মাইলস্টোনে বিধ্বস্ত বিমান সম্পর্কে যা জানা গেলো

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫
  • ৫১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত বিমানটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান। নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সোমবার (২১ জুলাই) ঢাকার বিমানবাহিনী ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়ে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভবপর হয়নি। দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। এসব তথ্য আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর)। বিমানটি সম্পর্কে আইএসপিআর বিস্তারিত কোনও তথ্য না দিলেও তারা জানিয়েছে, এরই মধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী কারণ উদঘাটনের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০১৩ সালে চীন থেকে ১৬টি বিমান ক্রয়ের চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধবিমানটি নিয়ে আসা হয়েছিল। যার মডেল চেংদু এফটি ৭বিজিআই-৭বিজির উন্নত সংস্করণ। বিমানটি মূলত চীনের তৈরি একটি মিগ-২১-ভিত্তিক সুপারসনিক ফাইটার জেট। বাংলাদেশ ছাড়াও এই মডেলের বিমান বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ ও আকাশ প্রতিরক্ষা কাজে ব্যবহার করেছে। অনেক সময় যুদ্ধবিমান হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে এই বিমান প্রযুক্তিগতভাবে পুরোনো। কিন্তু এটা আরও এক থেকে দুই যুগ ব্যবহার করার মতো লাইফ টাইম রয়েছে। এটার রেঞ্জ প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার। আধুনিক ও মাল্টি ফাংশন ডিসপ্লে রয়েছে এই যুদ্ধবিমানে। হালকা এয়ার টু এয়ার অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণে সক্ষম এই বিমান।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সব বিমান পুরোনো। সর্বশেষ যে বিমান কেনা হয়েছে সেটাও প্রায় এক যুগ আগে। এটাও দুর্ঘটনার কারণ কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেছেন, ‘বিমান সাধারণত পুরোনো হয় না। প্রত্যেকটা বিমানের একটা লাইফ টাইম আছে। এই বিমানগুলোর লাইফ টাইম প্রায় ৩০ বছর। তাই একযুগ কিংবা দুই যুগ কোনও ব্যাপার না। ব্যাপারটা হচ্ছে এটাকে আমরা ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছি কিনা। আমরা বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কোনও কম্প্রমাইজ করি না। যে দেশ থেকে ক্রয় করা হয়, সে দেশ থেকে রক্ষণাবেক্ষণের সব প্রযুক্তি এবং যা যা প্রয়োজন তাদের সঙ্গে চুক্তি করে নিই। যাতে ইঞ্জিনসহ বিমানের অন্যান্য অংশের রক্ষণাবেক্ষণ ভালো হয়।’

বিধ্বস্ত বিমানবিধ্বস্ত বিমান

বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, ‘এসব বিমানের ক্ষেত্রে এটা বলা যায় যে প্রযুক্তিগুলো পুরোনো। বিমান পুরোনো না। এখন আমরা নতুন প্রযুক্তির বিমান আনার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে নতুন প্রযুক্তির বিমান আনবো। তার মানে ওটাও যে এক্সিডেন্ট হবে না, তা নয়। হতেই পারে। কিন্তু আমরা দেশে এবং বিদেশে এই বিমানগুলোও ভালোভাবে মেরামত করি।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা সম্পর্কে তদন্তের আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে এটা একটা সিঙ্গেল ইঞ্জিন বিমান। ইঞ্জিনের অনেক টেকনিক্যাল সমস্যা হতে পারে। শুধু যে পাখির আঘাত হতে পারে তা নয়, অন্য কিছুও হতে পারে। অনেক কিছু বলা যেত যদি পাইলট বেঁচে থাকতো কিংবা বিমান বিধ্বস্ত না হতো।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইশফাক এলাহী চৌধুরী বিমানটি সম্পর্কে বিস্তারিত না বললেও বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘এই যুদ্ধবিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি হতে পারে। তবে বিমানটি সার্ভিসেবল বা ভালো রক্ষণাবেক্ষণে ছিল।’

সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নাল পত্রিকার সম্পাদক আবু রুশদ বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে বিমানবাহিনীর আধুনিকায়নে কিছুই করা হয়নি। দুর্ঘটনা কবলিত বিমানগুলো অনেক পুরোনো প্রযুক্তির। এখন সময় এসেছে উন্নত প্রযুক্তির বিমান এনে এগুলো সরিয়ে ফেলার। কারণ এসব বিমান দিয়ে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটি হয়তো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই ঘটেছে। কিন্তু আমাদের সতর্ক হওয়ারও সময় হয়েছে।’

উল্লেখ্য, উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় বুধবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত ২৯ জন মারা গেছেন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৫৭ জন।বাংলা ট্রিবিউনকে

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions