পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীরের আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়িটি ভুতুড়ে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমদের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়িতে এখন সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে বাড়িতে। এক সময়কার প্রতাপশালী এই আইজিপি এখানে এলে রূপগঞ্জের ‘আনন্দ হাউজিং’সহ পুরো এলাকা থমথমে হয়ে যেত। নিরাপত্তাকর্মী থেকে শুরু করে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সরব উপস্থিতি ও পদচারণায় বাড়িটি মুখরিত হয়ে উঠতো। বাড়িটির চতুর্দিকে প্রশাসনের লোকজন নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখতো। বাড়িটির আশেপাশের রাস্তা দিয়ে স্থানীয়দের স্বাভাবিক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতো। এখন সেই বেনজীরও নেই। নেই ক্ষমতাও। কারও আসা যাওয়াও নেই বাড়িটিতে। বিরাজ করছে নীরবতা, এ যেন ভুতুড়ে বাড়ি।

নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আদালতের আদেশে জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর থেকে বাড়িটির অভ্যন্তরে কোনও জনমানবের পদচারণা নেই। এতে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল পরিণত হয়েছে বাড়িটি। সন্ধ্যা নামতেই বাড়িটির অভ্যন্তরে একটি গুমট পরিস্থিতির তৈরি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বাচলের দক্ষিণবাগ এলাকায় গুতিয়াব মৌজায় আনন্দ হাউজিং সোসাইটির ছয় প্লটের ২৪ কাঠা জমির ওপর ‘সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়। বেনজীর আহমেদ দেশে অবস্থানকালে মাঝেমধ্যেই এই বাড়িতে আসতেন এবং অবসরে রাত্রিযাপনও করতেন। বাড়িটিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় কেয়ারটেকারের পাশাপাশি দুটি কুকুরও রাখা হয়েছিল।

২০২৪ সালের ২৩ মে আদালত সাবেক আইজিপি বেনজীরের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দেন। অন্যদিকে গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্লাট জব্দের আদেশ দেন। গত ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে। এর ভেতর বাড়িটিও ছিল।

ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত রূপগঞ্জ উপজেলাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনকে রিসিভার নিয়োগ করে। জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশক্রমে এই সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়।

২০২৪ সালে আদালত কর্তৃক বাড়িটি ক্রোক হওয়ার পর এটি পুরোপুরি রাষ্ট্রের অধীনে চলে যায় এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক এটির সার্বিক দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এখানে দুই জন নিরাপত্তা প্রহরী বাড়িটি নিরাপত্তা দায়িত্বে রয়েছেন।
একজন বেনজীরের আমলের কেয়ারটেকার রতন মিয়া ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক একজন আনসার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে যে প্রধান দুটি ফটক রয়েছে সেগুলো সিলগালা করা হয়েছে। তারপর থেকে বাড়িটিতে এখন পর্যন্ত আর কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। বাড়ির ভেতর যত আসবাবপত্র রয়েছে এগুলো সে অবস্থাতেই আছে। পাশাপাশি বাড়িটির সৌন্দর্য বর্ধনে চতুর্দিকে যে গাছপালা রোপণ করা হয়েছিল এগুলোর পরিচর্যাও হচ্ছে না। সবমিলিয়ে বাড়িটিতে এখন সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণবাগ এলাকার একটি হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে জমিটি আনন্দ হাউজিং সোসাইটির নামে কেনা হয়েছিল। পরে এ জমিতে ডুপ্লেক্স বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় সময় এ বাড়িতে আত্মীয় ও বন্ধুদের নিয়ে আসতেন বেনজীর আহমেদ।

জমির পূর্বের মালিক প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের ছেলে রামধন সরকার বলেন, প্রেমানন্দ সরকারের মৃত্যুর পর তাদের চার ভাই এ জমির মালিক হন। অন্তত ১০ বছর আগে বালু দিয়ে জমিটি ভরাট করে পুলিশের আনন্দ হাউজিং সোসাইটি। পরে এক কোটি টাকা বিঘা দরে ৫৫ শতাংশ জমি কিনে নেওয়া হয়।

রামধন বলেন, আমরা তো এ জমি বিক্রি করতে চাইনি। বালু ভরাটের সময়ও বাধা দিছিলাম। কিন্তু তাগো লগে কী আর পারা যায়? পরে উপায় না দেইখা বিক্রি কইরা দিছি।

এ রিসোর্ট পার্শ্ববর্তী স্থানীয় বাসিন্দা কালার সরকার বলেন, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ প্রায় সময়ই এখানে এসে রাত্রিযাপন করতেন। যেদিন তিনি এখানে আসতেন তার আগে থেকেই বাড়িটিকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনের আনাগোনায় মুখরিত থাকতো। এমনকি এই বাড়ির পার্শ্ববর্তী রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত করা হতো।

স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ মিয়া বলেন, আদালত বাড়িটি ক্রোক করার পর দুয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরী ব্যতীত বাড়িতে আর কাউকেই প্রবেশ করতে দেখা যায় না। বাড়িটিতে এখন সুনসান নীরবতা। যেন ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে ।

বাড়িটি নির্মাণের পর থেকেই নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন রতন মিয়া। তিনি বলেন, বাড়িটি ক্রোক হওয়ার পর থেকে আমি অদ্যাবধি কোনও বেতন পাইনি। তবু বাড়িটির মায়ায় পড়ে রয়েছি। আমাকে বিদায় করার সময় আমার পাওনা পরিশোধ করে দেবে বলে আশা করি।

তিনি বলেন, ভেতরে অন্যকোনও মানুষের পদচারণা না থাকায় দিনে যেমন তেমন, রাতে যেন একটি ভুতুড়ে পরিস্থিতি তৈরি হয়।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জানান, ডুপ্লেক্স বাড়িটি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের আওতায় দেখভাল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাড়িটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক একজন গ্রাম পুলিশ সেখানে দায়িত্ব পালন করছে। আদালত কর্তৃক পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এ অবস্থা চলমান থাকবে।ট্রিবিয়ন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions