ডেস্ক রির্পোট:- ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেও আরেকটি সরকার সক্রিয় রয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এখন যে সরকারকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দেখি, তার অভ্যন্তরেও আরেকটি শক্তিশালী ক্ষমতাকেন্দ্র কাজ করছে, যা আজ আর গোপন কোনও বিষয় নয়।
রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে বুধবার (২৩ জুলাই) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে আলোচনার বিষয় ছিল— ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
দেবপ্রিয় বলেন, “বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে দলীয় নিরপেক্ষতার দৃষ্টিকোণ থেকে। দুর্বল জনগোষ্ঠী, নারী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগণের অধিকারের ক্ষেত্রে যে অবক্ষয় ঘটেছে, তা পূর্ববর্তী কর্তৃত্ববাদী সময়কেও স্মরণ করিয়ে দেয়।”
তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী চেতনায় সরকার গঠনের পরও তা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও সংস্কারে প্রতিফলিত হয়নি। গরিব মানুষ থেকে শুরু করে উৎপাদনশীল উদ্যোক্তা শ্রেণি—কেউই সেই সংস্কারের সুফল পায়নি।”
অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো নিয়ে তিনি বলেন, “এই সরকার অনন্তকালীন নয়। এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং সেটির একটি ‘ডেস্ক ক্লিয়ারিং’ লিস্ট থাকা উচিত। প্রধান উপদেষ্টাকে এখন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে স্পষ্ট করতে হবে— তিনি কী কী সংস্কার সম্পন্ন করেছেন এবং কোন কাজগুলো অসমাপ্ত থেকে যাচ্ছে।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই অন্তর্বর্তী সরকার কি একটি প্রকৃত, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম? আপস বা আঁতাতের নির্বাচন নয়, একটি বাস্তব নির্বাচন যেখানে জনগণ শুধু ভোট দেবে না, ভোটের পরদিনও নিরাপদে থাকবে— এই নিশ্চয়তা কি দেওয়া যাবে?”
তিনি আরও বলেন, “এখনকার প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। সেনাবাহিনীর সক্রিয় ও বড় পরিসরে অংশগ্রহণ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন বাস্তবায়ন কঠিন। অস্ত্র উদ্ধার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ নির্বাচনী পরিবেশ গঠনে সেনাবাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন—অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, লেখক ফরহাদ মজহার, গবেষক আলতাফ পারভেজ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, গবেষক মাহা মীর্জা এবং প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের গবেষক সহুল আহমদ।
আলোচনার শুরুতেই উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “এখন মূল প্রশ্ন হলো— সরকার কীভাবে এই অবস্থান থেকে উত্তরণ ঘটাবে? গত এক বছরের মূল্যায়নের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আগামী এক বছরের নির্গমন পথনির্দেশ বা ‘এক্সিট পলিসি’। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার এখনই সময়।”