মাঠে নামলেই পাকড়াও কঠোর হচ্ছে যৌথ বাহিনী

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:-  বিতর্কিত একটি রাজনৈতিক দলের আত্মগোপনে থাকা নেতাদের নির্দেশে নানামুখী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি। তাদের বিষয়ে এবার কঠোর হচ্ছে পুলিশসহ যৌথ বাহিনী। এরই মধ্যে এলাকাভিত্তিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্রকারী ও চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করেছে সরকারের দুটি গোয়েন্দা সংস্থা। দেশের সব জেলায় সেই তালিকা ধরে বিশৃঙ্খলাকারীদের একযোগে অভিযান চালিয়ে পাকড়াও করবে যৌথ বাহিনী। পাশাপাশি জুলাই বিপ্লবের পর যারা বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বে জড়িয়েছে, তাদের বিষয়েও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোর কমিটির সভা থেকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রতিহত করার পাশাপাশি চাঁদাবাজ-দখলবাজদের পাকড়াও করে আইনের কাছে সোপর্দ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও এতদসংক্রান্ত কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য গঠিত জাতীয় কোর কমিটি থেকে প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মাঠ প্রশাসনকে কঠোর হতে বলা হয়েছে। সব জেলায় জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্য সচিব ও পুলিশ সুপারকে সদস্য করে জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও এতদসংক্রান্ত কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য কোর কমিটি গঠন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

একাধিক জেলার ডিসি ও এসপি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ফ্যাসিবাদের দোসর ও একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা নানা কৌশলে মাঠে নামার অপচেষ্টা করছে। তাদের পালিয়ে থাকা নেত্রী শেখ হাসিনা ও পলাতক নেতারা বিদেশে বসে উসকানি দিচ্ছে; অর্থ দিচ্ছে। ওইসব ব্যক্তির বিষয়ে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্সে’। ফ্যাসিবাদীদের পক্ষ নিয়ে নাশকতা করতে পারে এমন অনেকেরই নাম-পরিচয় পেয়েছি। তাদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে যে তালিকা করা হয়েছে সেটা হালনাগাদ করার কাজও চলছে।’

জানা গেছে, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে চাঁদাবাজি, দখল ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে’ বলে সরকারের কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন রয়েছে। সাধারণ মানুষ নিজেদের ‘অনিরাপদ বোধ’ করছে। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। গত সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভায় পতিত হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগীরা পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে এবং অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার যে কোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সর্বদা সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।’

কোর কমিটি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে কোর কমিটির সদস্য ছাড়াও এবার বিশেষ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানও ছিলেন। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে তার পরামর্শ ও মতামত নিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘ফ্যাসিবাদের পক্ষ নিয়ে মুখোশ পরিহিত ও মুখোশ ছাড়া কিছু ব্যক্তি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লিফলেট বিতরণের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের অনেককেই এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদেরও চিহ্নিতের চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদেরও সহযোগিতা চেয়েছেন। ফ্যাসিবাদীদের লিফলেট বিতরণের দায়ে কয়েকটি জেলায় বেশ কয়েকজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সারা দেশে মাঠে নামে সশস্ত্র বাহিনী। গত বছরের এর কয়েকদিন পর সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যেন তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার কার্যকর ব্যবহার করেন, সে নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বহাল রাখবে সরকার।

কোর কমিটি সূত্র জানায়, ‘যত বড় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীই হোন না কেন, অপরাধে জড়ালে অবশ্যই তাকে শাস্তি পেতে হবে। কমিটির সদস্যরা মনে করেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি করা নেতাকর্মীদের বিষয়ে জিরো টলারেন্সে রয়েছেন। এটি সরকারের জন্য খুবই সহায়ক। চাঁদাবাজ-দখলবাজ ধরতে বিএনপির পক্ষ থেকেও সমর্থন মিলবে—এমনটাই আশা কোর কমিটির।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মাঠে রাখা হয়, যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকে। মানুষ নিরাপদ বোধ করে; কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সেভাবে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। তাদের আরও দৃশ্যমান অ্যাকশনে (কর্মকাণ্ডে) যেতে হবে। তাহলে অপরাধীরা ভয়ে থাকবে। অপরাধ কমে আসবে। অন্যদিকে সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষ স্বস্তিতে থাকবে।’

সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীরা চিহ্নিত হচ্ছে

ধর্মীয় সংখ্যালঘু ‘নির্যাতনের’ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মোট ১ হাজার ৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, সম্পদ ও উপাসনালয়ের ওপর ২ হাজার ১০টি ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি স্থান, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে গিয়ে তদন্ত করেছে এবং এখনো তদন্ত চলছে।

পুলিশ জানায়, তদন্তের ভিত্তিতে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলা-নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

চাঁদাবাজদের ছাড় নয়: দেশে চাঁদাবাজি বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। তিনি বলেন, ‘অপরাধী যে-ই হোক বা যে দলেরই হোক, তাকে কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। সে যত বড় প্রতাপশালী হোক না কেন, ছাড় দেওয়া হবে না। চাঁদাবাজি যেন কোনো অবস্থাতেই না হয়, সে বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ নেওয়া হয়েছে।’কালবেলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions