শিরোনাম
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বজ্রপাতে একই পরিবারের ৪ জনসহ আহত ৬ বান্দরবানে কেএনএফ’র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বম জনগোষ্ঠীর মানববন্ধন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র ১২টি সম্পদের পাহাড় প্রার্থীদের ৩০ ছাত্রকে যৌন নিপীড়ন করে মোবাইলে ভিডিও ধারণ শিক্ষকের মোদিজি ভারতকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বানাতে চান: অরবিন্দ কেজরিওয়াল যেসব খবর আসছে তাতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন: ইরানি কর্মকর্তা ‘অটোরিকশা নিষিদ্ধ করার আগে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন’ ইরানের প্রেসিডেন্টের দুর্ঘটনাস্থল থেকে মিলল সংকেত উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ১১৬ কোটিপতি প্রার্থী: টিআইবি

রেকর্ড দাবদাহে ওষুধের মান নষ্টের শঙ্কা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৩০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়ছে গোটা দেশ। হাঁসফাঁস করছে জনজীবন। এ অবস্থায় রেকর্ড দাবদাহে নির্দেশিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না ফার্মেসিগুলোর জীবনরক্ষাকারী ওষুধ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, ইনসুলিন, টিকা, অয়েন্টমেন্ট, জেল, ফুড সাপ্লিমেন্ট, ডায়াগনোসিস কিট, ব্লাড প্রডাক্ট ও রি-এজেন্টের মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী। অসহনীয় তাপপ্রবাহে কমে যাচ্ছে ওষুধের গুণগতমান।
ঔষধ প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে নিবন্ধিত ফার্মেসির সংখ্যা ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৫টি। এর বাইরেও প্রায় সম-পরিমাণ ফার্মেসি রয়েছে। নামে-বেনামে গড়ে ওঠা ওষুধের দোকানগুলোর নেই কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। তবে ফার্মেসি মালিকদের দাবি, গরমে ঠিক থাকছে ওষুধের গুণগতমান।

শুক্রবার আবহওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে এপ্রিলের টানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বইছে। দিন যত যাচ্ছে তাপপ্রবাহের তীব্রতা ততই আগের দিনের মাত্রা ছাড়িয়েছে যাচ্ছে। টানা এতদিনের তাপপ্রবাহ আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দেশের গত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপপ্রবাহ। যা এপ্রিলের দীর্ঘ ব্যপ্তিকাল বলছে আবহাওয়া অফিস।

ওষুধ প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, প্রায় ৯০ শতাংশ ওষুধের মোড়কের গায়ে ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে। অথচ দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে প্রায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। দেশে দুই-তৃতীয়াংশ ওষুধের দোকানে নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। সংবেদনশীল ওষুধ পণ্যে তাপমাত্রার কিছুটা হেরফের হলেই নষ্ট হয়ে যায় কার্যকারিতা। ওষুধের গুণগতমান কমে যাওয়ায় ভুক্তভোগী হচ্ছেন রোগীরা। ওষুধের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সরকার সারা দেশে মডেল ফার্মেসি চালু করলেও নজরদারি নেই ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। নিয়মনীতি না মানায় কার্যকারিতা হারাতে বসেছে মডেল ফার্মেসিগুলো।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে রাজধানীর একাধিক এলাকায় মডেল ফার্মেসিতে নেই মডেলের ছিটেফোঁটা। অনেক ফার্মেসিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তো দূরের কথা, কখনই এসি লাগানো হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। হিমাঙ্কের নিচে তাপত্রামায় সংরক্ষণ জরুরি ওষুধও রাখা হচ্ছে সাধারণভাবে। একইভাবে জেলা-উপজেলার সরকারি হাসপাতালের মেডিসিন স্টোর রুম ছাড়াও ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে ওঠা ফার্মেসিগুলো ওষুধ সংরক্ষণে নিয়মের বালাই মানছে না। ক্যাটাগরি অনুযায়ী সনদধারী ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না।

ওষুধ প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, সাধারণত তিন ধরনের ওষুধ নির্ধারিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণের নিয়ম। বায়োলজিক্যাল বা ভ্যাকসিন-জাতীয় ওষুধ ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। অ্যান্টিবায়োটিক-জাতীয় ওষুধ রাখতে হয় ১২ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। কিছু ওষুধ স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা যায়। এর ব্যতিক্রম হলেই সমস্যা।

ওষুধ সংরক্ষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ওষুধ নীতিমালায় সংরক্ষণ কক্ষের আর্দ্রতা ৬০ শতাংশের নিচে রাখার কথা বলা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে সংরক্ষণ কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র থাকার কথাও বলা হয়েছে। কক্ষের আয়তন ভেদে এক বা একাধিক রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার রাখতে হবে। এ থেকে উৎপাদিত তাপ বের করে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে একাধিক এগজস্ট ফ্যানের। বিশেষ করে সেফরাডিন এবং ভিটামিন-জাতীয় ওষুধ ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে হয়।

ডব্লিউএইচওর নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওষুধ সংরক্ষণ ও পরিবহণ করতে হবে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা প্রয়োজন এমন ওষুধ মাইনাস ৪ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করতে হবে। জাতীয় ওষুধ নীতিতেও ওষুধের দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং রেফ্রিজারেটর থাকার বাধ্যবাধকতা আছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দোকানের নিবন্ধন দেওয়ার বিধান নেই। তবে বাস্তবে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, ওষুধের মোড়কে শীতল পরিবেশ, আলো-বাতাস ও সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণের জন্য লেখা থাকে। হাসপাতাল থেকে শুরু করে কোনোখানেই সেটির শতভাগ অনুসরণ হয় না। টিনের ঘরেও ফার্মেসি করে ওষুধবাণিজ্য চলছে। মার্কেট থেকে ওষুধ নিয়ে সেটি কতটুকু ডিগ্রেডেশন হয়েছে, ডিগ্রেডেশন হওয়ার পর কোনো টক্সিক ম্যাটেরিয়ালে পরিণত হয়েছে কিনা, সেবনে শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিনা-কিছুই দেখা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, ফার্মেসি কাউন্সিল, ওষুধ মালিক সমিতি, কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি মিলে মাঠপর্যায়ে ওষুধের সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসা উচিত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, বেশকিছু ওষুধ তাপামাত্রা সংবেদনশীল। সংবেদনশীলতার মাত্রা ও ওষুধের শ্রেণিভেদে সংরক্ষণও ভিন্ন হবে। কোনো ওষুধের জন্য রেফ্রিজারেশন, আবার কোনো ওষুধের জন্য সঠিক মাত্রার রুম টেম্পারেচার লাগে। এক্ষেত্রে কোনো ওষুধ সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং কোনো ওষুধ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে রুম টেম্পারেচার যে পর্যায়ে বাড়ছে তাতে কিছু ওষুধ সংরক্ষণ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সব ওষুধের ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে বলা যাবে না। দ্বিতীয়ত, টিনশেড রুমে ওষুধের দোকান ও পাকা ভবনের দোকানের তাপমাত্রা এক রকম থাকবে না। তাপমাত্রার মানের পরিবর্তন হবে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ ফার্মেসিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই। এজন্য উৎপাদক, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং ফার্মেসি মালিকদের উদ্যোগী হতে হবে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মুখপাত্র) আশরাফ হোসেন বলেন, ওষুধের ধরন বুঝে সংরক্ষণের বিষয়ে ফার্মেসি মালিকদের পরামর্শ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি করি। এখনো গুরুতর সমস্যা পাইনি। তবু বর্তমান পরিস্থিতিতে সতর্কতার সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট মো. রতন জানান, দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী সারা বছর বেশিরভাগ সময় ওষুধ সংরক্ষণে কোনো সমস্যা নেই। তবে ২৪ ঘণ্টা ওষুধ সংরক্ষণের জন্য কয়েকটি টারশিয়ারি লেভের হাসপাতাল ছাড়া ৯৫ শতাংশ জায়গায় শতভাগ ব্যবস্থা নেই। মেডিসিনের সেন্ট্রাল স্টোরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হলেও সেখান থেকে সাব-স্টোর ও প্রতিটা বিভাগে ইনডোর স্টোরে প্রচুর ওষুধ পাঠানো হচ্ছে। সেখানে ওষুধের কোল্ড চেইন মেইনটেইন ও গুনগত মান বজায় রাখা হচ্ছে না। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এমনকি স্বয়ং হাসপাতাল পরিচালকদের এদিকে নজর নেই।যুগান্তর

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions