খাগড়াছড়ি:- খাগড়াছড়ির বাসিন্দারা গত বর্ষায় পাঁচ দফায় বন্যার কবলে পড়েছিলেন। গত মৌসুমে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যাও হয়েছিল। তবে এবার খাগড়াছড়ির পাহাড়ি নদী চেঙ্গী ও মাইনীকে ড্রেজিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা প্রত্যাশা করছেন প্রকল্পটি শেষ হলে বন্যার প্রকোপ কমে আসবে। নদী দুটির খননের ফলে কৃষকরাও অনাবাদী জমিতে চাষাবাদের স্বপ্ন বুনছেন।
২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথমবারের মতো চেঙ্গী ও মাইনী নদী ড্রেজিং করা হচ্ছে। এতে নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়ছে। ড্রেজিংয়ের ফলে নদী থেকে তোলা মাটি অনাবাদী কৃষি জমিতে ফেলা হচ্ছে। কৃষি জমির উপরিভাগ ভরাট হওয়ায় সেগুলো সারা বছরের জন্য চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠছে।
ভারতের ত্রিপুরায় উৎপত্তি হওয়া খাগড়াছড়ির মাইনী নদী ৯৬ কিলোমিটার পেরিয়ে রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে মিশেছে। নদীর গভীরতা কম থাকায় গত মৌসুমে মাইনী ও চেঙ্গী নদীর তীরবর্তী বেশির ভাগ এলাকা পাঁচ দফা বন্যায় প্লাবিত হয়। নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়ানো, মৎস্য আহরণ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড চেঙ্গী ও মাইনী নদী দুটি ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয়। এর ফলে নদী যেমন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে, তেমনি নদী খননের মাটি দিয়ে অনাবাদী জমির উপরিভাগ ভরাট হওয়ায় তা চাষাবাদের উপযোগী করতে সহায়ক হয়ে উঠেছে। অনাবাদী এসব জমিতে রবি শস্যসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের চাষ হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর অনাবাদী জমি চাষের আওতায় আসায় খুশি স্থানীয় কৃষকরা। অনাবাদী জমিতে নতুন ফসলের স্বপ্ন বুনছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মজলিস খান বলেন, ‘মাইনী নদী বেশ সরু হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নদীতে চর জেগে উঠত। নৌকা চলাচল করতে পারত না। খননের পর থেকে নদীতে পানি প্রবাহ বেড়েছে। তাই এখন আগের চেয়ে বেশি মাছও পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি নৌকা চলাচল করতে পারছে।’
কৃষক আবুল কাশেম খান বলেন, ‘আমরা যারা কৃষক আছি তারা বেশি লাভবান হচ্ছি। শতশত একর অনাবাদী জমিতে নদী খননের মাটি ফেলায় সেগুলো চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠেছে।’
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মাইনী নদীর প্রায় ২৩ কিলোমিটার এবং চেঙ্গী নদীতে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার অংশে খনন কাজ শুরু হয়। এখন মাইনী নদীর ইয়ারাংছড়ি, ভাঙামুড়া ও মাইনীমুখ অংশে পুরোদমে খননকাজ চলছে। ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে পাহাড়ি ঢলে নদীতে গাছ ও পাথর ভেসে আসায় খননের কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
খননকাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান নবারুণ ট্রেডার্সের তত্ত্বাবধায়ক মনির র্হোসেন বলেন, ‘খনন করতে গিয়ে আমরা দেখছি নদীর তলদেশে প্রচুর গাছ পড়ে আছে। এ ছাড়া নদীর পার্শ্ববর্তী পাহাড় থেকে অনেক পাথর নদীর তলদেশে জমা হয়েছে। ফলে আমাদের কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। কখনো কখনো ড্রেজিং মেশিনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের এক-চতুর্থাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নদী খননের পাশাপাশি প্রায় ৭০ কিলোমিটার চর অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে নৌ চলাচল স্বাভাবিক হবে। স্থানীয় কৃষকরাও সুবিধা পাবেন। ড্রেজিং হওয়ায় নদীতে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়বে এবং ঢলের পানি দ্রুত নেমে যাবে। ফলে আর বন্যার কোনো শঙ্কা থাকবে না।খবরের কাগজ