খাগড়াছড়ি:- খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজে পরীক্ষার হলে পুরুষ শিক্ষকের সামনে নেকাব না খেলায় এক নারী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব-২ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভেগী শিক্ষার্থী উম্মে আন্জুমানয়ারা মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের ২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে উম্মে আন্জুমানয়ারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উম্মে আন্জুমানয়ারার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘যে দেশে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি ঔ দেশে নিকাব পুরুষের সামনে না খোলার জন্য আমাকে বলির পাঠা হতে হয়েছে।’
‘আজকে ১৩-১২-২৪ এ বিকাল ২টা থেকে ৫টা সমাজতত্ত্ব ২ পরীক্ষা ছিলো আমার (বাউবি), মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজ, খাগড়াছড়ি, আগে আরো ২টা পরিক্ষা হইছে, গত বছর ৮টা দিয়েছি, তো আজকের পরীক্ষায় আগের মতই খাতা দিছে সব করছে যখন খাতায় সই করতে আসছে তখন হলে থাকা শিক্ষক বলে মুখ দেখাতে হবে, তো আমি বললাম স্যার মহিলা শিক্ষক কে দেখাবো, দরকার হলে আমি কমন রুমে যাবো, তো উনি বললো মহিলা শিক্ষক নাই, ওনাকেই দেখাতে হবে, আমি পরে বলছি স্যার যে কোন একজন আপুকে মানে হলের পরীক্ষার্থীকে দেখলেও হবে।তখন উনি বলে না হবে না, পরে আমি বলছি স্যার আমাকে তো আপনারা চিনেন বলে চিনলে হবে না মুখ দেখাতে হবে। পরে আমার আগে পেছনের ছেলে মেয়ে গুলোও বলছে স্যার ভাবিকে আমরা চিনি,তাও উনি মানে নি, হলে থাকা ২ জন শিক্ষক এর মাঝে লম্বা করে একজন (আবুল হোসেন, ম্যাথ) উনি আমাকে বারবার হেয় করে বলতেছিলো ওনার স্ত্রী আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক উনি মুখ দেখায় আমি কোথাকার আলীম হয়ে গেছি, আবার হুজুর মত করে একজন ছিলেন (আবুল বাশার মিয়াজি,পিটি) উনিও আমাকে বারবার হেনস্তা করেছেন নানান কথা বলেছেন হলের ভেতরেই, আমি চুপ ছিলাম পুরো হল সাক্ষী, আমি তখনও কান্না করে বলছি আমার পাশের ছেলেগুলো বলেছে স্যার ভাবি অসুস্থ ভুয়া হলে এই অবস্থায় কেন পরিক্ষা দিতে আসবে, ঔ ২ জন শিক্ষক এর কথা না শোনাতে নেকাব না খোলাতে ওনারা প্রিন্সিপালকে ডেকে আনে।’
‘পরে হলের ২ জন শিক্ষক প্রিন্সিপালকে ডেকে আনে উনিও সেম বলে মুখ দেখাতে আর আমাকে বোঝাতে থাকে শিক্ষক বাবার সমতুল্য আমি তখনও বলছি মেয়ে কাউকে দেখাবো, ততক্ষণে আমার খাতা+এডমিট কার্ড নিয়ে নিছে আর প্রিন্সিপাল বলতেছিলো কোন কথা শোনা হবে না মুখ না দেখালে বহিষ্কার বাস, তখন পরীক্ষা মাত্র ৩০-৩৫ মি ই হয়েছিলো, উনি রেগে কথা গুলো বলে চলে গিয়ে আবার ফিরে আসছে তখন হলের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ নিয়ে, পুলিশকে বলছে আমি বহিষ্কার কেন তা বলে নি তো পুলিশ বললো আমাকে বের হতে আমি বলছি আমার অন্যায় কি, পরে আমি পুলিশকে বলছি ওনারা মুখ দেখতে চাচ্ছে, আমি বলছি মহিলা কাউকে দেখাবো, তখন পুলিশ টাও বললো যে ক্লাসের কোন মেয়েকে দেখালেই তো হলো, কিন্তু প্রিন্সিপাল তার কোন কথাই শুনে নি, তখন আমার খাতা এডমিট সহ তার রুমে চলে গেছে আমিও ওনার রূমে গেছি,,তখন আমাকে কয়েকজন শিক্ষক মিলে বলে আমি ভুয়া,কার পরিক্ষা দিতে আসছি বলতাম,আমি পরে বলছি স্যার আমার আগে পরের বেন্সের ওরা তো বললো আমাকে চিনে,ওনারা আমাকে প্রায় ৩:৪৫ পর্যন্ত ওখানে দার করিয়ে রাখে।’
‘তো ওনারা বললো যে না হবে না এমন কারো নাম বলো যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তো পরে বললাম যে খাগড়াছড়ি থানার এস আইকে কল দিতে উনি আমাকে চিনে, তখন ওখানে থাকা পুলিশটা ওনাকে কল দিছে এখন ওনাদের কি কথা হইছে আমি জানি না, পরে ঔ পুলিশ গিয়ে প্রিন্সিপালকে কি বললো তখন উনি বললো না না হবে না আর বহিষ্কার, পরে আরকজন শিক্ষক বললো কলেজের কোন স্যারকে চিনি কিনা বলছি একজনের সাথে কথা হয়,ওনার নাম নিছি বোরহান স্যার, পরে উনি বলে ওনাকে দিয়ে কল দেওয়াও, আমি বলছি ফোন তো হলে জমা দেওয়া উনি বললো ফোন আনো, আমি পরে ফোন এনে মাঠে দারিয়ে কল দেওয়াতে প্রিন্সিপাল এসে আমাকে পুলিশ দিয়ে কুকুরের মত তারিয়ে বের করে দেয়, আমি হাটতে পারিতেছিলাম না, অফিসে কথা বলার সময় আমি বারবার প্রিন্সিপাল সহ সবাইকে বলছি আমি ৩ মাসের প্রেগনেন্ট, আমার আগে ২ টা মিসক্যারেজ আছে শুধু ইয়ার ড্রপ যাতে না হয় হাই রিক্স নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছি, প্রিন্সিপাল তাও কোন কথাই শুনে নি আমাকে বের করে দিয়ে গেট তালা মেরে দিতে বলছে,পরে বারবার অনুরোধ করাতেও গেট খুলে নি।’
‘আমি বদ্ধ হয়ে তখন ৩:৫০ এ 999 এ কল করি, মাটিরাঙ্গা থানার ওসি ১৫-২০ মি এর মাঝেই আসে মহিলা পুলিশ সহ, আমি বারবার বলেছি আরো ১ ঘন্টা বাকি আছে এখনও আমি লিখলে পাস আসবে কিন্তু প্রিন্সিপাল ওসিকে তার কথার জালে ৪০-৪৫ মি আটকে রাখে,নিচে আসে তখন পরিক্ষা শেষ হতে ২৫-২০ মি বাকি, তখনও কথা বলে আমাকে যাচাই করে, ততক্ষণে পরিক্ষা শেষ, তাও প্রিন্সিপাল বলে আমি ইসলামের গোরা প্রকৃতি ধরে বসে আছি, আমার পরিচিত একজন ওনাকে বললো ওর পরিক্ষা শেষ করে যে স্যার এই যে ওনার প্রেগনেন্সির সময় এমন একটা ইন্সিডেন্ট হলো এটা ওনার জন্য ক্ষতিকর হবে, তখন ঔ ছেলেকে ধমক দিয়ে বলে তাহলে পরিক্ষা দিতে কেন আসছে, তার মানে কি আমি প্রেগনেন্ট হলে পড়ার অধিকার নাই, ওসি আমার সাথে কথা বলতে চাইলে বারবার উনি প্রিন্সিপাল কথার মাঝে ইন্টারাপ্ট করছে, আমাকে কথা বলতেই দেয় নি, এমন কি উনি বলছে উনি নাকি বলছে আমি মহিলা পুলিশকে মুখ দেখাতে অশিকার করছি, তখন আমি ঔ কর্তব্যরত পলিশকে বলছি ভাইয়া আপনি বলেন তখন উনি বলছে আমি চাইছি কিন্তু কলেজ থেকে অনুমতি না দিলে নাকি মহিলা পুলিশ আনা যায় না, ওনাকে প্রিন্সিপাল মানা করছে , কলেজ থেকে থানায় লিখিত দিছে আমি নাকি হলে শিক্ষদের সাথে বাজে ব্যবহার করছি এবং ফোন ব্যবহার করছি তাই আমাকে আর পরিক্ষা দিতে দেয় নি, হলের সব ছাত্র ছাত্রি শাক্ষি আমি কেমন ব্যবহার করছি আর আমাকে হল থেকে বের করার দের ঘন্টা পর ফোন বের করছি তাও ওটা জমা দেওয়া ছিলো, আবার শিক্ষকের কথাতেই আমি ফোন এনে কল করেছি। এখানে আমার ভুল বা দোষ কি? আবার 999 থেকে জানতে পারি আমি নাকি অসদুপায় অবলম্বন করেছি তাই আমাকে হল থেকে বের করে দিছে, আমার কাছে যদি নকল পায় তাহলে পুলিশের কাছে প্রমাণ নাই কেন নকলের?’
‘আমি নকল করলে আমি কেন পুলিশকে কল করবো? প্রশ্ন হলো বাউবি থেকে কি নিষেধ করা ছিলো নারীকে নারী দিয়ে মুখ দেখানো যাবে না,দেশের বড় বড় কোর্টে পর্দার ব্যপারে শিথীলতা আছে এবং নারীকে নারী দিয়ে তল্লাশি সহ যাবতিও সব করা হয় তাহলে আমার দোষ টা কি আমি পেলাম না কেন? আবার নকল বের করার সময় তো ঠিকি নারি কাউকে ডেকে আনে, না আমার কাছে নকল পাইছে না আমি বাজে ব্যবহার করেছি, একটাই পুরুষের সামনে নেকাব খুলি নি, এখানে আমি কি দোষ করেছি? উনি আসার আগে আমার শিক্ষার্থী কার্ড টাও রেখে দিয়েছে, বলেছে আমি ঝামেলা না করলে সামনের পরিক্ষার সময় এসে নিয়ে পরীক্ষা দিতাম, আইডি কার্ড টা আমার কাছেই আছে। ওনাদের ভুল বা দোষ না থাকলে আমি ঝামেলা করবো কেন? কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাই আমি।’
ভুক্তভেগীর ফেসবুক পোস্টে অনেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। রাবেয়া সুলতানা নামে একজন নারী লিখেছেন, ‘হোক প্রতিবাদ। আর কত আমরা পর্দার সাথে আপোষ করবো। মুখ দেখানোর জন্যে কোন মহিলা শিক্ষক বা মহিলা কাউকে প্রতিটা পরীক্ষা কেন্দ্রে রাখা হোক এবং এই ফালতু বাহানায় আর কোন ধর্মপ্রাণনারী ধর্মান্ধ খেতাব না পাক।’
আফরোজা আক্তার পপি নামে একজন লিখেছেন, ‘তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এই ঘটনার। যদি এই ঘটনা সত্যি হয় তাহলে ওই কলেজের শিক্ষকদের বহিষ্কার করা উচিত।’
আখতার হোসাইন আখতার নামে আরো একজন লিখেছেন, ‘এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই ঘটনায় জড়িত পর্দা করতে বাধা প্রদানকারী শিক্ষকদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। আর ওই প্রতিষ্ঠানে পর্দাশীল বোনদের স্বাধীনভাবে পর্দা করতে দেওয়া হোক।পর্দা আমাদের বোনদের অধিকার।’