ক্রীড়া ডেস্ক:- ‘বিশ্বাসই হচ্ছে না, এই মাহমুদুল্লাহকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবছিল বাংলাদেশ।’ কথাটি ভারতের বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার হার্ষা ভোগলের। যিনি বাংলাদেশের একজন সমর্থক। ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারানোর অবিশ্বাস্য ম্যাচে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। শুরুতে মুস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ কার্যকরী বোলিং করেন। বোলারদের পারফরম্যান্সকে জয়ের ধারায় নিয়ে যান লিটন দাস, তৌহিদ হৃদয় ও মাহমুদুল্লাহ। লিটন ও তৌহিদ জুটি দলের জয়ের ভীত গড়েন। মাহমুদুল্লাহ ম্যাচ ফিনিশ করেন ছোট্ট একটি ক্যামিও ইনিংস খেলে। ৩৯ বছর বয়স্ক মাহমুদুল্লাহর ইনিংসটির পরপরই ভোগলের এমন মন্তব্য। কার্যকরী ইনিংসের ম্যাচ জেতানোর পর কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে মাঠে জড়িয়ে ধরেন সাবেক অধিনায়ককে। আকাশসমান চাপ সামলে ম্যাচটি জেতার পর বাংলাদেশের অধিনায়কের এখন নতুন টার্গেট দক্ষিণ আফ্রিকা। আগামীকাল নিউইয়র্কের নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দেশটির। গতকাল ৬ বল হাতে রেখে ম্যাচ জেতার পর মিডিয়ার মুখোমুখিতে টাইগার অধিনায়ক স্বীকার করেছেন চাপের কথা, ‘আমার মনে হয়েছে চাপের কথা। দুই দিন আগে থেকে সবাই এটা জানতাম। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, এমন চাপের ম্যাচ এর আগে খেলিনি। আল্লাহর অশেষ রহমত, আলহামদুলিল্লাহ ম্যাচটি জিততে পেরেছি।’
টার্গেট মাত্র ১২৫। ওভারপ্রতি ৬.৫। টি-২০ ক্রিকেটে যা একেবারেই মামুলি টার্গেট। অথচ সেই টার্গেট টপকাতে ঘাম ঝড়েছে। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামের উইকেটে রান তোলা সহজ নয়। টস হেরে ব্যাটিংয়ে ৯ উইকেটে ১২৪ রান করে শ্রীলঙ্কা। পাহাড়সমান চাপে থেকে টাইগার বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করেন। কার্যকরী বোলিং করেন তিন পেসার তাসকিন, তানজিম ও মুস্তাফিজ। প্রতিপক্ষের ৯ উইকেটের ৬টিই নিয়েছেন তিন পেসার। স্ট্রাইক বোলিং করেন তানজিম। ৪ ওভারে ২৪ রানে নেন ১ উইকেট। ইনজুরি কাটিয়ে খেলেই দুর্দান্ত গতিতে বোলিং করেন তাসকিন। টাইগার সহঅধিনায়কের বোলিং স্পেল ৪-০-২৫-২। আইপিএল খেলে আসা মুস্তাফিজ অসাধারণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। বাঁ-হাতি পেসার ৪ ওভারের স্পেলে ১৪টি ডট নেন। বাউন্ডারি খেয়েছেন মাত্র ২টি। ১৭ রানের খরচে নেন ৩ উইকেট। তাকে যোগ্য সহযোগিতা করেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলছেন রিশাদ। প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত। ম্যাচসেরা হয়েছেন। তার স্পেল ৪-০-২২-৩। ম্যাচ শেষে রিশাদের প্রশংসা করেন টাইগার অধিনায়ক, ‘অসাধারণ বোলিং করেছে রিশাদ। গত কয়েকটা সিরিজেই সে ভালো বল করছে। অনুশীলনে দারুণ মনোযোগী এবং তার প্রস্তুতিও খুব ভালো। আমাদের একজন লেগ স্পিনার না থাকার হতাশা ছিল। সে জায়গা পূরণ হয়েছে। আশা করব সামনের ম্যাচগুলোতেও ধারাবাহিক থাকবে।’ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ২ পয়েন্ট পেয়েছে নাজমুল বাহিনী। এখন সুপার এইটের স্বপ্ন দেখছে। স্বল্প টার্গেটের ম্যাচটি কঠিন করে স্বস্তির জয় পেয়েছে। ব্যর্থ দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও সৌম্য সরকার। লিটন রান করেন ৩৮ বলে ৩৬। তৌহিদ হৃদয় ২০ বলে ৪ ছক্কায় ৪০। ১২তম ওভারে হাসারাঙ্গাকে টানা তিন ছক্কা মারেন তরুণ তৌহিদ। শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহ ১১ বলে ১ ছক্কায় ১৬ রানের ছোট্ট ক্যামিও ইনিংস খেলেন। দলের ব্যাটিং নিয়ে সন্তুষ্ট নন বলেন টাইগার অধিনায়ক, ‘বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে সবাই ভালো করেছে। ব্যাটিংটা অবশ্য ভালো হয়নি। এ ধরনের চাপের ম্যাচে এমনটা হয়। শ্রীলঙ্কার জন্য ম্যাচটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওরা অনেক চেষ্টা করেছে। দিনশেষে আমরা ২ পয়েন্ট পেয়েছি, ভালো লাগছে।’
সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, এ জয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরের তিন ম্যাচও খুব গুরুত্বপূর্ণ।।’ আগামীকাল দক্ষিণ আফ্রিকার মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। জিতলে সুপার এইট প্রায় নিশ্চিত। এখন ম্যাচটি নিয়ে ভাবছেন টাইগার অধিনায়ক, ‘পরের ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সেই ম্যাচের জন্য নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। আসলে ভালো ক্রিকেট খেলার বিকল্প নেই। ব্যাটাররা যদি অবদান রাখতে পারি, তাহলে পরের ম্যাচেও ভালো কিছু করতে পারব।’
পরের ম্যাচ নিউইয়র্কের নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে। খেলা হবে ‘ড্রপ ইন’ উইকেটে। উইকেট নিয়ে চিন্তিত টাইগার অধিনায়ক, ‘নিউইয়র্কের উইকেট নিয়ে বলব, টিভিতে আমরা খেলা দেখেছি। শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের দিন অনুশীলন করিনি। সবাই একসঙ্গে বসে ম্যাচ দেখেছি এবং পরিকল্পনা করেছি কীভাবে খেলা উচিত। তারপর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখার সুযোগ হবে। কিছু ধারণা তো পেয়েছি। কিন্তু ম্যাচের দিন উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে আমাদের ব্যাটিং ও বোলিং করতে হবে।’