্যাভেটর সরিয়ে নেওয়া হলেও অনেককে ভবনের বিভিন্ন অংশের স্টিল, কাঠের কাঠামোসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কেউ আবার ভবনের ভেতর থেকে পোড়া, ছেঁড়া বই ও প্রকাশনা নিয়ে যাচ্ছিলেন। কয়েকজনকে কেটে ফেলা নারকেল গাছের ডাব ছিঁড়ে নিতেও দেখা যায়। এসব কার্যক্রমের মধ্যেই ভাঙা ভবনের সামনে মাইকে বিভিন্ন বক্তব্য ও স্লোগান দিচ্ছিলেন কিছু মানুষ। বিকেলে সেখানে গরু জবাই করে বিরিয়ানি রান্নার ব্যবস্থা হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, শত শত মানুষ শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির সামনে ভিড় করেছেন। তাদের অনেকে বিক্ষোভকারী, কেউ আবার শুধুই ঘটনাটি দেখতে এসেছেন। বুধবার মধ্যরাতে ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে ভবন ভাঙার কাজ শুরু হলেও গতকাল সকালে ক্রেনটি আর দেখা যায়নি। সকাল ১০টার দিকে এক্সক্যাভেটরটিও সরিয়ে নেওয়া হয়। তখন পর্যন্ত ওই চত্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিজাদুঘর ও পাশের তিন তলা ভবনটি অর্ধেক ভাঙা এবং পেছনের বহুতল ভবনটি আংশিক ভাঙা অবস্থায় ছিল। গতকাল দুপুরেও জাদুঘর ও পেছনের বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ভবনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এর মধ্যেই নিম্ন আয়ের বহু মানুষ এসে দরজা-জানালার স্টিলের কাঠামোসহ ভবনে ব্যবহৃত ধাতব সামগ্রী, লিফট খুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেগুলো খোলার প্রয়োজনে তারা হাতুড়ি, শাবলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে ভবনের বিভিন্ন অংশ ভাঙছিলেন। বুধবার রাত থেকেই লুটপাট শুরু হওয়ায় গতকাল আর সেখান থেকে নেওয়ার মতো তেমন কিছু ছিল না। তবু যে যা পেয়েছেন, তাই নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এমনকি দেয়ালের ইটও খুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন কেউ কেউ। দুপুর ২টার দিকে এক নারী বেশ কিছু ইট ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? প্রশ্ন করলে তিনি জানান, বিক্রি করবেন।

ভ্যানে তুলে স্টিলের বিভিন্ন কাঠামোসহ ধাতব সরঞ্জাম নিয়ে যাচ্ছিলেন সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, এগুলো ভাঙাড়ির দোকানে নিয়ে যাবেন। সেখানে বিক্রি করে যা পাবেন, সেটাই তাঁর লাভ। কিছু মানুষ আবার ভবনে পড়ে থাকা বই, প্রকাশনা নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভলিউম-৩ ইত্যাদি।

ভাঙচুর-লুটপাট কার্যক্রমের পাশাপাশি ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন কিছু মানুষ। তারা স্বৈরাচারবিরোধী নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি মাইক এনে স্লোগানের ফাঁকে ফাঁকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এ সময় তারা স্লোগান দেন– ‘বত্রিশ না ছত্রিশ, ছত্রিশ ছত্রিশ’; ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’; ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’; ‘দালালি না আজাদি, আজাদি আজাদি’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ ইত্যাদি।

ভবন ভাঙার দৃশ্য দেখতে আসেন শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা কেউ ছবি তুলছিলেন, কেউ ভিডিও করছিলেন। তাদের একজন জানান, বুধবার রাতে গণমাধ্যমের সরাসরি সম্প্রচারে এ ঘটনা দেখেছেন। গতকাল তাই সশরীরে চলে এসেছেন।

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ভবন তিনটি ভাঙার কাজ শেষ হয়নি। অর্ধেক ভাঙা অবস্থাতেই উৎসুক লোকজন এসে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোয় উঠছিলেন। সেইসঙ্গে ভবনের ছোট ছোট অংশ ভেঙে বিভিন্ন জিনিসপত্র খুলে নেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছিল। এর মধ্যে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ভাঙচুর করা বাড়ির সামনে গরু জবাই করে জুলাই ঐক্যজোট নামের একটি সংগঠন। আয়োজকরা জানান, গাবতলী পশুর হাট থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় গরুটি কেনা হয়েছে। এর মাংস দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে উপস্থিত সবাইকে খাওয়ানো হবে। সংগঠনের মুখপাত্র সাঈদ আহমেদ সরকার বলেন, ফ্যাসিবাদের আইকনিক স্থাপনা ভেঙে ফেলার পর উৎসবের অংশ হিসেবে গরু জবাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর আগে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়েছিল।

যশোরে ভাস্কর্য ভাঙচুর
যশোরে সাত স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে শেখ হাসিনার নামফলক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত ‘বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা’ ভাঙচুর করে। প্রথমে যশোর পৌরসভা ক্যাম্পাসে শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর স্লোগান দিতে দিতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, বকুলতলাতে ভাস্কর্য, জেলা পরিষদে ম্যুরাল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেখ হাসিনার স্মৃতিফলক, মনিহার বিজয় স্তম্ভের প্রাচীরে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের দৃশ্যপট খোদাই করা ভাস্কর্য ভাঙচুর করে তারা। সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া অভয়নগর, ঝিকরগাছা, কেশবপুরে উপজেলা পরিষদের ভাস্কর্য ভাঙচুর করার ঘটনাও ঘটেছে।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘কয়েকটি স্থানে ভাঙচুর হয়েছে বলে শুনেছি। কে বা কারা করেছে সেটা জানা নেই।’

সুনামগঞ্জে ম্যুরাল ও মাজার ভাঙচুর
সুনামগঞ্জ পৌরসভা, ঐতিহ্য জাদুঘর, মুক্তিযোদ্ধা ভবন এবং সদর উপজেলা প্রাঙণে থাকা শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ লোকজন। শহরের হাছননগরের ডংকা শাহ্‌’র মাজারের স্থাপনা ভেঙে দেয় বিক্ষুব্ধরা। জেল রোড এলাকার উপজেলা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে থাকা ম্যুরালও ভাঙচুর করে ছাত্র-জনতা।

সুনামগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমনদ্দোজ্জা বলেন, ‘দেশে ফ্যাসিবাদীদের যা কিছু আছে, সেগুলো আমরা ভেঙে দিতে চাই।’

রংপুরে হলের নামবদল
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ ও জিলা স্কুলের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম মুছে দিয়ে ‘বিজয় ২৪’ হল নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নামফলকও ভেঙে ফেলাসহ ম্যুরালের সামনে শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র দাহ করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাস্কর্য ভাঙচুর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বাইজিদুর রহমান সিয়াম বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুজিববাদী কোনো স্থাপনার ঠাঁই হবে না। উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

রাজবাড়ীতে হামলা
রাজবাড়ীর পাংশার পাট্টা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রব মুনা বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলায় চারজন আহত হয়েছেন।

পিরোজপুরে ভাঙচুর, আগুন
পিরোজপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর ভাই পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাবিবুর রহমান মালেকের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের পাড়েরহাট সড়কের আউয়াল ও মালেকের বাড়িতে চড়াও হয়।

একই রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামানের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাইয়ের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

ঈশ্বরদীতে নামফলক ভাঙচুর
বুলডোজার দিয়ে পাবনার ঈশ্বরদীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনা আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শেখ রাসেল আবাসিক হলের নামফলকও মুছে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া ঈশ্বরদী আলহাজ মোড়ে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে নির্মিত বিদ্বেষ ছড়ানো ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

পাবনা সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ খানের বাড়ি ভাঙচুর করছে ছাত্র-জনতা।

নাটোরে শিমুলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

নাটোরে সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের পোড়া বাড়ি ‘জান্নাতি প্যালেসে’ আগুন দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় গান বাজিয়ে নাচানাচিও করেন উপস্থিত ছাত্র-জনতার অনেকে।

নারায়ণঞ্জে ভাঙচুর

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি ম্যুরাল ভাঙচুর করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু কর্নারে থাকা ছবি ভাঙচুর করা হয়। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে এই ভাঙচুর চালানো হয়। সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ টিপু বলেন, ছাত্র-জনতার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের শেখ মুজিবের ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ছাত্র-জনতা গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

মালপত্র নিয়ে গেলেন ব্যবসায়ীরা

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর শহরে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আফজাল হোসেনের মার্কেট থেকে ব্যবসায়ীরা ভয়ে মালপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। বিএনপি নেতৃত্ব এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা অভয় দিলেও ব্যবসায়ীরা ভরসা পাচ্ছেন না। মার্কেটটি আফজাল হোসেনের প্রয়াত বাবার নামে ‘আবু বাকার সিদ্দিক টাওয়ার’ হলেও বেশি পরিচিত ‘এমপি মার্কেট’ নামে।

এদিকে কিশোরগঞ্জ শহরের স্টেশন রোডে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ফের আগুন দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার রাতে আগুন দিয়ে সামনে লিখে দিয়েছে ‘পাবলিক টয়লেট’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা বুধবার রাতে শহরের খরমপট্টি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও ভাঙচুর করে। এ ছাড়া ভৈরবেও হলুদ পট্টি এলাকায় গণঅভ্যুত্থানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বুধবার রাতে ফের হামলার ঘটনা ঘটে।

চুয়াডাঙ্গায় ম্যুরাল ভাঙচুর

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও সদর উপজেলা চত্বরে শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনার ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। এ ছাড়া বুধবার মধ্যরাতে বুলডোজার দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকসহ শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভেঙে দেওয়া হয়।

রাজশাহীতে লুটপাট-ভাঙচুর

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলীর বাড়িতে বুধবার রাত ১টার দিকে লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে মুখোশধারী কয়েকজন যুবক। ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘বাড়িতে আমি ছিলাম না। দুর্বৃত্তরা বাড়িতে ভাঙচুর করে জামা-কাপড় ও ভাগ্নে বউয়ের কিছু গহনা লুট করে নিয়ে গেছে।’ এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারটি হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভাঙচুর করে নতুন নাম দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

এদিকে মাদারীপুর শহরে আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয় বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা। কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে দুই দফা ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সিলেট বিভাগের ১০ স্থানে বুধবার রাতে ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি। সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানের বাসায় বৃহস্পতিবার রাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

পটুয়াখালীতে বঙ্গবন্ধুর চারটি ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চগড়ে বিভিন্ন এলাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালসহ বেদি ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওদুদের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের নামফলক খুলতে গিয়ে মই থেকে পা পিছলে পড়ে গুরুতর আহত হন শাহজালাল আহমেদ জনি নামে এক শিক্ষার্থী।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে দিয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনার নামে হল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। গতকাল কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। কুড়িগ্রামেও বুলডোজার ও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ম্যুরাল। নরসিংদীতে আদালত প্রাঙ্গণে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর এবং আদালতের এজলাস থেকে গারদে নেওয়ার সময় ১০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালিয়েছে বৈষম্যবিরোধীরা। নড়াইলে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এবং ’৫২ থেকে ’৭১-এর স্মৃতিফলকসহ ছয়টি স্থাপনা ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুকের বাড়ির সামনের অংশ এক্সক্যাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে ওই বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়।

জামালপুর শহরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। লক্ষ্মীপুরে সাবেক এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, সাবেক পৌর মেয়র আবু তাহেরসহ জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ্‌ উদ্দিন টিপুর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় জহিরুল হক পলাশ নামে এক ব্যক্তির দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।

গাজীপুর টঙ্গীতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং চাচা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান মতির বাসায় ভাঙচুর করেছে জনতা।

বাগেরহাট জেলা শহর, মোংলা, রামপালসহ বিভিন্ন এলাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, শেখ হাসিনার নামফলক, শেখ পরিবারের সদস্যদের নামফলক ভাঙচুর করা হয়েছে। রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়ি ও অফিসেও হামলা হয়েছে।

ঢাকার সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও আশুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন মাদবরের বাড়ি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর-লুটপাট করা হয়েছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
গাইবান্ধা শহরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় এক্সক্যাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সমকাল

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions