ঢাকা:- রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসরের পর অন্য কোনো পদে যাওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি পদের মর্যাদা সবার রাখা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে যত লোভনীয় কিছু হোক না কেন সেখানে তার কোনো অবস্থাতেই যাওয়া ঠিক নয়। এটা করা হলে তা দেশের মানুষকে অপমান করা হবে। বেইজ্জতি করা হবে। দেশের মানুষের সম্মান ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজে অবসরের পর আমি যাবো না।
রোববার (১২ মার্চ) রাতে বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ের সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন। আগামী ২৩ এপ্রিল আব্দুল হামিদের রাষ্ট্রপতি মেয়াদ পূর্ণ হবে। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সম্মানে বঙ্গভবনে নৈশভোজের আয়োজন করেন। এ সময় তিনি অবসরের পর নিকুঞ্জের বাড়িতে থাকবেন বলেও আভাস দেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বেড়াতে যাওয়ারও আমন্ত্রণ জানান। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি আর মাত্র ৪২ দিন আছেন বলেও জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের দেশে এরকমও আছে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে দেখা গেল আবার মন্ত্রী হয়েছেন। আবার রাষ্ট্রপতির থেকে মন্ত্রী হওয়ার পর শুধু এমপিগিরিও করছেন। আবার দেখা গেল কেউ এমপি নির্বাচনে নমিনেশন না পেয়ে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যানে পদে দাঁড়ায় গেলো। হায়াত থাকলে হয়তো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদেও দাঁড়িয়ে যেতো। এটা হওয়া উচিত নয়। আমি যে অবস্থাতে চলি না কেন এদেশের মানুষের সম্মান ক্ষুণ্ন হোক এমন কোনো কাজে যাবো না।
তিনি বলেন, এ পদের মর্যাদা সবার রাখা উচিত। এখান থেকে বেরিয়ে আর কিছু তার করা ঠিক নয়। আমি বিশ্বাস করি দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে যত লোভনীয় কিছু হোক না কেন সেখানে তার কোনো অবস্থাতেও যাওয়া ঠিক নয়।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সম্প্রতি প্রকাশিত তার আত্মজীবনী বইয়ের কিছু উদাহরণও বক্তব্যে তুলে ধরেন। এ সময় তিনি স্ত্রীকে নিয়ে লেখা একটি অধ্যায়ের প্রসঙ্গও টানেন। বইয়ের ওই অংশটি পুরোপুরি ঠিক নয় বলে তার স্ত্রী অভিযোগ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বইয়ে আমার বিয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে যা লিখেছি তা সব ঠিক নয় বলে দাবি করেছে। আর বলেছেন আমি কিছু কিছু কথা লিখিনি। সমস্যা হচ্ছে যে, কমপ্লিটলি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হলে এক রকম হয়। দেড় দুই বছর থেকে জানাশুনা থাকলে যা হয়। সেখানে তো সমস্যা একটু থাকবে। কারণ তার দৃষ্টিভঙ্গি আমার দৃষ্টি ভঙ্গি। কথা এবং লেখায় একটু পার্থক্য তো থাকবেই। তবে আমি বলতে পারি আমি যা লিখেছি ঠিক লিখেছি। তার হয়তো পছন্দ না হতে পারে। সুতরাং সঠিক করে আর লেখার কিছু নেই। আমি যা লিখেছি সত্য লিখেছি। তার কাছে আমার এই কথাগুলো ভালো লাগেনি।
অবসরকালে সাংবাদিকদের তার বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, মাঝে মধ্যে কেউ এলে আমার সময়টা ভালো কাটবে। আর এখনকার মতো তখন তো এই আসা যাওয়ার বাধাটা থাকবে না। একেবারে ফ্রি স্টাইল হয়ে যাবে। আমিও আপনাদের মতো হয়ে যাবো। সমস্যা থাকবে না। তবে এক সঙ্গে সবাই আইসেন না তাহলে সমস্যা হবে, ৪/৫ জন করে আইসেন।
বক্তব্যের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, রাজনীতি করার সময় আমি বক্তৃতা করেছি ঠিকই কিন্তু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আমার তো লিখিত বক্তৃতায় দিতে হয়। রাষ্ট্রপতির বয়স আমার ১০ বছর হয়ে গেছে ১০ বছর হতে আর মাত্র ৪২ দিন বাকি। ৪২ দিন পর আমার ১০ বছর পূর্ণ হবে। প্রথম আমি হই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। জিল্লুর রহমান সাহেব মারা যাওয়ার পর আমি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এভাবে আমি ছিলাম ৪০ দিন। আমি রাজনীতি করি ক্লাস নাইন থেকে। নাইন টেন ছাত্রলীগ করেছি ৬১ সালে মেট্রিক পাস করার পর আমি নেতা হয়ে গেছি। ৬১ সাল থেকে ২০২৩ সাল ৬০, ৬২ হয়ে ৬৩ বছর পড়ছে এ যে রাজনীতি শুরু থেকে এ পর্যন্ত সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে আমার একটা পুরাতন সম্পর্ক। রাজনীতিতে আমি যতটুকু সুনাম অর্জন করেছি এতে সাংবাদিক ভাইদের যথেষ্ট অবদান আছে। পার্লামেন্টে থাকা পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে যেভাবে কথাবার্তা বলতে পারতাম এ ১০ বছরে ওইভাবে ওঠাবসা কথাবার্তা হয়নি। তবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর আমার আর এ সমস্যা থাকবে না। এ সময় কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকও বক্তব্য রাখেন।