ডেস্ক রির্পোট:- র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ‘ইচ্ছার’ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে, তা ‘ভুয়া দাবি’ হিসাবে উড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। গত বৃহস্পতিবারের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না। এই দাবিগুলো মিথ্যা। নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হল আচরণের পরিবর্তন এবং জবাবদিহিতাকে উৎসাহিত করা।
‘গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের’ অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা ওঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।
বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে দুদেশের মধ্যে টানাপোড়েন পেছনে ফেলে ‘সামনে তাকানোর’ আহ্বান নিয়ে ১৪-১৬ মে ঢাকা সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু। সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন আলোচনায় এলিট ফোর্স র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
সফরের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের গুলশানের বাসায় নৈশভোজে যোগ দেন ডনাল্ড লু। দেড় ঘণ্টার বেশি সময়ের ওই নৈশভোজে সরকারের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও যোগ দেন।
নৈশভোজ শেষ করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ‘অনানুষ্ঠানিক আলোচনার’ বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলা হয়, র্যাবের নিষেধাজ্ঞার সাথে সাথে আমাদের বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর কথাটাও আমরা বলেছি, তাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে। সে (লু) সেখানে বলছে যে, দুটা ইস্যু- র্যাব এবং রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়টা- তাদের বিচার বিভাগে এটা আছে। বলেছে, এখানে কিন্তু আমাদের বিচার বিভাগ, আমাদের হোয়াইট হাউজ, পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে স্বাধীন। স্বাধীনভাবে কাজ করে বিচার বিভাগ। তো, তারা বলেছে, আমরা এটা পুশ করতেছি। বলেছে যে, পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে আমরা পূর্ণ সমর্থন এখন দিচ্ছি।
ডনাল্ড লুর আগের সফরে র্যাবের উন্নতির প্রশংসা করার কথা তুলে ধরে আরো বলা হয়, র্যাব অনেক উন্নতি করেছে সেটা গতবারই জনসম্মুখে বলেছে। তো, পররাষ্ট্র দপ্তরের কথাটা হল- ‘আমরা আমাদের তরফ থেকে বলেছি যে, উন্নতি হয়ে গেছে, এখন তোমাদেরকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া উচিত। হোয়াইট হাউজ থেকেও বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিচার বিভাগের একটা প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ চলছে।’ সে (লু) আশাবাদী যে, এটা হবে।
এর পরদিন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন ডনাল্ড লু।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে গত বছরের ‘উত্তেজনা’ পেছনে ফেলে সামনে ‘তাকানোর’ কথা বললেও র্যাবের নিষেধাজ্ঞাকে দুদেশের মধ্যে ‘কঠিন বিষয়’ হিসাবে তুলে ধরেন।
ডনাল্ড লু ঢাকা ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গত বৃহস্পতিবারের ‘র্যাব ইস্যুতে বাংলাদেশের বক্তব্য’ নিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলের কাছে জানতে চান এক সাংবাদিক। প্রশ্নকারী বলেন, সফররত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, হোয়াইট হাউজ এবং পররাষ্ট্র দপ্তর খুব করে চাচ্ছে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হোক, যেটা যুক্তরাষ্ট্র আরোপ করেছিল গুরুতর মানবাধিকার লংঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের জন্য। তিনি বলেছেন পররাষ্ট্র দপ্তর ও হোয়াইট হাউজ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কাজ করছে?
সাংবাদিকের প্রশ্ন শেষ করার আগেই পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপ-মুখপাত্র বলেন, কথিত বক্তব্য ‘ভুয়া’। নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হল আচরণের পরিবর্তন এবং জবাবদিহিতাকে উৎসাহিত করা।