শিরোনাম
রাঙ্গামাটিতে আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোখতার আহমেদ রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এপ্রোচ রোড ও ভূমি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন আমাকে হত্যার জন্য পরিবারই খুনি ভাড়া করেছিল: পপি প্রাথমিকে সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে বাতিল সরকারি জায়গা দখল করে আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশের সাবেক আইজিপি শহিদুলের ব্যাংক হিসাবে ৫৬০ কোটি টাকার লেনদেন সন্তানসহ সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈসিং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা বান্দরবানে পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় আহত দুই সংবাদমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়েই আয়নাঘর পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা অভিনেত্রী শাওন আটক

সরকারি জায়গা দখল করে আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৫০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জায়গাটি জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করা হয়েছে। অবৈধভাবে দখল করা এই জায়গায় এখন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দশতলা ভবন। জায়গাটির স্থায়ী দলিল করা হয়েছে শেখ হাসিনার নামে। আমার দেশ অনুসন্ধানে এ খবর জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ আয়তনের মূল্যবান এ জায়গা দখলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। জড়িত ছিলেন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন আমলারা।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের দখলে থাকা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের শতকোটি টাকা মূল্যের জায়গাটি উদ্ধারে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। অনিয়ম, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এ কমিটি।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জমি এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১২ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত অনুমোদন করে। এ বন্দোবস্তের ভিত্তিতে একই বছর ৬ জুন ঢাকার ওই সময়ের জেলা প্রশাসক মো. মহিবুল হক শেখ হাসিনার নামে ওই জায়গা দলিলমূলে কবলা (রেজিস্ট্রেশন) করে দেন। যার নম্বর ১৯৯১/২০১২। এ দলিলের মেয়াদ ২১১১ সালের ১১ জুন শেষ হবে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা জানান, ভূমি মন্ত্রণালয় জমির মালিকই নয়। কাজেই এ দলিলের কোনো কার্যকারিতা নেই। এটি ভুয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা সব নথিপত্র সংগ্রহ করেছি। সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি পুরো জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত ও অনুসন্ধান করে দেখছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তদন্তে এ পর্যন্ত যাদের নাম এসেছে তারা হলেন আওয়ামী লীগের পলাতক সভাপতি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র ও গণপূর্তমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ভূমিমন্ত্রী মো. রেজাউল করিম হীরা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকার সাবেক ডিসি ও বিমান মন্ত্রণালয় থেকে অবসরে যাওয়া সচিব মহিবুল হক, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জনেন্দ্র নাথ সরকার, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক কালেক্টর সাইফুল ইসলাম আজাদ। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে তদন্ত কমিটি। আমার দেশকে এমনটিই জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির একজন সদস্য।

জবরদখলে রাখার পর ভুয়া দলিল

ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড ও নথিপত্র থেকে জানা যায়, রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার ‘২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ’ হোল্ডিংয়ের ৪ দশমিক ১২ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন একজন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একপর্যায়ে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তান চলে যান। দেশ স্বাধীন হলে পাকিস্তানি ওই ব্যবসায়ীর খাজনা ও কর বকেয়া থাকায় জায়গাটি ‘অনিবাসী সম্পদ’ ঘোষণা করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতায় নেওয়া হয়। ‍

একটি রাজনৈতিক দলের সরকারি জমি জবরদখলের বিষয়ে প্রবীণ বাম রাজনীতিক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি দলের সাবেক সভাপতি হিসেবে অপর একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় স্থাপনের বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না। এটা শোভনও নয়।

তবে অপর একজন বাম রাজনৈতিক নেতা আমার দেশকে বলেন, ওই জায়গাটি একজন পাকিস্তানি নাগরিকের ছিল। যুদ্ধের পর তিনি আর বাংলাদেশে ফিরে আসেননি। এ সুযোগে আওয়ামী লীগ জায়গাটি দখল করে নিয়েছে। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পর আওয়ামী লীগ নেতারা ওই জায়গায় তাদের দলের প্রধান কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করে।

প্রথমে বরাদ্দের প্রস্তাব দেন মোহাম্মদ নাসিম

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ গুলিস্তানের ওই ভবনটিতে দলীয় কার্যক্রম শুরু করলেও ১৯৯৭ সালে এটি বরাদ্দ নেওয়ার জন্য একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই সময় এ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগের আবেদন ও জমির নথিপত্র পর্যালোচনা করে বরাদ্দের কার্যক্রম শেষ করে যেতে পারেনি।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয়ের পর দলটির দখলে থাকা জমিটির বরাদ্দের বিষয়টিও অনিষ্পন্ন থেকে যায়। তবে গুলিস্তানের ওই ভবনটি আওয়ামী লীগ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে অবৈধভাবে ব্যবহার করতে থাকে।

ওয়ান ইলেভেনের আমলে সাঈদ খোকনের লিজ গ্রহণ

২০০৭ সালে জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়ান ইলেভেন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নামে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা ৪ দশমিক ১২ শতাংশ জমি লিজ দেওয়ার জন্য উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে উপযুক্ত ক্রেতা আহ্বান করা হয়। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলেও জায়গাটি ওই সময়ের সরকারকে আস্থায় নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ খোকন দখলে নেন।

সাঈদ খোকনের লিজ প্রসঙ্গে একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ জানান, ওই জায়গা দখলে নিতে সাঈদ খোকন আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে কিংস পার্টি নামে পরিচিত ফেরদৌস আহমেদ কোরেশির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (পিডিপি)-তে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ওয়ান ইলেভেন নামের সরকার বিদায় নেওয়ার পর সাঈদ খোকন আবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন বলে জানান ওই রাজনীতিবিদ।

তবে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা ও সাঈদ খোকনের নামে নেওয়া লিজ বাতিলের বিষয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে আমরা কোনো নথি পাচ্ছি না, আমরা এগুলো খুঁজছি।

আইন ভেঙে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ

ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সালের দিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ওই জমিটি ঢাকা জেলা প্রশাসন ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত করে। পাশাপাশি জমির বরাদ্দ চেয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি আবেদন পেশ করা হয়।

এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জেলা প্রশাসন আওয়ামী লীগের অনুকূলে জমি বরাদ্দের প্রস্তাব করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসনের এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৩ মার্চ বরাদ্দপত্র জারি করে।

বরাদ্দপত্রে বলা হয়েছে, ‘উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, তার (ঢাকার জেলা প্রশাসক) প্রস্তাব ও সুপারিশের আলোকে ঢাকা জেলার মতিঝিল মৌজার মহানগর ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ১৮০৫ নম্বর দাগের শূন্য দশমিক শূন্য ৪১২ একর খাস জমি চার কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৪৫ টাকা সেলামিতে অকৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা, ১৯৯৫-এর ১০ অনুচ্ছেদ মতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রস্তাব সরকার অনুমোদন করেছে।

হাসিনার নামে বরাদ্দ করে পুরস্কৃত ঢাকার ডিসি মহিবুল

ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্র পেয়ে ২০১২ সালের ১২ জুন ঢাকার ওই সময়ের জেলা প্রশাসক মো. মহিবুল হক শেখ হাসিনার নামে স্থায়ী বন্দোবস্ত দলিল করে দেন। দলিলের প্রথমপক্ষ হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে শেখ হাসিনাকে দলিল গ্রহীতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। দলিলের দ্বিতীয় পক্ষ বা দাতা হিসেবে রয়েছে মো. মহিবুল হকের নাম। তিনি ওই সময়ে ঢাকার জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন।

ঢাকার জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থেকে আমার দেশ-এর ডিক্লারেশন বাতিল করে পত্রিকাটি বেআইনিভাবে বন্ধ করে দেন মহিবুল হক। প্রতিদান হিসেবে সরকারের কাছ থেকে অভাবনীয় পুরস্কার নিয়ে আওয়ামী লীগের বিশেষ সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসকের পদে থেকে আওয়ামী লীগকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০১৪ সালের বিনাভোটের নির্বাচনের মূল কারিগরদের অন্যতম হিসেবে তিনি চিহ্নিত। ওই সময় তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে সারা দেশের মাঠ প্রশাসন সাজানোর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৮ সালের রাতের ভোটের মূল কারিগরদেরও একজন মহিবুল হক। ওই সময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। ভোটের আগে অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত গোপন বৈঠকের আয়োজকও ছিলেন তিনি। ওই বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ, নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার কেএম আলী আজমসহ রাতের ভোটের কারিগররা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে শেখ হাসিনা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মহিবুলকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে তাকে রেখে দেন। মহিবুল হক বর্তমানে কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি। কারাগারে আটক থাকায় জালিয়াতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জায়গা দলিল করে দেওয়ার বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।আমার দেশ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions