দিল্লিতে হাসিনার গুরুত্ব কমছে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৫৪ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ‘মাদার অব মাফিয়া’ শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। এই ছয় মাসে দিল্লির দাদাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্কদের ধারণা ছিল হাসিনার আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় এবং দিল্লি চোখ রাঙালেই ভয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কাবু হয়ে পড়বে। হাসিনা ঢাকায় ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে। কিন্তু এই ছয় মাসে হিন্দুত্ববাদী ভারত বুঝতে পেরেছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাসিনা কার্যত কীট-পতঙ্গ। হাসিনার পক্ষে নেয়া ভারতের জন্যই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে। ফলে ভারতের কাছে হাসিনার প্রাসঙ্গিকতা কমতে শুরু করেছে। ভারতকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। এটি ভারতের জন্য বিপজ্জনক। এ কারণে হাসিনাকে দিল্লিতে থাকতে দিলেও তার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ফলে হাসিনার অলিগার্করা এতদিন শেখ হাসিনার নামের আগে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ ব্যবহার করলেও এখন ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ উল্লেখ করতে বাধ্য হচ্ছে।

ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্করা গণমাধ্যমে প্রবন্ধ-নিবন্ধে হাসিনা থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছেন। দেশটির সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কৃষক এবং বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নে দাবি জানাচ্ছেন। কলকাতার ব্যবসায়ী ও সারা ভারতের কৃষকরা তাদের পণ্য যাতে বাংলাদেশে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চাপ দিচ্ছেন। কেউ কেউ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ফেইক তথ্য প্রচার না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। গণমাধ্যমগুলো যেমন বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের স্ট্যাটেজিক পরিবর্তনের দাবি ইঙ্গিত করে নিজউ করছে। যারা এতদিন হাসিনাজ্বরে আক্রান্ত ছিলেন তারা এখন বাস্তব চিত্র বুঝতে পেরে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা কমে দিয়েছেন। বুদ্ধিজীবীরাও লেখালেখিতে হাসিনার পক্ষ নেয়ার বদলে বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরছেন এবং মোদি সরকারকে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর সম্পর্ক গড়তে পরামর্শ দিচ্ছেন। কেউ কেউ হাসিনাকে ভারতের জন্য ‘বিষফোঁড়া’ হিসেবে অবিহিত করছেন। এগুলো হাসিনার নজর এড়াচ্ছে না।

মাথার উপর থেকে দিল্লির ছাতা যাতে সরে না যায় সে লক্ষ্যে নানা চেষ্টা-তদবির করছেন শেখ হাসিনা। ১৫ আগস্ট, ১৬ ডিসেম্বর ইস্যুতে তিনি মাঠ গরম করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন পালানোর ছয় মাস উপলক্ষে নতুন খেলা শুরু করেছেন। পালানোর ছয় মাস উপলক্ষে গতকাল হাসিনা ফেসবুক লাইভে বক্তৃতা করেন। বক্তৃতা তো নয়, যেন কালনাগিনীর মতোই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ইউনূসের বিরুদ্ধে বিষ উগলে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পেজে জানানো হয়, ফেসবুক লাইফে ‘দায়মুক্তি’ অনুষ্ঠানে হাসিনার বক্তৃতা করার কথা রয়েছে। হাসিনা বার্তা পেয়েছেন ঢাকার সাথে সম্পর্ক রক্ষার প্রয়োজনে দিল্লির তার ওপর থেকে ছাতা তুলে নিতে যাচ্ছেন। এটি যাতে না হয় সে জন্য দিল্লির দাদাদের ‘বাংলাদেশে হাসিনা এখনো প্রাসঙ্গিক’ বোঝাতে ফেসবুক লাইফে ‘দায়মুক্তি’ বক্তৃতা দিয়ে নেতাকর্মীদের আত্মঘাতী আন্দোলনে নামার প্ররোচিত করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, দিল্লিতে থেকে হাসিনা কালনাগিনীর মতো ষড়যন্ত্র বিষ ছড়াচ্ছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়েছে? হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করার হিড়িক পড়লেও সেগুলোর তদন্ত কতদূর এগিয়েছে? নাকি হাসিনার প্রতি দেশি-আন্তর্জাতিক মহলের অনুকম্পা সৃষ্টির লক্ষ্যে গণহারে মামলা করা হয়েছে? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। চিফ প্রসিকিউটর ইন্টারপোলের মাধ্যমে হাসিনাকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নিয়েছে? বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হাসিনার কথা বলা বন্ধ করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক চ্যানেলে দিল্লিকে ‘নোট অব ভারবাল’ (অবহিতকরণ) দিয়েছে; যা অনেকটা নতজানু পররাষ্ট্রনীতির মতোই। গণহত্যাকারী হাসিনাকে ফেরাতে কী কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে? নাকি হাসিনাকে ফেরানো এবং তার মামলার কার্যক্রম ‘হোমিওপ্যাথি’ ধারায় চলতে থাকবে? ২০১২ সালে সম্পাদিত বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী, শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার স্বচ্ছতার জন্যও দেশে ফেরানোর আবেদন করা যায়। এমনকি সেভেন সিস্টার্সের শান্তি বজায় রাখা ইস্যু সামনে এনে হাসিনাকে ফেরত দিতে দিল্লিকে বাধ্য করা যায়। সরকার সে পথে কেন হাঁটছে না, সেটি রহস্যজনক।

রাজনীতির নামে হাসিনা গত ১৫ বছর দেশে কার্যত ক্রিমিনাল গ্যাং গড়ে তুলেছেন। রাজনীতি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, প্রশাসনসহ প্রতিটি সেক্টরে গ্যাং গড়ে তুলেছেন। এখন রাষ্ট্রক্ষমতা হারিয়ে ও ভারতের ছাতা সরে যাচ্ছে বুঝতে পেরে পলাতক হাসিনা প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছেন। ক্ষমতা হারানোয় প্রতিশোধ নিতে শুধু ড. মুহাম্মদ ইউনূস আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রই নয়, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি টেলিফোনে এবং ফেসবুক লাইফে কথা বলে দেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলছেন। তিনি জানেন, আন্দোলনের নামে হাঙ্গামা করলে অন্তর্বর্তী সরকার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিগৃহীত করবে। তাদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মরিয়া হয়ে উঠবে। তারপরও তিনি সেটিই করছেন এবং কর্মীদের উস্কানি দিচ্ছেন।

ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বিবিসি-খ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান ‘এক জীবন এক ইতিহাস’ নামের বইয়ে লিখেছেন, ‘১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে লন্ডন সফলে গিয়ে বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ওরা আমার পিতাকে হত্যা করেছে, আমার মাতাকে হত্যা করেছে, আমার ভাইদের হত্যা করেছে, রাজনীতির মাধ্যমে আমি প্রতিশোধ নিতে চাই।’ তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘বাংলাদেশের বৃহত্তম দলের নেতা হয়ে তার কেমন লাগছে’? জবাবে হাসিনা বলেন, ‘তার মোটেই ভালো লাগছে না। বিস্মিত সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন’? হাসিনা বলেন, ‘রাজনীতিকে আমি ঘৃণা করি’। সত্যিই হাসিনা এখন রাজনীতিকে ঘৃণা করছেন এবং দলের নেতাকর্মীদের নতুন করে বিপদে ফেলতে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছেন।

৫ আগস্ট পালানোর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘রাজনৈতিক মৃত্যু’ ঘটে গেছে। হাসিনাকে নিয়ে হিন্দুত্ববাদী ভারতের নেতারা এতদিন ঘোড়ের মধ্যে ছিল। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির গতিপ্রকৃৃতিতে এখন সে ঘোর কাটতে শুরু করেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে নিয়ে উভয় সঙ্কটে ভারত। হাসিনাকে না পারছেন রাখতে না পারছেন বের করে দিতে। দেশি-বিদেশি চাপ আর নিজেদের প্রয়োজনে ঘোষণা না দিলেও দিল্লির দাদাদের ‘হাসিনা প্রেম’ ধূসর হচ্ছে। সেটি ইদানীং ভারতের গণমাধ্যমগুলোর খবরের দিকে তাকালে বোঝা যায়। হাসিনা ইস্যুতে বাংলাদেশের রিরুদ্ধে ভারতের সাইবার য্দ্ধুাবস্থা এখন আর নেই। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার নিজস্ব নিয়মে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে কিছু সঙ্কট-সমস্যা থাকলেও ড. ইউনূস তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি কাজে লাগাচ্ছেন। ভারতকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ এখন চীন ও পাকিস্তানমুখী হচ্ছে। আর বাংলাদেশের রোগী ও ভ্রমণপিপাসুরা না যাওয়ায় কলকাতার হোটেল, হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোয় হাপিত্যেশ শুরু হয়েছে। হাসিনা গত কয়েক মাসে দেশের দুজন নেতার সঙ্গে টেলিসংলাপ করেছেন যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ ছাড়াও কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ভার্চুয়াল বক্তব্য দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি দাবির লিফলেট (প্রচারপত্র) বিলি; ৬ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ; ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ; ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘কঠোর’ হরতাল কর্মসূচি। কর্মসূচি পালনে যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের বাংলাদেশ পল্লীতে লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হন তিনজন সাবেক মন্ত্রী। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন নেতারা। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের কয়েকজন পলাতক নেতার বক্তব্যে হাসিনার অপ্রাসঙ্গিকতার চিত্র উঠে এসেছে। ‘জয় বাংলা’ নামের হোয়াটসআপ গ্রুপে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা বাহাউদ্দিন নাসিম, ইসমাইল হোসেন স¤্রাট, সাইফুজ্জামান শেখর, মো. সাঈদ খোকন, মাহবুব-উল আলম হানিফের কথোপকথনে তার প্রকাশ ঘটে। ইসমাইল স¤্রাট : ‘ভাই কেমন আছেন’? বাহাউদ্দিন নাসিম : ‘তুমি কোথায় আছো স¤্রাট’? স¤্রাট : ‘থাকার কি আর জায়গা আছে ভাই, কি করল নেত্রী এইসব’? নাসিম : ‘হানিফ ভাই কেমন আছেন’? হানিফ : ‘আছি একরকম, কি খবর নাসিম’? নাসিম : ‘ভাই মনে আছে ওই দিন বলছিলাম না আপনেরে, এভাবে বেশি দিন ধইরা রাখা (আন্দোলন) যাবে না। কয়জনের মুখ চাইপ্যা ধরা যায় বলেন’? হানিফ : ‘আমার কানেও আসতেছে। আসলে আমরা যারা দলের রাজনীতি করি তারা পড়েছি বিপদে। নেত্রী শুধু না, ওই পরিবার (মুজিব পরিবার) থেকে দলকে আলাদা করতে হবে’? স¤্রাট : ‘আমরা বললে বলবেন ভাই চ্যাংরা পোলাপান। মন খুইলা বলতে পারি না, আপনারা বিকল্প (হাসিনার বিকল্প) খোঁজেন’? শেখর : ‘বাটপাড় সাকিবকে নমিনেশন দিলে আমারে বাদ দিয়া’? সাঈদ খোকন : ‘আমারে বাদ দিয়ে তার ভাইপো তাপসকে নমিনেশন দিলো’? নাসিম : ‘আটকের বিষয় চিন্তা করছি, এভাবে থাকা যায় না।’ সাঈদ : ‘ওই নেত্রীরে বাদ দেন। নেত্রীর আউল-ফাউল বিবৃতিতে ছেলেদের রাস্তায় নেমে আত্মহুতি দেয়া যাবে না। লিডারশিপ পরিবর্তন করতে হবে।’ নাসিম : ‘লিডারশিপ চেঞ্জ করতে আলোচনা করা দরকার।’ সাঈদ : ‘দল দাঁড় করাব কেমনে’? নাসিম : ‘আওয়ামী লীগ তো ২০১৮ সালে আপা লীগ হয়ে গেছে। যারে তারে ধরে পলিটিশিয়ান বানাইছে।’ শেখর : ‘ছোট আপারে তো দেখলাম লন্ডনে কপিশপে হাসিমুখে কফি খাচ্ছে। দেশে মৃত্যুর মুখে আছে আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীরা, তারা হাসিমুখে কফি খায়। এটা তো হতে পারে না।’ নাসিম : ‘লিডারশিপ চেঞ্জ করতে কী করা যায়? নেতা চেঞ্জের বিকল্প নেই।’ স¤্রাট : ‘সাবের ভাই আছে, মান্নান ভাই আছে, তাজউদ্দিনের পরিবার রয়েছে। তদের কাউকে আনা যায় কিনা’? নাসিম : ‘সেদিন লন্ডনে দেখলাম মার্কেটে লিফলেট বিতরণ করতে গেছে, দোকানদার লিফলেট নিচ্ছে না। এ ধরনের ভিডিও যদি ভাইরাল হয় তাহলে আর রাজনীতির ইজ্জত থাকে না।’ আওয়ামী লীগ নেতাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এসব কথোপকথন চলছেই। হাসিনাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্জীবিত করার প্রস্তাব উঠেছে। হাসিনা বুঝে গেছেন দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্কদের মতিগতি এবং দলীয় নেতাদের এমন বক্তব্যে দেশে পালিয়ে থাকা নেতাদের মনোবল ভেঙে দেবে। সে জন্য হাসিনা বক্তব্য দিচ্ছেন এবং কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহিদ উর রহমান তার ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে পেরে হাসিনা দিল্লির কাছে ‘প্রাসঙ্গিক’ থাকতে চান। এ জন্য তিনি দেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনের নামে হাঙ্গামা করে নিগৃহীত হবে বুঝতে পেরেও তিনি আন্দোলনের জন্য উস্কানি দিচ্ছেন। লিফলেট বিতরণ করতে গেলে জনগণ প্যাদানি দেবে এবং পুলিশ গ্রেফতার করবে; সেটি বুঝেও হাসিনা দেশে পালিয়ে থাকা দলের নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলছেন।

হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অগ্রগতি নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রইব্যুনালের মামলা চললেও সাধারণ মামলাগুলোর তদন্তের অগ্রগতি নেই। এমনকি হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও তেমন অগ্রগতি নেই। ৫ আগস্টের চেতনাধারী রাজনৈতিক দল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে বিবাদ করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা সংস্কারের নামে কিভাবে ক্ষমতায় থাকা দীর্ঘায়িত করা যায় তা নিয়ে ব্যাস্ত। অথচ দেশের আওয়ামী লীগের নেতা এবং সরকারের থাকা আমলাদের কেউ কেউ হাসিনার প্রতি অনুগত। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা বর্তমানে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের সরকারি জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী প্রফেসর মুকিদ মিয়া পহেলা ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হাসিনার পক্ষে লিফলেট বিতরণ করেছেন। লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি মুকিব মিয়া নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সেই ছবি লিখেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কারো যদি লিফলেট লাগে আমি সরবরাহ করব। শেখ হাসিনা আসবেই, বাংলাদেশ জাগবেই, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর ফেসবুক মেসেঞ্জারে দিন।’ তারপরও সরকারের দায়িত্বশীলদের মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই। ভারত বুঝে গেছে, হাসিনার প্রাসঙ্গিকতা কমে গেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরা? হাসিনাকে প্রত্যার্পণ চুক্তি আইনে ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না কেন, হাসিনাকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি হচ্ছে না কেন? নেটিজেনদের এসব প্রশ্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে।ইনকিলাব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions