রাঙ্গামাটি:- অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনে উদ্যোগী হন সুপ্রদীপ চাকমা। এ লক্ষে তিনি খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পৃথকভাবে মত বিনিময় সভাও করেছেন। এরপর আড়াই মাস পার হলেও এখনো তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করতে পারেনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরিষদ পুনর্গঠন না হওয়ায় পাহাড়ের শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কৃষি, সমাজসেবাসহ হস্তান্তরিত বিভাগগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম থমকে যায়। দ্রুত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন দাবি জানিয়েছেন পার্বত্যবাসী। তবে একটি সুত্রেজোনা গেছে আজ রবিবার বা কাল সোমবার ঘোষনা হতে পারে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নামের তালিকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অভিভাবক শূন্য তিন পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে কার্যত স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ফাইল-নথিপত্র অনুমোদন, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। তবে খুব শীঘ্রই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম শামিমুল হক সিদ্দিকী।
আওয়মীলীগ সরকারের মনোনীত চেয়ারম্যান ও সদস্য হওয়ায় গত ৫ আগস্ট সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ‘নিরাপত্তাহীনতার কারণে’ পরিষদ কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকছেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী ‘শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন। অন্য দুই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান- সদস্যরাও কর্মস্থলে থাকছেন না।
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলার জ্যৈষ্ঠ আইনজীবি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন বলেন- দীর্ঘ আড়াই মাস পরও পরিষদ পুনর্গঠন না হওয়ায় উন্নয়নমুলক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ও যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে অচিরেই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা দরকার। আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান ও সদস্যরা অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন। নিজেদের অবস্থান বুঝতে পেরে তারা সটকে পড়েছেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সমতলের ৬১ জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দিলেও আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ করেনি সরকার। যদিও গত ১৬ অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় তিনটি পৃথক অফিস আদেশে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে। এ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সচেতন মহলে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও বিধি-বিধানকে পাশ কাটিয়ে এভাবে অফিস আদেশের মাধ্যমে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে প্রশাসনিক ক্ষমতা দেয়াকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লংঘন বলে অভিহিত করা হয়। এ ঘটনাকে নজিরবিহীন এবং এতে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন অনেকেই।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটির বিশিষ্ট আইনজীবি অ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পু বলেন- মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে প্রশাসনিক ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি হয়ত প্রশাসনিক বাস্তবতা। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। পরিষদ পুনর্গঠন সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে আমরা জানি। অচিরেই হয়তো জেলা পরিষদ পুনর্গঠন হতে পারে। পরিষদ গঠন হলে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে না।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম বলেন, বর্তমানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে কোন কার্যক্রম নেই। আমরা শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিচ্ছি।
জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি গৌতম কুমার চাকমা মুঠোফোনে বলেন- আইন ও বিধি-বিধান লংঘন করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করার বিষয়টি অবগত হবার পর আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে তা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় আমাদের অনুরোধ রেখেছে।
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম শামিমুল হক সিদ্দিকী মুঠোফোনে বলেন, খুব শীঘ্রই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হবে। এ সপ্তাহের মধ্যেই পুনর্গঠন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- পার্বত্য চট্টগ্রামের সবার আগ্রহ তৈরি হয়েছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য কারা হচ্ছেন। শীঘ্রই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের খবরটি জানতে পারবেন।পাহাড় ২৪