শিরোনাম
কক্সবাজারের টেকনাফে অস্ত্রের মুখে পাহাড় থেকে দুই কৃষককে অপহরণ, গুলিবিদ্ধ ৩ বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ হাসিনা সবকিছু ধ্বংস করে গেছে, শূন্য থেকে শুরু করেছি : ড. ইউনূস ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৭৩ আসামিসহ এখনও পলাতক ৭০০: কারা মহাপরিদর্শক ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক সাভারে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী : হাইকোর্টে প্রতিবেদন রাঙ্গামাটির সাজেক থেকে ফিরছেন আটকে পড়া পর্যটকরা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ কর্তনে ক্ষোভ,অর্থ ফেরতে আন্দোলনে নামার হুমকি মুন্নী সাহার স্থগিত ব্যাংক হিসাবে মাত্র ১৪ কোটি টাকা শেখ পরিবার ও ৯ গ্রুপের সম্পদের খোঁজে ১০ টিম

দেশের ৮৫ শতাংশ সম্পদ ১০% মানুষের কাছে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ২০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ১০ শতাংশ মানুষ দেশের ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করছে বলে জানিয়েছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ তছরুপ হয়েছে। আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র চালিয়েছেন। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল পুরো কাঠামো।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সংবাদ সম্মেলনে কমিটির প্রধান ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। কমিটির অন্য সদস্যরাও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশকে ‘চামচা পুঁজিবাদ’ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। আইনসভা, নির্বাহী বিভাগসহ সবাই গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে চুরির অংশ হয়ে গেছে।
এটাই চোরতন্ত্র। এ জন্য রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং উর্দি পরা কিংবা উর্দি ছাড়া আমলারা সহযোগী হলেন। এই চোরতন্ত্রের উৎস ২০১৮ সালের নির্বাচন। চোরতন্ত্রে পরিণত করতে প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের ভূমিকা বেশি।
শেষের দিকের আলোচনায় উঠে এসেছে, চোরতন্ত্রে পরিণত করার প্রক্রিয়ায় উর্দি পরা কিংবা উর্দি ছাড়া আমলারা বেশি কাজ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত চারটি খাতের মধ্যে ১ নম্বরে আছে ব্যাংক খাত। দ্বিতীয় স্থানে অবকাঠামো; তৃতীয় স্থানে জ্বালানি এবং চতুর্থ স্থানে তথ্য-প্রযুক্তি খাত রয়েছে। এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক ও আইন-শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা জরুরি জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, তা না হলে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বিপত্সংকুল হয়ে পড়তে পারে।

দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা না গেলে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তী জাতীয় বাজেট আসার আগে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে বর্তমান সরকার কী কী উদ্যোগ নেবে সেগুলোকে স্পষ্ট করতে হবে।
আরো দায়বদ্ধতা আনতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এই সরকার পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকবে না। তবে অন্তত আগামী দুই বছরের কর্মপরিকল্পনা সামনে থাকতে হবে।

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত করার কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য সব মানদণ্ড পূরণ করেছে। তাই গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত করার কোনো কারণ নেই।’

মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ে গেছি : বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মধ্যম আয়ের ফাঁদ নিয়ে বলেন, ‘এত দিন ভেবেছিলাম, আমাদের মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ার শঙ্কা আছে, ঝুঁকি আছে। এখন আমরা বলছি, আমরা সেই ফাঁদে পড়ে গেছি। পরিসংখ্যান দিয়ে এত দিন উন্নয়ন দেখানো হয়েছে; বাস্তবে তা হয়নি। হিসাব গরমিলের কারণে মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ে গেছি।’

তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে এত টাকা পাচার হলো, কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হলো না, কর্মসংস্থান হলো না, তাহলে এত প্রবৃদ্ধি হয় কিভাবে? তিনি বলেন, নীতি সংস্কার করতে হবে। জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ৬ দফা সুপারিশ : আগামী জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে বর্তমান সরকার কী কী উদ্যোগ নেবে, সেগুলো স্পষ্ট করতে হবে। সরকারকে মধ্য মেয়াদে এমন পরিকল্পনা নিতে হবে যাতে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষার মান এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকে এবং অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা যাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে পারেন।

এলডিসি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই। যদিও রপ্তানিকারকরা, যাঁরা বাজার সুবিধা পান, তাঁরা নানাভাবে এটি পেছানোর চাপ সৃষ্টি করছেন। কিন্তু সেটি হতে দেওয়া যাবে না। সরকারের তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি আছে।

বাজেট প্রণয়নে ৫ দফা নির্দেশনা : বৈষম্য দূরীকরণে আগামী বাজেটে বোঝা না চাপিয়ে করের আওতা বাড়ানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। কর আদায় বাড়াতে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করব্যবস্থার আধুনিকীকরণের মধ্য দিয়ে এনবিআর আগে অব্যবহৃত সম্পদ ব্যবহার করতে পারে। জাতীয় বাজেটে বর্তমান করছাড়ের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত কর ফাঁকি প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি উদাহরণ স্থাপন করা এবং আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য কমপ্লায়েন্স মেকানিজম শক্তিশালী করা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য সরকারের জন্য সব বিদেশি অর্থায়ন করা এডিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া অপরিহার্য।

অবকাঠামোতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ চুরি হয়েছে : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু বা ১৪টি মেট্রো রেল নির্মাণ করা যেত। শ্বেতপত্র কমিটির তথ্য বলছে, প্রবাসে কর্মী পাঠাতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো গত ১০ বছরে ভিসার জন্য হুন্ডির মাধ্যমে ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন করেছে। এই টাকা ঢাকা এমআরটি লাইন-৬ (উত্তরা থেকে মতিঝিল) নির্মাণ ব্যয়ের চার গুণ। সিন্ডিকেট এবং এই শোষণমূলক নিয়োগের কারণে অভিবাসী শ্রমিকরা ন্যায্য কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে।

কমিটির সদস্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, ‘জ্বালানি খাতে ৩০ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার খরচের তথ্য দেখেছি। সেখানে তিন বিলিয়ন ডলার হাতবদল হয়েছে। হাতবদলের প্রমাণ নেই, তবে প্রতি প্রকল্পে হাতবদল হয়েছে। ঠিকাদারি কাজে প্রতিযোগিতা হয়নি। যারা কাজ পেয়েছে তাদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অতি উচ্চ টার্গেট সেট করে লুটপাট করা হয়েছে। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইন দুর্নীতির রাজপথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। সংকট মোকাবেলার জন্য নিজস্ব জ্বালানি উৎপাদনের প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির চেষ্টা করা হয়েছে।’

কমিটির সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অনেক মেগাপ্রকল্পই হয়তো প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ঠিকাদারের কথা অনুযায়ী কয়েক গুণ ব্যয় বাড়িয়ে সেই টাকা পাচার করা হয়েছে। অর্থপাচারের হিসাব বের করা বেশ কঠিন। তবে আমি একটি আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে পাচারের হিসাবটা এনেছি।’

কমিটির সদস্য অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা এখন গবেষণার দাবি রাখে। অতীতেও এর বিরুদ্ধে সংস্কারের দাবি উঠেছে, বিরোধিতাও এসেছে। এখনো নানাভাবে সংস্কারবিরোধীরা সক্রিয়। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কথা চিন্তা করলে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সংস্কার করতেই হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions