প্রভাবিত হয়ে জবানবন্দি রেকর্ড করিনি,বাবুল আক্তারের আইনজীবীর জেরার জবাবে ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষ্য দিলেন দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তাও

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪
  • ৯১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- আলোচিত মিতু খুনের মামলায় যাচাই বাছাই না করে এবং প্রভাবিত হয়ে সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন নি বলে আদালতকে জানিয়েছেন ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসিতে দায়িত্ব পালন করা ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহান। ১৫ ডিসেম্বর তিনি আবু সাত্তার মোল্লা নামের একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করেছিলেন। বর্তমানে তিনি চাঁদপুরের লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। গতকাল চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহান। এরপর তাকে যাচাই বাছাই না করে এবং প্রভাবিত হয়ে সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে কিনাসহ নানা প্রশ্ন করে জেরা করা হয়।

সরোয়ার জাহানের পাশাপাশি গতকাল সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক উপ–কমিশনার মো. কামরুজ্জামান। বাবুল আক্তারের পক্ষে তার আইনজীবীরা কামরুজ্জামানকেও জেরা করেন। তবে তার জেরা শেষ হয়নি। আজকে মঙ্গলবারও তাকে জেরা করা হবে।

বাবুল আক্তারের পক্ষে জেরায় ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানকে প্রশ্ন করা হয়, দীর্ঘ ৬ বছর পর কেন সাক্ষী তার কাছে সাক্ষ্য দিতে আসে? উত্তরে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, তা আমি তাকে জিজ্ঞাসা করিনি, এটা জিজ্ঞাসা করা আমার কাজ না। সাক্ষী পূর্বে অন্য কোথাও সাক্ষ্য দিয়েছে কিনা এ’র জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়েও তাকে আমি জিজ্ঞাসা করিনি, এটাও আমার কাজ না। সাক্ষীকে পিবিআই তাদের কাছে রেখে ট্রেইন করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে ও লোভ দেখিয়ে আপনার কাছে উপস্থাপন করেছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এ বিষয়ে আমার ধারণা নাই। পুলিশের কাছে যে জবানবন্দি দেয় আমার কাছেও একই জবানবন্দি দেয় কিনা আমার ধারণা নেই, জেরার জবাবে বলেন ম্যাজিস্ট্রেট। ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রশ্ন করা হয়, সাক্ষী আবু সাত্তার মোল্লা ২০১৬ সালে পুলিশের কাছে সত্য জবানবন্দি দিয়েছিল, পরবর্তীতে আপনার কাছে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে কিনা! উত্তরে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন ধারণা নাই।

এদিকে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, তিনি পূর্বের তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে তদন্তভার পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু পূর্বের প্রস্তুতকৃত ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র, সূচির ব্যাখ্যার সাথে ঘটনাস্থলের মিল পাওয়ায় তিনি আর নতুনভাবে খসড়া মানচিত্র, সূচির ব্যাখ্যা প্রস্তুত করেন নাই। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারে গুপ্তচর নিয়োগ এবং জব্দকৃত মোটরসাইকেলের মালিকানা যাচাইয়ের চেষ্টা করেন। পাশাপাশি আসামিদের শনাক্ত করার জন্য আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং সন্দেহভাজন আসামির ছবি বিদেশ গমন রোধ করতে ইমিগ্রেশন বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। সাক্ষ্য শেষ হলে পুলিশ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন আসামি ওয়াসিম, শাহজাহান, খায়রুল ইসলাম কালুর আইনজীবীরা।

এ সময় তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ২৬ জুন ওয়াসিমকে আদালতে সোপর্দ করি। তাকে কালামিয়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করার সময় তার এক ছেলে সন্তানসহ স্ত্রীকে নিয়ে আসা হয় এবং দামপাড়া পুলিশ লাইন্স ট্রেনিং সেন্টারে ৯ দিন ধরে আটক রাখি, এ কথা সঠিক নয়। এও সঠিক নয় যে, তার স্ত্রী সন্তানকে মেরে ফেলব বলে এবং তাকে ক্রসফায়ার দেব বলে মারধর ও নির্যাতন করে দোষ স্বীকার করতে বলি।

২০১৬ সালের ১৭ জুন ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করি তা সত্য নয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ২০১৬ সালের ১৯ জুন বোয়ালখালীর শাকপুরা থেকে রাশেদ ও নুরনবীকে গ্রেপ্তার করি এ কথা সত্য নয়। রাশেদও ও নুর নবীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের দুজনকে দামপাড়া ট্রেনিং সেন্টারে ওয়াসিমের রুমে নেওয়া হয়েছিল এ কথা সত্য নয়। সত্য নয় যে, তারা দুজন ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করতে রাজী না হওয়ায় ক্রসফায়ারে মেরে ফেলি। আরো সত্য নয় যে, আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ারকে বলি দোষ স্বীকার না করলে রাশেদ ও নুর নবীর মতো হবে। অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ক্যাশব নাথ আজাদীকে বলেন, এ নিয়ে ৫২ জনের সাক্ষ্য রেকর্ড হয়েছে। আশা করছি, খুব শীগ্রই সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হবে।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র এক কর্মীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে স্ত্রী মিতুকে খুন করিয়েছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার নিজেই, এমনটা উল্লেখ করে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ২০৮৪ পৃষ্ঠার ডকেট ও ২০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক।

মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল ৬ বছর আগে যে মামলা করেছিলেন তাতেই তাকে প্রধান আসামি করে এই চার্জশিট দেয়া হয়। বাবুল ছাড়া চার্জশিটভুক্ত বাকি ৬ জন হলেন মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম মুসা ও মো. খায়রুল ইসলাম কালু। ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ও আ র নিজাম রোড এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মিতু।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions