ডেস্ক রির্পোট:- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আজ মুখর হবে আরাফাতের ময়দান। গাজা যুদ্ধের ভয়াবহ পটভূমি এবং কষ্টকর গ্রীষ্মের উত্তাপের মাঝেই হাজিরা হজ শুরু করবেন।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে মুসল্লিরা আল্লাহর দুয়ারে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেবেন। হাজীগণ ইহরাম বাঁধা অবস্থায় আরাফাত ময়দানে এসে অবস্থান গ্রহণ করবেন। এই আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। লাখো মানুষের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এই ভাষণের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছিল দ্বীনের পরিপূর্ণতা লাভের। আজো সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভাষণ দেয়া হয়। ভাষণে বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। আর হাজীগণ এক আবেগঘন পরিবেশে মহান আল্লাহর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেয়ার মন–মানসিকতা নিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকেন। তারা নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, নিজের পরিবার পরিজন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সুখ শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। এদের অনেকেই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আট মাস ধরে চলা যুদ্ধের ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেন। মরক্কোর ৭৫ বছর বয়সী জাহরা বেনিজাহরা কান্না বিজড়িত কণ্ঠে সংবাদমাধ্যমকে জানান, ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইয়েরা মারা যাচ্ছেন এবং আমরা আমাদের নিজের চোখে তা দেখতে পাচ্ছি। এদিকে এ বছর হজের সময় হাজীরা গড়ে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস উচ্চ তাপমাত্রার মুখোমুখি হতে পারে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। গত বছরের হজের সময় দেশটিতে তীব্র গরমের কারণে অনেক হাজী সমস্যায় পরেছিলেন।
আজ ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করার পর আরাফাতের ময়দানে হাজীগণ অবস্থান করবেন। এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকবেন। সূর্যাস্তের পর মুযদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুযদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন। সারারাত অবস্থান করবেন সেখানে। মুসলমানদের অতি পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করবেন, হজের খুতবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন। জিকির–আসকারে মশগুল থাকবেন। ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা দেওয়া হবে। সৌদি আরব সরকার এবার হজের খুতবার জন্য নতুন খতিব বাছাই করেছেন। এ বছর পবিত্র হজের খুতবা দেবেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ ড. মাহের আল মুয়াইকিলি। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ সমপ্রতি এক রাজকীয় ফরমানে শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলিকে আরাফাতের দিন খুতবা দেওয়ার অনুমতি দেন।
এদিকে বাংলাসহ এবারই প্রথম বিশ্বের ৫০টি ভাষায় অনুবাদ করা হবে পবিত্র হজের খুতবা। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তের মানুষের কাছে হজ ও ইসলামের শান্তির বার্তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সৌদি আরবের মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগ জানিয়েছে, এ বছর আরাফাতের ময়দান থেকে প্রচারিত হজের খুতবার অনুবাদ প্রচারিত হবে বিশ্বের ৫০টি ভাষায়। বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের তত্ত্বাবধায়নে এটিই এখন পর্যন্ত হজের খুতবা অনুবাদের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় সহনশীলতা, সংযম ও শান্তির বার্তা তুলে ধরতে চায় সৌদি আরব। যাতে ইসলামের প্রকৃত চিত্র এবং এর উচ্চমূল্যবোধ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। হজের খুতবা স্মার্ট ফোন, হারামাইন শরিফাইনের ওয়েবসাইট, মানারাতে হারামাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে শোনা যাবে।