ডেস্ক রির্পোট:- সাধারণত ডায়াবেটিসের জন্য ব্যবহৃত হয় এমন একটি সস্তা ওষুধ আপনাকে সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে দীর্ঘ জীবন লাভ করতে সহায়তা করতে পারে বলে বিশ্বাস করেন বিজ্ঞানীরা।
এনপিআর-এর বরাত দিয়ে আজ সোমবার নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেটফরমিন নামের সেই ওষুধটি মানুষের রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। টাইপ-টু ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে ওষুধটি ক্যানসার, বোধশক্তি হ্রাস পাওয়া এবং হৃদ্রোগের হাত থেকেও মানুষকে রক্ষা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যবিমার অধীনে এই ওষুধটি সেবন করতে প্রতিদিন এক ডলারেরও কম খরচ হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেটফরমিন বার্ধক্য কমাতে পারে কি-না এবং এটি বয়স্ক ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে কি-না পরীক্ষা করে দেখতে বিজ্ঞানীরা ‘টেম ট্রায়াল’ নামে একটি ক্লিনিক্যাল উপায় বের করেছেন। ছয় বছর ধরে এই পরীক্ষায় ৬৫ থেকে ৭৯ বছর বয়সী ৩ হাজার মানুষকে তালিকাভুক্ত করা হবে।
এদিকে এই ওষুধটি ইতিপূর্বে সেবন করেছেন এমন মানুষদের মধ্যে অ্যাটর্নি মাইকেল ক্যান্টর এবং তাঁর স্ত্রী ও কানেকটিকাটের হার্ডফোর্ড শহরের মেয়র শেরি ক্যান্টর অন্যতম। বয়সে ষাটের দশকে অবস্থান করা এই দুজনই তাঁদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য ওষুধটিকে কৃতিত্ব দেন।
মাইকেল ১০ বছর আগে তাঁর ওজন এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধটি সেবন করতে শুরু করেছিলেন। আর শেরি ক্যান্টর এটি গ্রহণ শুরু করেছিলেন করোনা মহামারির সময়। কারণ তিনি শুনেছিলেন, এটি সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।
ওষুধটির বিষয়ে এনপিআরকে মাইকেল ক্যান্টর বলেন, ‘আমি আমার সব বন্ধুদের এটি সম্পর্কে বলি। আমরা সবাই একটু বেশি সময় বাঁচতে চাই, সম্ভব হলে উচ্চ মানসম্মত জীবনযাপন করতে চাই।’
আমেরিকান ফেডারেশন ফর অ্যাজিং রিসার্চের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্টিভেন অস্টাড বার্ধক্যের জীববিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করেন। ওষুধটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না মেটফরমিন মানুষের আয়ু বাড়ায় কিনা। তবে যে প্রমাণগুলো পাওয়া গেছে, তা থেকে বোঝা যায় যে এটি খুব ভালো হতে পারে।’
গবেষণায় দেখা গেছে মেটাফরমিন রক্ত, ইউরোলজিক এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। প্রাপ্ত এই ফলাফলকে বড় একটি চমকের সঙ্গে তুলনা করেছেন অস্টাড। তিনি একটি ব্রিটিশ গবেষণার কথাও উল্লেখ করেছেন, যেখানে দেখা গেছে ওষুধটি টাইপ-টু ডায়াবেটিসের জন্য ওষুধ গ্রহণকারীদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। যারা মেটফরমিন গ্রহণ করেন তাদের কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা থেকেও মৃত্যুর ঝুঁকি কম ছিল।
অস্টাড এবং অন্যান্য গবেষক এ বিষয়ে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসনকে’ চাপ দিয়েছেন। কারণ বার্ধক্যের ক্ষেত্রে মেটফরমিনের বেশির ভাগ সুবিধা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
মাইকেল ক্যান্টর এবং তার স্ত্রী শেরি জানিয়েছেন—ওষুধটি সেবন করে তাঁরা কোনো নেতিবাচক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করেননি। তবে কেউ কেউ নতুন পেশি গঠন এবং ভিটামিন বি-এর অভাব পূরণে সমস্যা হওয়ার কথাও জানিয়েছেন।