ডেস্ক রির্পোট:- বেসরকারি অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় দখলের পর ফোকলা করার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের ক্ষমতা বলে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে সেখানে বসানো হয় তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের। পেশিশক্তি দিয়ে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে ঢুকে কয়েকশ কোটি টাকা লুটেছেন তারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে লাপাত্তা দখলদাররা। এ সুযোগে কর্তৃত্ব বুঝে নিচ্ছেন পুরোনো মালিকরা। তবে বিপুল বেহাত অর্থ ফেরত নিয়ে সন্দিহান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বে থাকা সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় দখল হয়েছিল। আমরা চাই, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন মেনে প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতাদের মাধ্যমে চলুক। ইতোমধ্যে কয়েকটির কর্তৃত্ব বুঝে পেয়েছেন মালিকরা।’ তহবিল তছরুপ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি দুদকের তপশিলভুক্ত অপরাধ। আমাদের নজরে কিছু এলে তদন্তে তাদের কাছে পাঠাচ্ছি।’
জঙ্গিবাদের অভিযোগে দখল নর্থ সাউথ ও মানারাত
আচার্যের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডে পরিবর্তন আনা হয়। পুরোনো ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গিবাদ বিস্তারে ভূমিকা’ ও ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে সরকারিভাবে দখলে নেতৃত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাদ পড়েন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আজিম উদ্দিন আহমেদ, রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাজাহান ও বেনজীর আহমেদ। বিপরীতে যুক্ত হন টিকে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি এম এ কালাম, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও এমডি এস এম কামাল উদ্দিন, আবুল খায়ের গ্রুপের এমডি আবুল কাশেম, মিনহাজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ইয়াসমিন কামাল, বেক্সিমকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আহমেদ সোহেল ফসিউর রহমান, ইউনাইটেড ফসফরাস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফৌজিয়া নাজ, ইউনিভার্সিটির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. জুনাইদ কামাল আহমাদ, ইনকনট্রেড লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর হারুন, উদ্যোক্তা জাভেদ মুনির আহমেদ, ফাইজা জামিল ও শীমা আহমেদ। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে উচ্চ আদালতের আদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের ট্রাস্টি বোর্ড বাতিল করে আজিম উদ্দিনসহ পুরোনোদের পুনর্বহাল করা হয়েছে।
আওয়ামী নিয়ন্ত্রিত ট্রাস্টি বোর্ড দুই বছরে বিপুল অর্থ তছরুপ করেছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তদন্ত না হওয়ায় সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি। যোগাযোগ করে বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক ফয়জুল্লাহ ওয়াসিফ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে পুরোনো ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্বহাল হয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।’
অন্যদিকে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ‘আর্থিক অনিয়ম ও জঙ্গিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) কারও কারও সংশ্লিষ্টতার’ অভিযোগে ভেঙে দেন মানারাত ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড। মানারাতের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক না থাকলেও, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আতিকুল ইসলাম হন চেয়ারম্যান। তাঁর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বিওটি পুনর্গঠনে জায়গা করে নেন সাবেক সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সাজ্জাদুল হাসান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালের অধ্যাপক মেখলা সরকার, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক সেলিম মাহমুদ, হাসুমণির পাঠশালার সভাপতি মারুফা আক্তার পপি, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্য ইসরাত জাহান নাসরিন ও সোশ্যাল ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মিহির কান্তি ঘোষাল।
২০০১ সালের ২৮ মে ঢাকার গুলশানে ৭৩ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু মানারাত ইউনিভার্সিটি। সরকার পতনের পর ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরেন পুরোনো প্রতিষ্ঠাতারা। নতুন করে বিওটির চেয়ারম্যান হন সাবেক সচিব ফজলুর রহমান। ট্রাস্টি বোর্ডে ফিরেছেন সাবেক সচিব ইসমাইল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এ টি এম ফজলুল হক, মোজাম্মেল হক, এনামুল হক চৌধুরী, মানারাতের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম উমার আলী, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ ও প্রকৌশলী আবুল বাশার। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট একটি নিবন্ধিত ট্রাস্ট জানিয়ে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘যারা এসেছিলেন, তারা অবৈধভাবে এসেছিলেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ দখলমুক্ত হয়েছে।’
অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
এটি প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। তাঁর স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগমকে কোণঠাসা করে মালিকানায় ঢোকেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
২০১৪ সালের ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জনের ট্রাস্টি বোর্ড নিবন্ধন হয়। এতে আনোয়ারা বেগমকে সভাপতি; প্রায়ত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ইসরাফিল আলম ও আমিন আহমদকে সহসভাপতি এবং মোবারক হোসেন, অধ্যাপক আবুল হোসেন সিকদার, ফজলুর রহমান, তাহের ইসলাম পাটোয়ারী, আব্দুল জব্বার মিয়া, ইমতিয়াজ আহম্মেদ, ড. সিরাজুল হক চৌধুরী, ড. মোহাম্মদ শাহীন খান, ইকবাল হোসেন অপু, মো. কামরুজ্জামান, লিয়াকত আলী সিকদার, সৈয়দ মোহাম্মদ হেমায়েত হোসেন, গোলাম সারোয়ার কবির, জুনায়েদ আহম্মদ, আরিফুল বারী মজুমদার, শাহাজাহান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও সামসুল আলম লিটনকে সদস্য করা হয়।
সর্বশেষ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার। অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগে সম্প্রতি তাঁর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ হয়েছে। গত ২১ আগস্ট পুনর্গঠিত হয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। উপাচার্য অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হয়েছেন মোহাম্মদ শামসুল আলম লিটন।
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
২০১২ সালে রাজশাহীতে যাত্রা শুরু বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের। রানার গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করলেও পরে ১৩ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডে আট আওয়ামী লীগের নেতা ও অনুসারী ঢোকেন। এটিকে কাজে লাগিয়ে তারা কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এ কে এম কামরুজ্জামান খান ট্রাস্টির সাধারণ সম্পাদক। প্রভাব ছিল রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক ডাবলু সরকারের। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর স্ত্রী, মাগুরার সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের স্ত্রী, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের স্ত্রী, রাবির আওয়ামীপন্থি প্রাক্তন ভিসি সাইদুর রহমান খানের স্ত্রী, আওয়ামীপন্থি সাবরিনা বারি, মোহাম্মদ আলী দ্বীন ও তসলিম উদ্দীন আহম্মেদ।
সূত্রের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী। সর্বনিম্ন ২ লাখ ৭০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সেশন ফি ৬ লাখ ৮ হাজার টাকা। এই হিসাবে বার্ষিক আয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এভাবে এক যুগে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয়ের সিংহভাগেরই কোনো হদিস নেই। বিপুল অর্থ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবে দিতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে।
একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এক যুগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী ঘনিষ্ঠরা অন্তত ১ হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেছেন। লুটের জন্যই নেতাদের কাউকে ট্রাস্টি বোর্ডে সদস্য করা হয়; আবার অনেক পদে না থেকেও ভাগ পেয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করেও চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানকে পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মুজিবুর রহমান জানান, স্বৈরাচারী হাসিনার সরকার ২০২০ সালের ২ জুন সন্ত্রাসী দিয়ে ইউনিভার্সিটি দখল নেয়। এর পর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ বোর্ড অব ট্রাস্টিদের বাদ দিয়ে দলীয় ‘কমিটি’ করেন। বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ, ভুয়া বিল-ভাউচার, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে উত্তোলনসহ বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন সালাহউদ্দিন। এমনকি বাসাবাড়ির কর্মচারীর বেতন, সফর, বিনোদনের বিলও নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
মুজিবুর রহমানের আইনজীবী সাহাব উদ্দীন সাহীব বলেন, নিয়মের তোয়াক্কা না করে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে সালাহউদ্দিন গংয়ের বিরুদ্ধে অন্তত ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য মিলেছে অডিটে। পরে আদালতে সালাহউদ্দিন, তাঁর স্ত্রী ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আয়েশা সালাহউদ্দিন, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম গিয়াস উদ্দীন, প্রাক্তন উপাচার্য গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া ও প্রাক্তন সহকারী পরিচালক (অর্থ) শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালত দুদককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
জামায়াত-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২০২১ সালের ১ মার্চ চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) চেয়ারম্যান আ ন ম শামসুল ইসলামসহ ট্রাস্টি বোর্ডের ১২ সদস্যকে সরিয়ে দখলে নেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী। এর পর চলে হরিলুট। নদভী ও তাঁর স্ত্রী রিজিয়া সুলতানা প্রতি মাসে বেসিক সম্মানী নিতেন প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
নব্বই দশকে আরবি অনুবাদক হিসেবে যোগ দেন জামায়াতের তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগরের আমির মমিনুল হক চৌধুরীর জামাতা নদভী। তাঁকে এক পর্যায়ে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু দখলের পর নিজেকে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান দাবি করে সব বকেয়া বাবদ বিশাল অঙ্কের টাকা তুলে নেন নদভী। ইচ্ছেমতো তিন শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের মাধ্যমে দুই হাতে টাকা কামান নদভী দম্পতি।
২০২৩ সালে এমপি হিসেবে শুল্ক ছাড়ে গাড়ির ৬৫ লাখ টাকা নদভী পরিশোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে। আবার রাজধানীর বনানীতে ফ্ল্যাট ভাড়া, সাজসজ্জাসামগ্রী, সুপারভাইজারের বেতন– সবই দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত দুই বছরের চুক্তি অনুসারে, মাসিক ভাড়া ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। আর উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে না পারা সুপারভাইজার আহমদুল হক বাবুর বেতন ৫০ হাজার টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের ক্যাম্পাসে এনে সংবর্ধনা ও সম্মানিত করার মাধ্যমে নদভী বিপুল পরিমাণ অর্থ বেহাত করেছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস হাফিজুর রহমান লিকু, গোপালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কামরুল ইসলাম বাদলসহ পাঁচ নেতাকে চট্টগ্রামে এনে তাদের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে আপ্যায়ন বিল তুলে নেন প্রায় ২০ লাখ টাকা।
আইডিবির অর্থে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে আইআইইউসি টাওয়ার নির্মাণে নদভীর বিরুদ্ধে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। এ তহবিল থেকে নদভী মাসিক সম্মানী হিসাবে ১০ লাখ ও তাঁর স্ত্রী নিতেন প্রায় ৩ লাখ টাকা। টাওয়ারের তহবিল থেকে প্রতি মাসে অন্যান্য ট্রাস্টি সদস্যদেরও সম্মানীর ব্যবস্থা করেন তিনি।
এর মধ্যে নদভীর ঘনিষ্ঠ ট্রাস্টি সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান কাজী দ্বীন মোহাম্মদ মাসে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ, অধ্যাপক সালেহ জহুর দেড় লাখ, খালেদ মাহমুদ ১ লাখ, অধ্যাপক ফসিউল আলম ও আব্দুর রহিম ৮০ হাজার করে, বদিউল আলম ৫০ হাজার, ট্রান্সপোর্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহিউদ্দিন ৭০ হাজার, প্রক্টর ইফতেখার উদ্দিন ২০ হাজার, রেজিস্ট্রার আক্তারুজ্জামান কায়সার ৭৫ হাজার, শিক্ষক জিয়াউর রহমান ২০ হাজার ও কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার পেতেন ২০ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আবু রেজা নদভী রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে বছরে প্রায় সোয়া এক কোটি টাকা সম্মানী নিতেন। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ও ডিউটি ভাতা নিতেন ৪০ লাখের মতো। বৈদেশিক ভ্রমণ ও ডিউটি ভাতা নিতেন এ অর্থের অন্তত তিন গুণ। সবকিছুর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেই তাঁকে ১০ হাজার টাকা সম্মানী দিতে হতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরানিক সায়েন্স বিভাগের এক অধ্যাপক জানান, আবু রেজা নদভী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধকোটি টাকায় ব্যক্তিগত খেয়ালি পূরণে ছয়টি নন-একাডেমিক বই আরবি ও বাংলা ভাষায় প্রকাশ করেন। এসব বই আবার আইআইইউসির লাইব্রেরিকে কিনতে বাধ্য করেন তিনি।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান বা সদস্যদের সেখান থেকে এভাবে কোটি কোটি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অর্থে প্রতিষ্ঠা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৫ সাল থেকে তা দখলি সম্পদে পরিণত হয় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী পরিবারের। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে চসিক। উপাচার্য ড. অনুপম সেনও পদত্যাগ করেছেন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বর্তমানে তিনি পলাতক। চসিকের চিঠি পেয়ে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে চসিক মেয়রকে চেয়ারম্যান করে ৯ সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করেছে।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করা হয়েছিল। আইনি লড়াইয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছি।’সমকাল