বিশ্বব্যাংক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক এখনো বহাল,ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মা সচিবদের ক্ষমতা!

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৩৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ফ্যাসিজমের প্রেতাত্মারা এখনো অবস্থান করছে। প্রশাসনে গুরুত্বর্পূণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে অন্তর্বকালীন সরকারকে পরিচালনা করছেন ফ্যাসিবাদী সরকারের নিয়োগ পাওয়া আমলারা। প্রশাসনে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে নেই, তারা চক্রান্ত করছে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে গভীর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থেকে দেশকে অকার্যকর ও অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেয়ার চার মাস হলেও ফ্যাসিবাদী সরকারের নিয়োগ পাওয়া ৩৭টি মন্ত্রণালয়ে সচিবকে অপসারণ বা পরিবর্তন করা হয়নি। বিশ্বব্যাংক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক শরিফা খান এখনো বহাল রয়েছে লন্ডনে। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মো. সেলিম উদ্দিন, অর্থবিভাগের ড. মো.খায়েরুজ্জামান মজুমদার,অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ড.মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফরিদ আহম্মেদসহ বেশ কয়েকজন সচিব ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলের সাবেক একজন উপদেষ্টা ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সাবেক গর্ভণর আব্দুল রউফ চৌধুরী, সাবেক মূখ্য সচিব আব্দুল কালাম আজাদ, সাবেক মূখ্য সচিব আহামেদ কায়কাউস, সাবেক মূখ্য সচিব তোফাজ্জাল হোসেন মিয়া সাথে যোগাযোগ রয়েছে এবং প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থেকে দেশকে অকার্যকর ও অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ উঠছে।

প্রশাসনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৭৮টি সচিব পদের বিপরীতে বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে ৯০জন সচিব দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান সরকারের আমলে ৮০ জন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। এই ৮০ জনের মধ্যে ৩৮ জনই বিগত আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া সচিব। বাকি ৪৪ জনের মধ্যে আবার ১৩ জনকে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখনো স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়নও সমবায় বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে সচিব পদ শূণ্য রয়েছে। আজ না হলে চলতি সপ্তাহে এসব মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের হয়ে যেসব প্রশাসনের কর্মকর্তারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের দ্রুত অপসারণ করে সৎ পদঞ্চিতদের পদোন্নতি নিয়ে দায়িত্ব দিতে হবে। অন্তর্র্বতী সরকারের মধ্যে ফ্যাসিজমের অনেক প্রেতাত্মা অবস্থান করছে। প্রশাসনে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে নেই, তারা চক্রান্ত করছে। এখনও তারা ছাত্র-জনতার বিজয়কে ব্যর্থ করতে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের হয়ে যেসব প্রশাসনের কর্মকর্তারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের দ্রুত অপসারণ করে সৎ পদঞ্চিতদের দায়িত্বে নিয়ে আসতে নতুন সরকারকে আহব্বান জানিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও চার মাসেও জনপ্রশাসনে ফ্যাসিজমের নিয়ন্ত্রণে। হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া ৩৮ জন সচিব বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের বিষয়ে সচিবালয়ের গোয়েন্দা সংস্থা একাধিবার প্রতিবেদন জমা দিলেও এসব কর্মকর্তাদের প্রত্যহার করা হচ্ছে না। জনপ্রশাসন মুলত আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী আমলাদের নিয়ন্ত্রণে। বিগত ১৮ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া শুরু হলেও তোমন ভাবে ফাইল আগাচ্ছে না। সুবিধাভোগী আমলারা গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার কারণে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক নিয়োগেও তাদের প্রাধান্য ছিল। ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনের ডিসি থেকে ইউএনও এবং এ্যাসিল্ড পর্যন্ত রয়েছে ফ্যাসিবাদের নিয়োগপ্রাপ্তরা। এসব আমলাদের কারণে প্রশাসনের কার্যক্রমে গতি ফিরছে না। আবার অনেক জেলায় উন্নয়ন কর্মকান্ড বন্ধ করে রুটিন দায়িত্ব পালন করছে ডিসিরা।

অন্যদিকে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার ইন্দনে কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিভিন্ন দাবি নিয়ে অন্তর্বকালীন সরকারকে বিপাকে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১৬ বছর ধরে যারা বঞ্চিত তাদের ক্ষোভ ও হতাশা আরও বাড়ছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তিন মাস পূর্ণ হচ্ছে আগামী শুক্রবার। গত ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। সেই সরকার গঠনের ৭ থেতে ১০ দিনের মধ্যে বিএনপি আমলে দায়িত্ব পালন করা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করেছিলো। বর্তমান এ সরকারের তিন মাসেও প্রশাসন থেকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে পারেনি। পতিত সরকারের কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকলে মাঠ প্রশাসনকে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক ভাবে গড়ে তোলার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব ধরনের উদ্যোগ ভেস্তে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার অনেক জেলায় সদ্য নিয়োগ পাওয়া ৩৪ ডিসিদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ওই সব জেলায় মানবন্ধ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সেই সক কর্মকর্তারা এখনো বহাল রয়েছে। প্রশাসনে গতি ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানান উদ্যোগ নিলেও এখনো তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। প্রশাসনে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা বা ভালো পোস্টিং না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিগত সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি অংশ চরম দলবাজী করেছে। অতি উৎসাহী কিছু সরকারি কর্মকর্তা (রাজনৈতিক) দলের নেতাকর্মীদের মতো আচরণ করেছে। এখনো প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীরা দাপটের সাথে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মচারীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে সব সচিবদের কাছে নয় দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় সচিবসহ দপ্তর-সংস্থার প্রধান এবং মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে কয়েকটি বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান স্বাক্ষরিত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ এসেছে, অনুষ্ঠানের পেছনে কারা আছে। এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নিতে প্রয়োজনে গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ৭৮টি সচিব পদের বিপরীতে বর্তমান সরকারের ৯০ জন সচিব রয়েছেন। এর মধ্যে ৭২ জন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে সচিব হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। এই ৭২ জনের মধ্যে ৩৬ জনই বিগত আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া সচিব। বাকি ৩৬ জনের মধ্যে আবার ১৩ জনকে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৯০ জন সচিবের মধ্যে ১৮ জন ওএসডি। প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতে গত ১৫ বছরে প্রায় সবই দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিছু লোক ঢুকে পড়েছে যারা কোনোমতেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। তারা নানা কায়দা-কানুন করে চাকরিতে ঢুকেছে। কিছু লোক টাকার বিনিময়ে ঢুকেছে। প্রশাসনের জানামতে ভিন্নমতের লোকদের চাকরিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কেউ কেউ মেধার জোরে চাকরি পেলেও পুলিশ ভেরিভিকেশনের নামে চাকরিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আর ভিন্নমতের যারা ছিলেন তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত রাখা হয়। পটপরিবর্তন হলেও জনপ্রশাসনে বাস্তবে কোন পরিবর্তন আসেনি। বিগত ১৫ বছরের সুবিধাভোগীরাই এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদের কারণে কার্যত সারাদেশে পতিত ফ্যাসিবাদ সমর্থিতরা পুনর্বাসিত হচ্ছে। সরকারের নানা কর্মকাণ্ড কৌশলে তারা ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। সচিবালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠদের কাছে সহসাই পৌঁছে যাচ্ছে। বিগত বড় বড় দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ফাইলপত্র সরিয়ে ফেলারও অভিযোগ উঠেছে। পদবঞ্চিতরা এখনো পদবঞ্চিত হিসেবেই আছেন। অদৃশ্য কারণে সচিব পদে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীদের প্রতি আস্থা রাখার কারণে নানা ধরনের সংকটও দেখা দিচ্ছে।

আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া সচিব যারা. শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মো. মোকাব্বির হোসেন, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের কাজী এনামুল হাসান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সোলেমান খান, পরিকল্পনা কমিশনের আরেক সদস্য ড. মোহাম্মদ কাউসার আহাম্মাদ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মো. কামরুল হাসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নাসরীন আফরোজ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফরিদ আহম্মেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ড. মো. মুশফিকুর রহমান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নাজমুল আহসান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মো. আশরাফ উদ্দিন, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, অর্থবিভাগের ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মো. মাহমুদুল হোসাইন খান, জাতীয় পরিকল্পনা একাডেমির মহাপরিচালক সুকেশ কুমার সরকার, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস একাডেমির রেক্টর ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নাজমা মোবারেক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ইসরাত চৌধুরী, অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর ড. মো. সহিদ উল্লাহ, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রেহানা পারভীন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মো. রুহুল আমিন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মো. সেলিম উদ্দিন, দুর্নীতি দমন কমিশনের খোরশেদা ইয়াসমীন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মো. আমিন উল আহসান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাঈদ মাহবুব খান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ড. মো. সারোয়ার বারী এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান বহাল রয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়র গত কয়েক দিনে জারি করা প্রজ্ঞাপন গুলো পর্যরেক্ষণ করে দেখা গেছে, বিগত পতিত স্বৈরাচারী সরকারে সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের ওএসডি এবং অবসরসহ বদলী করা হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থানা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফকে প্রত্যাহার করা হয়নি। এ দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ রংপুর জেলা ডিসি থাকাকালে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মনোনয়ন পত্র জমা এবং স্বাক্ষর করেনি তারপরও রংপুর-৩ মনোনয়নপত্র বৈধ দেখিয়েছিলেন এ প্রাথমিক সচিব ফরিদ আহমেদ। হলফনামার তথ্য অনুসারে, ঢাকা-১৭ আসন থেকে এরশাদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার দেখানো হয়। এ হলফনামাটি ছিল সম্পূর্ণ। এ আসনে ওই বছর আওয়ামী লীগেরও কোনো প্রার্থী ছিলেন না। নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ। বাকি দুটি অর্থাৎ রংপুর-৩ ও লালমনিরহাট-১ আসনে তার হলফনামা বৈধ প্রার্থীর তালিকায় রয়েছে। অথচ এসব আসনে তার দেওয়া হলফনামা ছিল অসম্পূর্ণ সংসদকে জানিয়েছিলেন এরশাদ। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার বই গুলো য়ে ভাবে পরিবর্তন এবং শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্য সহ বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তারপরও তাকে প্রত্যাহার করানি। আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৮ জন সচিবের মধ্যে বর্তমান সরকারের আমলে চাকুরিচ্যুত এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রয়াত কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমামের পিএস, আওয়ামী লীগের মহিলা এমপির স্বামী, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর পিএস রয়েছেন। এছাড়া এসব সচিবদের মধ্যে গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন আয়োজনে অন্যতম ভূমিকা পালনকারী সাতক্ষীরা, খুলনা, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, খুলনা বরিশাল,চট্টগ্রামসহ ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকারীরাও রয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগ আছে। সচিব ছাড়াও অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব, ডিসি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ইউএনও
পদে ফ্যাসিবাদ সরকারের প্রশাসনের আমলারাই বহাল তবিয়তে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী প্রশাসনের ওপর অতি নির্ভরশীলতায় সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, গত ১৬ বছর বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হলেও ডাম্পিং পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এসব বৈষম্য দূর করতে হবে। আওয়ামী লীগ আমলে সুবিধাভোগীরা কীভাবে এখনো প্রশাসনে বহাল তা কর্মকর্তারা জানতে চান। এখানে সেই রকম ব্যবস্থা নিতে না পারলে আমাদের সবার গলাকাটা যাবে।

কমিশনের সদস্য সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনে সচিব পদে পদোন্নতি ও পদায়ন চলমান রয়েছে। এবার আমরা বি প্রাকটিক্যাল, মানুষের কাছে গিয়ে যতটুকু গ্রহণযোগ্য সেটা দেওয়ার চেষ্টা করবো। ফ্যাসিবাদী সরকারের হয়ে যেসব প্রশাসনের কর্মকর্তারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের তালিকা করছে সংস্কার কমিশন। এছাড়া সৎ পদঞ্চিতদের পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রশাসনের কাঠামোগত পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করবো। যেন এ ধরনের আবহাওয়া সৃষ্টি না হয়। তারপরও থেকে যায়, যত চেষ্টা করি না কেন আমি, কিছু লোক থাকবে তারা চাইবে।ইনকিলাব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions