শিরোনাম
‘চার মাসে সেনাবাহিনীর ১২৩ সদস্য হতাহত’ এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চাইবে পিলখানায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের ৯ নির্দেশনা রাঙ্গামাটি শহর থেকে উদ্ধারকৃত বন মুরগি কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত বান্দরবানে মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের হোতা রাহুল তঞ্চঙ্গ্যা গ্রেফতার রাঙ্গামাটিতে চট্টগ্রামে আইনজীবি হত্যার প্রতিবাদ মানববন্ধন বান্দরবানে নাশকতা মামলায় দুই চেয়ারম্যান কারাগারে বিচারপতি নিয়োগে কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে ছাপিয়ে ২২৫০০ কোটি টাকা ৬ ব্যাংককে দেওয়া হলো, রবিবার থেকে সংকট কাটছে আইনজীবী সাইফুল হত্যা ও চিন্ময় কৃষ্ণ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার বিবৃতি

বড় হচ্ছে বেকারের মিছিল, ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪
  • ৮৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশ ২০০৭ সাল থেকে বয়সজনিত অধিক কর্মক্ষম জনসংখ্যার সুফল ভোগ করছে। তবে মূলত কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে এ সুফল কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। আবার যাঁরা চাকরির খোঁজে বিদেশে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশই প্রশিক্ষণহীন।
সরকারের দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্যোগগুলোও ঝিমাচ্ছে।

জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর মতে, কোনো দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর্মক্ষম জনসংখ্যার আকার কর্মক্ষমতাহীন জনসংখ্যার চেয়ে বেশি হলে, তা একটা বড় সুবিধা। একে তত্ত্বীয় ভাষায় বলে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’। তবে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছরের বেশি ভোগ করা যায় না।

বাংলাদেশে তরুণ তথা কর্মক্ষম মানুষের আধিক্য অর্থাৎ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একে দেখছেন বিরাট সম্ভাবনা হিসেবে। বাংলাদেশ ২০৩৮ সাল পর্যন্ত এর সুবিধা ভোগ করবে। এরপর বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার এ স্বর্ণযুগকে কিভাবে ব্যবহার করা হবে তার ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করছে।

সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে বাংলাদেশে কর্মহীন জনসংখ্যা প্রায় ৩.৫ শতাংশ। তবে কর্মহীন বা বেকার জনসংখ্যার ব্যাপারে বিবিএসের সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট শিক্ষিত জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ বেকার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যায় বেকারত্বের হার ১০.৫ শতাংশ।

সুপ্ত বা ছদ্মবেকারদের উৎপাদনমুখী কাজে নিয়োজিত করতে পারলে সরকারের অভীষ্ট লক্ষ্য ২০৪১ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। শিক্ষাব্যবস্থা কর্মমুখী হওয়া দরকার। লেখাপড়া শুধু পরীক্ষা আর ডিগ্রিকেন্দ্রিক হলে হবে না। লেখাপড়া হতে হবে জ্ঞানকেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। শুধু কেতাবি শিক্ষা কাজে লাগছে না।’

বিবিএসের তথ্য মতে, দেশে ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি ৫০ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ। জনসংখ্যার ৪২.৮৪ শতাংশ ১৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী। আর তরুণ শ্রেণি মোট জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণদের ওপরই নির্ভর করতে হবে সবচেয়ে বেশি। তবে তাদের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।

বেকারের মিছিল বড় হচ্ছে

বিবিএসের তথ্য মতে, দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। অন্যদিকে যাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার মাত্র ১.০৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রাপ্ত শিক্ষাকে অনেক ক্ষেত্রেই উপার্জনের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বৃত্তিমূলক শিক্ষার অভাবের পাশাপাশি শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এসব কারণে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অধিক হারে বাড়ছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই বেকার থাকছেন। ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পান। ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো অন্য কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা কারিগরি শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ৩ শতাংশ নিজ উদ্যোগে কিছু করছেন।

প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশ যায় ৯০ শতাংশ

বিবিএসের আর্থ-সামাজিক ও জনমিতিক জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিদেশ গমনকারীদের বেশির ভাগ (৫৩.৯১ শতাংশ) পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। এইচএসসি বা সমমান পর্যন্ত পড়াশোনা করে বিদেশ গেছে ১৮.৯৬ শতাংশ। জরিপ অনুযায়ী, বিদেশ যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন মাত্র ১০ শতাংশ কর্মী।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রতি অনীহা রয়েছে। তারা পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে যেতে চায়, কিন্তু ১০ হাজার টাকা খরচ করে প্রশিক্ষণ নিতে চায় না। এ কারণে কম বেতনসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও বিপদের সম্মুখীন হয়।’

চাকরিবিষয়ক অন্যতম প্রধান অনলাইন মার্কেট বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম ফাহিম মাসরুর বলেন, ‘যাঁদের কোনো দক্ষতা আছে তাঁদের চাকরি পেতে দেরি হয় না। দক্ষতা না থাকলে অনেক দিন বেকার থাকতে হয়। চাকরির বাজারে কম্পানিগুলোতে এত গ্র্যাজুয়েটের প্রয়োজন নেই। তাদের শ্রমিকসহ সাধারণ কর্মী বেশি দরকার।’

দেশে-বিদেশে বেশির ভাগ বাংলাদেশি কর্মীর আয়ের প্রধান উৎস অল্প মজুরির কাজ। দেশে যেমন পোশাকশিল্প বা সেকেলে প্রযুক্তির কৃষি খাত, তেমনি বিদেশেও মূলত কায়িক শ্রমের কাজ। এর প্রধান কারণ সময়োপযোগী শিক্ষা-প্রশিক্ষণের অভাব।

দক্ষ জনবল তৈরির প্রকল্প গতিহীন

দেশে দক্ষ জনশক্তির সংকট কাটাতে নেওয়া প্রকল্পগুলো চলছে কচ্ছপগতিতে। এমন গতিতে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কোনোভাবেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিতে ২০১৪ সালে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রগ্রাম (এসইআইপি) প্রকল্প নেয় সরকার। আট বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আট লাখ ৪১ হাজার ৬৮০ জনকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, তিন হাজার ৮০০ জনকে মধ্যম ও উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সাত হাজার ৮০০ জনকে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, ৯৭৫ জনকে পলিসি অ্যানালিসিস কোর্স ও হাজার ৫০০ জনকে অন্যান্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ২০১৬ সালে দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও রপ্তানির জন্য ৪০ উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্পে এরই মধ্যে ২৪টি কেন্দ্র চালু হয়েছে। এ বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেন, বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠাতে এবং দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে প্রকল্পটি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।’

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে সারা দেশে ৯টি প্রকল্প নিয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৫২৫ কোটি টাকায় উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্প চলছে। তবে চার বছরে মাত্র সাতটি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের জমি অধিগ্রহণ ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেই

এক পর্যায়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের জন্য প্রশংসিত হলেও সাম্প্রতিককালে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি দৃশ্যত অগ্রাধিকারের মধ্যে না থাকায় বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। করোনাকালে কয়েক বছর ধরে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও বাল্যবিবাহ বেড়েছে। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩০ শতাংশ। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবার পরিকল্পনা সেবার মানোন্নয়নে ইউনিয়ন পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাল্যবিবাহে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। করোনা মহামারির মধ্যে দেশে বাল্যবিবাহ ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। জনসংখ্যাবিষয়ক বিভিন্ন সূচক এগিয়ে নিতে সরকার নানা ধরনের কর্মসূচি নিলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।কালের কণ্ঠ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions