বান্দরবান:- বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মানবপাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে এলাকার নিরাপত্তা,উপজেলাটিতে দ্রুত অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড ও ইয়াবা,অবৈধ সিগারেট, বিদেশী মদ পাচার বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে মিয়ানমার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে উপজেলায় নিয়ে আসা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। চক্রটি তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। স্থানীয় প্রশাসনের নজর ফাঁকি দিয়ে এই চক্রটির মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ছড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার জানান,অনেক রোহিঙ্গা আলীকদমে দিন মজুরের কাজ করছে। যার ফলে স্থানীয়রা কর্মশূণ্য হয়ে পড়ছেন। তারা অল্প টাকার বেতন দিয়ে এসব কাজ করছে।
আলীকদম থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে এই বছরের ১১ জানুয়ারি দুটি মামলায় ১২ জন মানবপাচারের সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আলীকদম ব্যাটালিনয় ৫৭ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আকিব জাবেদ জানান, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৯৮ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকে আটক ও পুশব্যাক করা হয়েছে। অন্যদিকে, দালাল চক্রের ১২ জন সদস্যকে আটক করেছে বিজিবি। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও পাচারকারী চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে বিজিবি প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলীকদমে দুর্গম সীমান্তবর্তী ৫৬, ৫৭ ও ৫৮ পিলার হয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অবৈধ ভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আলীকদমে নিয়ে আসছে একটি চক্র। তারা সীমান্তবর্তী মেনচং ম্রো কারবারী পাড়া,বড় বেতি, ছোট বেতি, বড় আগলা, ছোট আগলা, কাম্পুক পাড়া, ধরি ম্রো কারবারী পাড়া, ইয়াংরিং কারবারী পাড়া, সিন্ধু-ইন্দু দিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিককে আলীকদমে নিয়ে আসতে জনপ্রতি ১০ থেকে ২৫ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক সময় তাদের কাছে টাকা না থাকলে স্বর্ণ ও ইয়াবার বিনিময়ে তারা সীমান্ত পার করানো হয়। তাদের অনুপ্রবেশের জন্য আলীকদমের বিভিন্ন বন জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ে নতুন নতুন রাস্তা তৈরির পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে দুর্গম ঝিরির রাস্তাগুলো। তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে কুরুকপাতা পৌয়ামুহুরী সীমান্ত সড়ক হয়ে কালায়্যাছড়া,ও নয়াপাড়া ইউনিয়নের বুচির মুখ, মংচা পাড়া হয়ে কলার ঝিরি এবং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের আবাসিক রাস্তার দিয়ে লামা আলীকদমের প্রধান সড়ক ব্যবহার করেন। এরপর কুরুকপাতা থেকে দো’ছড়ি তৈনখাল হয়ে সদর ইউনিয়নের আমতলী খেয়া ঘাট পানবাজার এলাকার রাস্তা দিয়ে এইসব রোহিঙ্গা পাচার করছে। এর সাথে ইয়াবা ট্যাবলেটও পাচার হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, রোহিঙ্গারা এদেশের জন্য হুমকি স্বরুপ। যে হারে রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ছে তাতে কয়েকদিন পরে এখানের সব জায়গা দখল করে বসবে। অনেক জায়গায় তারা বাড়িঘর করে এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা বনে যাচ্ছে।”
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাচারকারী চক্রটি উপজেলার পৌয়ামুহুরী,কুরুকপাতা হয়ে আলীকদমে কালাইয়্যাছড়া,দুংসি খাল,তৈন খাল, মেরিংচর,নয়াপাড়া হয়ে অবৈধ ভাবে অনুপ্রবেশ করিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থানান্তরিত করছে রোহিঙ্গাদের।
আলীকদমের নয়াপাড়ার বাসিন্দা ও বিএনপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে এলাকার আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে, এই বিষয়ে প্রশাসনের আরো কঠোর হতে হবে।”
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা জহির উদ্দিন বলেন, দালালচক্রের বিষয়ে আলীকদম থানায় দু’টি মামলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের আওতায় মামলা হয়েছে। এই দুই মামলায় দালাল চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়,গত ১১ জানুয়ারি মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আলীকদমের খুইল্যামিয়া চেয়ারম্যান পাড়ার মো. নজরুল ইসলাম ,দক্ষিণ নয়াপাড়ার মো.আরিফুল ইসলাম,নয়াপাড়ার মো. জামাল উদ্দিন, মো. খোরশেদ আলম ও চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের মো. আবু হুজাইফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে আলীকদম উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন বলেন, একটি চক্র রোহিঙ্গাদের অবৈধ ভাবে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে।বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন তৎপর চালাচ্ছেন চক্রটির সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে।