ডেস্ক রির্পোট:- কমছে না দাবদাহ। উত্তপ্ত দেশের আবহাওয়া। পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্য জেলাগুলোর অধিকাংশটিতেই তীব্র তাপপ্রবাহ চলমান। বাতাসে বইছে আগুনের হল্কা। গরমে নাকাল জনজীবন। তাপমাত্রা কমবেশি হলেও বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি অনুভূত হচ্ছে বেশি। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ নেই। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সহজে মুক্তি মিলছে না এ অবস্থা থেকে।
চলতি মাসের পুরোটা জুড়েই এমন পরিস্থিতি থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে গতকালও দাবদাহের কারণে হিটস্ট্রোকে ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, তীব্র দাবদাহে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দাবদাহের কারণে কোল্ড কেস (যাদের এখন ভর্তি হওয়ার দরকার নেই) রোগীদের এই মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলো প্রতিকূল পরিবেশের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বয়স্ক ও বাচ্চারা যেন প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে না যায় সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে বললেন মন্ত্রী। এদিকে হিটস্ট্রোকে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দুই দিনে ৭ জনের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। গতকাল সিলেট, নরসিংদী ও মেহেরপুরে ওই ৩ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমায় হিটস্ট্রোকে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে স্থানীয় পুলিশ বক্সের সামনে থেকে অজ্ঞান অবস্থা ওই রিকশাচালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রিকশাচালকের নাম আবু হানিফ মিয়া। তিনি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার শিবপুর গ্রামের মো. করম আলীর ছেলে।
দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি ইয়ার?দৌস হাসান জানিয়েছেন, দুপুরে ওই রিকশাচালক হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে হিটস্ট্রোকে নরসিংদীতে এক পোশাক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে মাধবদী থানার ভগীরথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মাহমুদুল কবির। নিহতের নাম সাফকাত জামিল ইভান। তিনি একই গ্রামের মৃত জাকারিয়ার ছেলে। স্বজনরা জানান, সকালে নারায়ণগঞ্জে মামার বাড়ি থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে নিজ বাড়িতে ফেরেন ইভান। ফিরে আসার পর থেকে অসুস্থবোধ করেন তিনি। একপর্যায়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওদিকে মেহেরপুরের গাংনীতে হিটস্ট্রোকে শিল্পী খাতুন (৪৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি জেলার গাংনী উপজেলার রুয়েরকান্দি গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী।
গত শনিবার রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরিবার জানায়, শিল্পী খাতুন প্রচণ্ড গরমে অস্বস্তিবোধ করছিলেন। একপর্যায়ে স্ট্রোক করেন। হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও পাবনার চাটমোহরে ভুট্টার ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আলাউদ্দিন আলী ওরফে আলাল (৪৩) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়য়নের নেউতিগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে। স্থানীয়রা জানান, গতকাল সকালে বাড়ির অদূরে বিলের মধ্যে নিজের ভুট্টা ক্ষেতে কাজ করতে যান আলাউদ্দিন আলী। এ সময় তীব্র রোদ ও গরমে অসুস্থ হয়ে জমির মধ্যেই জ্ঞান হারান তিনি। পরে ওই জমির পাশেই ঘাস কাটার সময় মজিবর রহমান নামের এক ব্যক্তি দেখতে পান। এরপর স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পার্শ্ববর্তী আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলাউদ্দিন আলীকে মৃত ঘোষণা করেন। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আলাউদ্দিন আলী মারা গেছে বলে চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তার স্বজনরা জানিয়েছেন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা।
গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলা সমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শ্রীমঙ্গল ও চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়াও রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে। এতে আরও বলা হয়, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আগামী পাঁচদিনে আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলেও আবহাওয়া বার্তায় জানানো হয়।
তাপপ্রবাহ থাকবে এপ্রিল জুড়ে: দেশের বেশির ভাগ জেলায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। অসহনীয় গরমে নাকাল মানুষ। তাপমাত্রা কিছুটা কমবেশি হলেও বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি অনুভূত হচ্ছে বেশি। এমন অবস্থা থেকে সহজে মুক্তিও মিলছে না। এপ্রিল জুড়েই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এপ্রিল জুড়েই দেশব্যাপী এমন তাপমাত্রা থাকবে। আগামী ২৪ এবং ২৫শে এপ্রিল তাপ কিছুটা কমার সম্ভাবনা থাকলেও ২৭শে এপ্রিলের পর আবার বাড়তে পারে, যা পরবর্তী এক সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তাপমাত্রা সহসাই কমছে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশের যেসব স্থানে ঝড়-বৃষ্টি হবে সেসব অঞ্চলে তাপমাত্রা কমবে।
এ ছাড়া দাবদাহ অব্যাহত থাকবে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেছেন, এরই মধ্যে আমরা যে হিট এলার্ট ঘোষণা করেছি, তা সোমবার সকালে শেষ হবে। তারপর এলার্টের সময়সীমা আরও বাড়ানো হবে। হয়তো পুরো মাস জুড়েই অব্যাহত থাকবে হিট এলার্ট। মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত তাপের প্রভাব এমনই থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৬ই মে’র পর থেকে তাপ কমতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় প্রকৃত তাপমাত্রার থেকে বেশি অনুভূত হচ্ছে এবং অস্বস্তি হচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বাইরে ৪০ ডিগ্রির উপরে আছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৪, ঈশ্বরদীতে ৪২, মোংলায় ৪১ দশমিক ৭, রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ৫, কুমারখালী ও খুলনায় ৪১ দশমিক ২, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরে ৪০ দশমিক ৮, টাঙ্গাইলে ৪০ দশমিক ৪, সাতক্ষীরায় ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, রংপুর বিভাগে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এবং অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
এ ছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মানবজমিন