রাঙ্গামাটি:- ২০২৩–২৪ মৌসুমে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের চারটি বিপণনকেন্দ্রে ৭ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ করা হয়েছে। এই মাছের বিপরীতে ১৫ কোটি ৫৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা শুল্ক আদায় করেছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। ২০১৯–২০ মৌসুমে ১৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা শুল্ক আদায়ের পরবর্তী তিন মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের মাছে শুল্ক আদায় কমেছিল বিএফডিসির। টানা তিন মৌসুম শুল্কহার আদায় নিম্নমুখিতার পর এবার রেকর্ড করে প্রতিষ্ঠানটি।
এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনগত সংকট থাকলেও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মাছ পাচারের ফলে প্রতিষ্ঠানটির অবতরণ রেকর্ডে গরমিল ছিল। কাগজে–কলমে হ্রদের মাছের উৎপাদনে ভাটা পড়লেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। সাম্প্রতিকসময়ে বিএফডিসির মাছ বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় ‘কড়াকড়ির’ ফলে কিছুটা শৃঙ্খলা এসেছে। এতে করে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মাছের উৎপাদন ও শুল্কহার আদায় দুটোই বেড়েছে।
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ও কাউখালী ছাড়া বাকি আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এবং মহালছড়ি উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদ। ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর আয়তনের কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য চাষের দায়িত্বে নিয়োজিত কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্র। বিপণনকেন্দ্রটির সর্বশেষ তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে অবতরণকৃত ৭ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন মাছ পাওয়া গেছে চারটি বিপণনকেন্দ্রে। এরমধ্যে রাঙামাটির প্রধান বিপণনকেন্দ্রে ৪ হাজার ৪৭৫ টন, কাপ্তাই উপকেন্দ্রে ২ হাজার ৩৭৭ টন, মহালছড়িতে ৪৯৫ টন ও মারিশ্যা উপকেন্দ্রে ২৭৮ টন।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের মাছের প্রজাতিভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে হ্রদে চাপিলা, কাঁচকি, কাজুনি, মলা, বাতাসি, শোল, কই, বোয়াল মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। চিতল, তেলাপিয়া, কালো টেংরা, গুলশা, বড় আইড়, গজার, ছোট আইড় মাছের উৎপাদন আগের চেয়ে বেড়েছে। রুই, কাতলা, মৃগেল, বাটা, কালিবাউস, পাবদা, বাইম মাছের উৎপাদন কমেছে। যে সব প্রজাতির মাছের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে; সেগুলোর কারণ অনুসন্ধানপূর্বক উৎপাদন বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে প্রতিষ্ঠানটি।
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘শুল্ক আদায়ে আরও স্বচ্ছতা আনয়ন, ও বিভিন্ন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের যথাযথ অনুমোদন পেলে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। আমরা আশা করছি, কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য ব্যবস্থাপনার উন্নতিকল্পে ইতোমধ্যে গ্রহণ করা পদক্ষেপ সমূহের ফলাফল অচিরেই দৃশ্যমান হবে।’
প্রসঙ্গত, প্রতি বছরের তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এ সময়টাতে হ্রদের মাছ বাজারজাতসহ স্থানীয় বরফকলগুলোও বন্ধ থাকে। ধারাবাহিক নিয়মানুসারে, প্রত্যেক বছরের পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হ্রদের পানি অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত কমার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ করা হচ্ছে মাছ ধরা। গত মৌসুমেও নির্ধারিত সময়ের ১২দিন আগেই বন্ধ করা হয় মাছ শিকার। আবার তিনমাসের নির্ধারিত সময়ে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় দুই দফায় আরও ১ মাস ১২দিন বন্ধের সময় বর্ধিত করা হয়। ৪ মাস ১২ দিন মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কাপ্তাই হ্রদে ফের মাছ আহরণ শুরু হয়। এবারও নির্ধারিত সময়ের ছয়দিন আগেই মাছ শিকার বন্ধ হয়েছে। এ মৌসুমে মাছ শিকার বন্ধকালীন হ্রদে ৫৫ মেট্রিক টন কার্পজাতীয় মাছের পোনা ছাড়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বিএফডিসির।আজাদী