ডেস্ক রির্পোট:- দৃশ্যত বিএনপি’র ওপর চাপ বাড়ছে। ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে দলটির একডজন শীর্ষ নেতাসহ ১৫ সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের দফায় দফায় নেয়া হচ্ছে রিমান্ডে। দীর্ঘ এক মাস ধরে অব্যাহতভাবে বাসায় বাসায় চলছে পুলিশি অভিযান। নেতাদের না পেয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে পরিবারের স্বজন, ব্যক্তিগত সহকারী, গাড়িচালককে। জেলায় জেলায় নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট চলছে। পুরনো রাজনৈতিক মামলায় দেয়া হচ্ছে সাজা। যারা আগামীতে সংসদ নির্বাচন করবেন কিংবা মাঠে কর্মীদের ওপর প্রভাব রয়েছে- এমন নেতাদের টার্গেট করা হচ্ছে। এক সপ্তায় বিএনপি’র ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে দেয়া হয়েছে কারাদণ্ড। এবার টার্গেট করা হয়েছে বিএনপি’র নিষ্ক্রিয়, বহিষ্কৃত ও দলছুট নেতাদেরও।
তাদের দেয়া হচ্ছে নানা প্রলোভন ও নির্বাচনে যাওয়ার টোপ। অনেককে করা হচ্ছে তল্লাশি-হয়রানি।
সরকারের চাপের মুখে বিএনপি’র দলছুট ও নিষ্ক্রিয় কিছু নেতা ইতিমধ্যে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা জোটের দুই-একটি দলও একই ঘোষণা দিয়েছে। তবে তাদের নিয়ে চিন্তিত নয় বিএনপি। সমমনা জোটের শীর্ষ নেতারাও মনে করছেন- এসব ‘ওয়ানম্যান পার্টি’ টাইপের দল চলে গেলেও চলমান আন্দোলনে তেমন প্রভাব পড়বে না। এ ছাড়া এসব দল নির্বাচনে অংশ নিলেও সরকার বৈধতা পাবে না। বিএনপি’র সঙ্গে থাকা সমমনা শরিক দল ও জোটগুলো যুগপৎভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৬টি দলের বাইরে থাকা জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি ইসলামী দলও নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপি’র যেসব নেতা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা দীর্ঘদিন ধরেই দলে নিষ্ক্রিয় ছিল। চলমান আন্দোলনে সক্রিয় না থাকায় তাদের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। এ ছাড়া এসব নেতার এলাকায়ও তেমন কোনো অবস্থান নেই। তাই সুযোগ সন্ধানী এসব নেতা বিনাভোটের নির্বাচনে এমপি হওয়ার লোভে প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়েছে। এতে বিএনপি’র যেমন দলীয় কোনো ক্ষতি হবে না, তেমনি আন্দোলনেও কোনো প্রভাব পড়বে না। দলছুট এসব নেতাকে দেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মো. ইবরাহিম (বীর প্রতীক)কে তার নির্বাচনী এলাকা হাটহাজারীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
হরতাল-অবরোধের বিকল্প চিন্তা বিএনপি’র দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার, গণহারে সাজা, তল্লাশি হয়রানিতেও চলমান আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না বিএনপি। ইতিমধ্যে দলটির দু’দফায় ৩ দিন হরতাল ও ৬ দফায় ১৩ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। রোববার থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেও মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে বুধবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা করতে পারে। তবে পরের সপ্তাহে হরতাল-অবরোধের বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে চিন্তা করছে দলটি। ইতিমধ্যে জোটের শরিক দলগুলো বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে নানা প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে নীতি-নির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিএনপি’র দায়িত্বশীল এক নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামিনে মুক্তি পেলে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলার চিন্তা করবেন তারা।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি জনগণের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। দেশের সাধারণ মানুষের বিএনপি’র আন্দোলনে সমর্থন রয়েছে। তাই আমাদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সরকার একটা পর্যায়ে জনগণের দাবির কাছে নতি স্বীকার করবে। তিনি বলেন, যারা আন্দোলনে থাকা অবস্থায় দলের সঙ্গে বেইমানি করে নির্বাচনে যাবে তারা রাজনীতির আবর্জনার ভাগাড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। একটা সময় তারা দেশের জনগণের কাছে দালাল হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার টিকে থাকার জন্য এখন খড়কুটো আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছে। সরকারের চাপের মুখে ছোট ছোট দলের কিছু নেতা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। হয়তো সরকার জোর করে তাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাবে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতসহ বেশির ভাগ দল অংশ না নিলে সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। আর নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তা দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিগত প্রায় ৪ সপ্তাহ ধরে সারাদেশব্যাপী বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে রেইড করে ও পুরোনো ভুয়া মামলায় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সাজা দিয়ে নির্বাচনের অযোগ্য করে দিচ্ছে। সরকার এদেশ থেকে বিএনপি’র উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতি নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করতে চায়। তবে জনগণ বিএনপিকে অন্তর থেকে গ্রহণ করেছে এবং আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণ তথা দুর্নীতিপূর্ণ অপশাসনের চিরতরে অবসান চায়।
গত দুদিনে দুই মামলায় ৬ বছর ৯ মাস সাজা পাওয়া সাবেক ছাত্রদল সভাপতি ও বিএনপি’র সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, সরকার বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে জয় নিশ্চিত করতে চায়। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে পাশ কাটিয়ে একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা করেছে যাতে সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে না পারে। সেজন্য বিএনপি নেতাদের সাজা দেয়া হচ্ছে। এটা সরকারের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ। কিন্তু এসব করে কোনো লাভ হবে না। এদেশের জনগণ এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একতরফা তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। যেনতেনভাবে সাজানো পাতানো নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না।
এলডিপি’র চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, দুই-এক নেতা চলে যাওয়ায় জোটের আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা নিয়মতন্ত্রিকভাবে সাংবিধানিক অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকবো। জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা লড়ে যাবো। আন্দোলন ছেড়ে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া নেতাদের বিষয়ে অলি আহমেদ বলেন, যুগে যুগে বেইমান ছিল। এখনো আছে। ইতিমধ্যে তাদের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টকশোতে নানা সমালোচনা হচ্ছে। আমি জানি না, আত্মসম্মান নিয়ে তারা কীভাবে দিন কাটাচ্ছেন। সুত্র মানবজমিন