পুলিশের গুলিতে পুলিশ হত্যা এখনো জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪
  • ৬৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- গত ৯ই জুন মধ্যরাতে রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোন পার্ক রোডের ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করেন তারই সহকর্মী কনস্টেবল কাওসার আলী। গুলিবিদ্ধ হন জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেনও। টরাস এসএমটি সাব-মেশিনগান দিয়ে সে রাতে মোট ৩৮ রাউন্ড গুলি চালান কাওসার। রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঘটনার তদন্তে ডিএমপি’র গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রিফাত শামীমকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় বেঁধে দেয়া হলেও গত ১৯ দিনেও জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন। আরও ১০ দিনের সময় চেয়েছেন তদন্ত কমিটি।

মনিরুল হত্যাকাণ্ডের ৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম অস্ত্র নিয়ে গার্ড রুমের বাইরে লাগোয়া ফুটপাথে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর কাওসার গার্ড রুমের ভেতর থেকে বাইরে আসেন। মনিরুল এ সময় কাওসারের কাছে আসেন এবং একটু দূরত্ব রেখে তার সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। এরপরেই কাওসার গার্ড রুমের ভেতরে ঢুকে যান এবং তখন গার্ডরুম লাগোয়া ফুটপাথে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন মনিরুল।

গার্ডরুমের থাই গ্লাস সরিয়ে কাওসারের সঙ্গে মনিরুলের আবার কথা হয়। এ সময় তাকে হাত নাড়াতে দেখা যায়। এ সময় মনিরুলের হাতে কাগজ সাদৃশ্য কিছু দেখা যায়। দুইজনের মধ্যে কথাবার্তার এক পর্যায়ে মনিরুল গার্ডরুমের আরও কাছে আসেন। এর কয়েক সেকেন্ড পরেই ভেতর থেকে গুলি শুরু করে কাওসার। সঙ্গে সঙ্গে মনিরুল ফুটপাথ থেকে রাস্তায় পড়ে যান এবং পরে আবার দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সময় না দিয়ে কাওসার বাইরে এসে মনিরুলকে লক্ষ্য করে আবারো এলোপাতাড়ি গুলি করে। এরপরেই মনিরুলের দেহ নিথর হয়ে যায়। মৃত্যু নিশ্চিত হলে মনিরুলের চাইনিজ রাইফেলটি নিয়ে ফুটপাথে উঠে পাশের দেয়ালে আঘাত করেন কাওসার। কিছুক্ষণ ওই অস্ত্রটি ফুটপাথে রেখে নিজের অস্ত্র নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে ঘাড়ে নেন কাওসার। পরে ফুটপাথে দাঁড়িয়েই কাছাকাছি এসে লাশের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন। এরপর কাওসার নিচে ঝুঁকে মনিরুলের কাছ থেকে কিছু একটি কুড়িয়ে হাতে নেন এবং রাস্তা থেকে ফুটপাথে উঠে পুলিশ বক্সের সামনে গিয়ে দাঁড়ান।
এ সময় ওই পথ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন। মনিরুলের মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে তিনি এগিয়ে দেখতে যান। সে সময় কাওসার তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। আহত হয়ে সাজ্জাদ বেশ কিছুদূর গিয়ে পুলিশের একটি গাড়ির সামনে পড়ে যান। জীবন বাঁচলেও ৩ রাউন্ড গুলি লাগে সাজ্জাদের শরীরে। সাজ্জাদকে গুলি করার মধ্যেই কাওসারের বন্দুকে গুলি আটকে যায়। এরপরেই তিনি অস্ত্র ফুটপাথে রেখে সিগারেট ধরান এবং অস্ত্র থেকে একটু দূরে সরে যান। তখন পেছন থেকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে জাপটে ধরে হেফাজতে নেন। সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় গুলশান থানায়। ঘটনার কারণ জানতে কাওসারকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি।
সেই তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে কমিটির ?প্রধান ডিএমপি’র গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রিফাত শামীম বলেন, ইতমধ্যে অভিযুক্ত কনস্টেবল কাওসার আলীর ৭ দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমাদের তদন্তের কাজও শেষের পথে। আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কাজ করছি। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে দেয়া হবে। ডিএমপি কমিশনার আরও ১০ কর্মদিবস সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, কনস্টেবল মনিরুল হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট এখনো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই এই ঘটনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমাদের কাছে জমা হবে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরই এ ঘটনার বিস্তারিত বলা যাবে। এদিকে ওই ঘটনার পর অভিযুক্ত কাওসারের পরিবার দাবি- মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন কনস্টেবল কাওসার। তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমীন দাবি করেছেন, রাঙ্গামাটির বরকলে চাকরি করার সময় তিনি মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এরপর বিভিন্ন সময় সরকারিভাবেই তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে অন্তত তিনবার চিকিৎসা করানো হয়েছিল। নিয়মিত ওষুধও সেবন করতেন। ঘটনার আগে কিছুদিন ধরে কাওসার খুবই কম কথা বলতেন।

উল্লেখ্য, ঘটনার পর নিহত মনিরুল হকের বড়ভাই পুলিশ কনস্টেবল মো. মাহাবুবুল হক (৪০) বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, নিহত মনিরুল হকের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া থানায়। ২০১৮ সালে মনিরুল পুলিশে যোগদান করেন। আর কাওসার আলী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়াত আলীর ছেলে। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে কনস্টেবল পদে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions