ডেস্ক রির্পোট:- বেনজীরপুলিশ টেলিকমের অধীনে গত আট বছরে ৪২ বার যন্ত্রাংশ কেনাকাটা হয়েছে। প্রতিবারই এতে ঘুরেফিরে অংশ নিয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। ৪১ বার কাজ পেয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের মদদপুষ্ট ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেলোয়ারের তিন ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ প্রতিষ্ঠান পুলিশ টেলিকমে সরবরাহ করেছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার পণ্য।
মানহীন যন্ত্রাংশ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক শ কোটি টাকা।
অনুসন্ধান বলছে, পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন পুলিশ টেলিকমে দেলোয়ারের উত্থান ২০১৫ সালে। পুলিশ, র্যাবসহ নিরাপত্তা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন ‘রাঘব বোয়াল’। সে বছর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে বেনজীর একের পর এক কাজ পাইয়ে দেন দেলোয়ারকে।
পাঁচ বছর পর ২০২০ সালে বেনজীর আইজিপি হলে একচ্ছত্রভাবে পুলিশ টেলিকমের সব কাজই বাগিয়ে নেন এই ঠিকাদার। এতে পুলিশ টেলিকমের এসপি (লজিস্টিকস) আনোয়ার জাহিদেরও জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসছে।
এই সিন্ডিকেটের দুর্নীতির ছোবল সবচেয়ে বেশি পড়েছে সীমলেস ওয়্যারলেস বা ওয়াকিটকির ওপর। পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর নিত্যব্যবহার্য যন্ত্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে ভয়াবহ জালিয়াতির তথ্য মিলছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নথিতে সর্বশেষ আট বছরে আমদানি করা ওয়াকিটকি সেটগুলো মটরোলা সলিউশনের উল্লেখ করা হলেও সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। অথচ এই মানহীন সেটগুলোর দামই দেখানো হয় বাজারমূল্যের তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে মটরোলার ওয়াকিটকি সেটের মূল্য আনুমানিক ৪০০ ডলার। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি এসব যন্ত্রাংশ কেনার নিয়মও মানা হয়নি। সূত্রের দাবি, এসব নকল পণ্য কেনা হয়েছে খোলাবাজার থেকে।
তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিম্নমানের ওয়াকিটকির ফ্রিকোয়েন্স হ্যাক করা খুবই সাধারণ ব্যাপার। এর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকে বিনিময়কৃত তথ্য খুব সহজেই ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতি সম্প্রতি দেশে পুলিশের ওয়াকিটকির তথ্য ফাঁস হওয়ার নজিরও রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব পণ্য কেনাকাটায় অ্যানুয়াল প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান বা এপিপি বাজেটের চেয়েও বেশি দাম দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে হাইটেরা কমিউনিকেশনস করপোরেশন লিমিটেডের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়। গত সপ্তাহে পুলিশ টেলিকমের টেন্ডারবিষয়ক সব নথি চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত আট বছরে রেডিও যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় ৬০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয় করেছে পুলিশ টেলিকম। যদিও এই যন্ত্রাংশ কেনাকাটার প্রবণতা হঠাৎ করে বেড়ে যেতে শুরু করে ২০২১ সালে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০ সালে সব মিলিয়ে ১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ কেনাকাটা করে পুলিশ টেলিকম। কিন্তু পরের বছর তা পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে এক লাফে উঠে যায় ৯৮ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। হঠাৎ কেন যন্ত্রাংশের চাহিদা এতটা বেড়ে যায়, এর নেপথ্যে যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদকে রংপুর মেট্রোপলিটনে বদলি করেন তৎকালীন আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এর ঠিক পাঁচ মাস পর পদোন্নতি দিয়ে পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় পুলিশ টেলিকমে নিয়ে আসেন আনোয়ার জাহিদকে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে নতুন দায়িত্ব পালন শুরু করেন তিনি। পুলিশ টেলিকমের সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ঠিকাদার দেলোয়ারকে অবৈধভাবে সুবিধা দিতে আনোয়ার জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে নিজের সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন বেনজীর।
আট বছর ধরে ঘুরেফিরে তিন প্রতিষ্ঠান
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেনের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের একটি সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট রয়েছে। এখানে ঢু মেরে দেখা গেল, বাংলাদেশ পুলিশ, এনএসআই, এসএসএফ, র্যাবসহ ২২টি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় তারা পরিষেবা দিয়ে থাকে। এ পর্যন্ত ৬৩টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছে বলেও ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বলা হয়েছে, বাড়ি নম্বর ১২৪৭, সড়ক নম্বর ১০, মিরপুর ডিওএইচএস। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্সে ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ১০৬/২ বারনটেক, ঢাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ টেলিকমের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনার কাজে যে টেন্ডার প্রদান করা হয় তার প্রায় সবটাতেই অংশ নিয়েছে মেসার্স পার্ল এভিওনিক্স টেকনোলজি, এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেড এবং মেসার্স এআরবি ট্রেডার্স। তবে অবাক করা বিষয় হলো, তিনটি প্রতিষ্ঠানই কোনো না কোনোভাবে দেলোয়ার হোসেনের নিয়ন্ত্রণাধীন। পার্ল এভিওনিক্স টেকনোলজি ও এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের মালিক দেলোয়ার হোসেন নিজেই। আর অন্যটি তাঁর সন্তান মো. খালেদ হোসেনের। তবে তিনটি প্রতিষ্ঠান একই ঠিকানা ব্যবহার করেছে।
২০২১ সালের পর থেকে পুলিশ টেলিকমের টেন্ডারের এই তিনটির বাইরে অন্য কেউ অংশ নিতেই পারেনি। আর এখান থেকে যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ টেলিকমে দেলোয়ারের মালিকানাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পেয়েছে মোট ৪১ বার। ভুঁইফোড় ওই কম্পানিগুলোর আড়ালে বেনজীরসহ পুলিশ টেলিকমে তাঁর নিযুক্ত কর্মকর্তারা জড়িত থাকলেও সামনে থাকেন দেলোয়ার হোসেন।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এ পর্যন্ত দেলোয়ারের প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ কোটি ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ ডলার বা ৬০০ কোটির বেশি টাকার যন্ত্রাংশ কেনাকাটা করেছে।
নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মটরোলা ওয়্যারলেসের মতো অন্যান্য রেডিওসংক্রান্ত যন্ত্রাংশের দামও দেখানো হয় অস্বাভাবিক। অনুসন্ধানে জানা যায়, রেডিও যন্ত্রাংশের মূল প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে দেলোয়ার হোসেন মালয়েশিয়ার একটি ভুঁইফোড় ডিলারের কাছ থেকে এসব যন্ত্রাংশ আমদানি করেছেন। যদিও মূল কম্পানি আমেরিকা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মটরোলার মালয়েশিয়ায় কোনো ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানাই নেই।
এ ক্ষেত্রে জালিয়াতি ঢাকতে সিঙ্গাপুরের টেকনিক্স কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস পিটিআই লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে সামনে এনেছেন চতুর দেলোয়ার। পুলিশ টেলিকমকে দেলোয়ার হোসেনের প্রতিষ্ঠান এমডিএম সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের সহযোগী হিসেবে দেখিয়েছেন। ফলে দেখা যায়, যে মানের ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও যন্ত্রাংশ আমদানি করার কথা, মালয়েশিয়ার লোকাল মার্কেট থেকে তার চেয়েও নিম্নমানের নকল পণ্য আমদানি করা হয়েছে।
এদিকে জানা যায়, চলতি বছরে পুলিশের ‘রেডিও ডিভাইস’ কেনার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া একটি আবেদনের বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই আবেদনে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২ আগস্ট পুলিশ টেলিকম সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশের রেডিও ডিভাইস ও যন্ত্রাংশ কেনার জন্য দুটি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে। এতে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—সিঙ্গাপুরের টেকনিক্স কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস পিটিই লিমিটেড, চীনের হাইটেরা কমিউনিকেশনস করপোরেশন লিমিটেড ও চীনের কালটা টেকনোলজিস কম্পানি লিমিটেড। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণ করতে না পারায় শুধু হাইটেরা কমিউনিকেশনস টিকে থাকে। এরপর পরবর্তী প্রক্রিয়া শেষ করতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগার কথা থাকলেও ৭০ থেকে ৭৫ দিনেও দরপত্র নিষ্পত্তি করা হয়নি।
পরবর্তী সময়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শর্ত পূরণ করতে পারেনি এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে রি-টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়ম তুলে ধরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আরজি জানিয়ে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করে হাইটেরা কমিউনিকেশনস করপোরেশন লিমিটেড। তবে দীর্ঘদিনেও সেটি নিষ্পত্তি না করায় পরে কম্পানিটি হাইকোর্টে রিট করে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হাইটেরা কমিউনিকেশনসের চিঠিতে বলা হয়, পুলিশ টেলিকম সংস্থার একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী ‘সিঙ্গাপুরের টেকনিক্স কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস পিটিই লিমিটেডের’ স্থানীয় প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের যোগসাজশে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মানহীন রেডিও ডিভাইস সরবরাহ করে আসছে।
এদিকে টেন্ডার নিয়ে আগের জটিলতা নিরসনে হাইকোর্টের কড়া নির্দেশ থাকলেও দেলোয়ারকে কাজ পাইয়ে দিতে নিয়ম অমান্য করে পুলিশ টেলিকমের সেই অসাধু কর্মকর্তারা আহবান করেছেন নতুন দরপত্র। সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের নেপথ্যে কিছু অসাধু কর্মকর্তা রয়েছেন। সম্প্রতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাদের সরবরাহ করা মালপত্রের গুণগত মানও নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে রেডিও ডিভাইস এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।
পিঠ বাঁচাতে দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হস্তান্তর
যৌথমূলধনী কম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে নিবন্ধিত তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নথি কালের কণ্ঠ’র হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের নিবন্ধন হয় ২০১৫ সালের ১১ মে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে দেলোয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এটি দেলোয়ারের মূল প্রতিষ্ঠান, যা ২০১৫ সাল থেকে একচ্ছত্রভাবে পুলিশ টেলিকমের কাজ পেয়ে আসছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেনজীরের অপকর্ম প্রকাশ হলে নিজের পিঠ বাঁচাতে তড়িঘড়ি করে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের সম্পৃক্ততা মুছে ফেলার চেষ্টা করেন। তবে এখানেও জালিয়াতির আশ্রয় নেন দেলোয়ার। তাঁর ছেলে খালিদ হোসেন মেসার্স এ আরবি ট্রেডার্সের মালিকানার ৫০ শতাংশের অংশীদার। বাকি ৫০ শতাংশের মালিক মনিরুল ইসলাম। তাঁদের এই যৌথ প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। চলতি বছরের ১৫ মে গেজেটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ২০২১ সালের ২ মার্চ নিজের ৫০ শতাংশ শেয়ার আসমা-উল-হুসনার কাছে হস্তান্তর করেন খালিদ। এই আসমা হলেন মনিরুলের মেয়ে।
অন্য প্রতিষ্ঠান পার্ল এভিওনিক্স টেকনোলজিতেও দেলোয়ারের মালিকানার প্রমাণ মেলে যৌথমূলধনী কম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে পাওয়া নথিতে। এতে দেখা যায়, ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ছয়জন অংশীদারের মধ্যে দুই নম্বরে দেলোয়ার এবং ছয় নম্বরে তাঁর ছেলে খালিদের নাম। তাঁরা দুজন সমান সাড়ে ১২ শতাংশ করে ২৫ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার। এ প্রতিষ্ঠান থেকেও কৌশলে নিজেদের নাম সরিয়ে দেন দেলোয়ার। গত ১৫ মে এসংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়।
তবে সূত্র জানিয়েছে, পিঠ বাঁচাতে মালিকানা হস্তান্তর করলেও আদতে দেলোয়ারের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। ২০১৫ সাল থেকেই তিনটি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে পুলিশ টেলিকমের দরপত্রে অংশগ্রহণ করে আসছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে টেন্ডারে অংশ নিত। পরে আনোয়ার জাহিদ পুলিশ টেলিকমে নিযুক্ত হওয়ার আগাম সংবাদ পেয়ে ২০২০ সালে পর্যায়ক্রমে দুটি প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন করেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিয়মের বাইরে গিয়ে টেন্ডার পাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে পার্ল এভিওনিক্স টেকনোলজি এবং এআরবি ট্রেডার্স নামের কোনো প্রতিষ্ঠানকে তিনি চেনেন না বলেও দাবি করেন। তবে পুলিশ টেলিকমে রেডিও যন্ত্রাংশ কেনাকাটার টেন্ডার টানা ৯ বছর ধরে শুধু তাঁর প্রতিষ্ঠান কিভাবে পাচ্ছে—এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি। এ বিষয়ে পুলিশ টেলিকমকে জিজ্ঞাসা করতে বলেন তিনি। একই সঙ্গে বেনজীর আহমেদের সঙ্গে তাঁর কোনো পরিচয় নেই বলেও দাবি করেন দেলোয়ার।
পুলিশ টেলিকমের পাশাপাশি ডিজিএফআই, এনএসআই এবং এসএসএফে লোকাল এজেন্ট হিসেবে রেডিও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করছেন জানিয়ে দেলোয়ার জানান, সেই সূত্র ধরে পুলিশ টেলিকমের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনাকাটার দায়িত্বে থাকা এসপি আনোয়ার জাহিদসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে।কালের কন্ঠ