ডেস্ক রির্পোট:- বিমান চলাচলের পথেই রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বিমান যে পথে এসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে- ঠিক সেই পথের নিচেই বিশাল জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। সোমবার (২১ জুলাই) প্রতিষ্ঠানটির প্রাঙ্গণে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কেন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১৯০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। বিমানের অবতরণের নির্দিষ্ট পথ রয়েছে। দেখা গেছে, প্রায় সব বিমান স্কুল প্রাঙ্গণের অল্প ওপর দিয়ে বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এমনিতেই ঝুঁকিতে ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা তাসলিমা বলেন, ‘এ পথ দিয়ে বিমান খুব নিচ দিয়ে যায়। এমনকি ছাদে কাপড় শুকাতে গেলেও বিমানের পাখার বাতাস টের পাওয়া যায়।’ বিমান চলাচলের পথে এ ধরনের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা ঠিক হয়নি বলেও জানান তাসলিমা। স্কুলের একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘আমাদের মাথার ওপর দিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই বিমান যায়। ফলে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে যুদ্ধবিমানটি নিয়ে পৃথকভাবে কারও কোনো উদ্বেগ ছিল না। পরে শব্দ শুনে ও আগুন দেখে বুঝতে পারি কিছু ঘটেছে। কাছে গিয়ে দেখি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে।’
ওই নিরাপত্তা কর্মীর ভাষ্য অনুযায়ী, উত্তর-পশ্চিম কোণ দিয়ে বিমানটি এসে দোতলা ভবনের সামনে বিধ্বস্ত হয়। প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, নিরাপত্তাকর্মী যে পথটির কথা উল্লেখ করেছেন, ঠিক সেই পথটি ধরেই যাত্রীবাহী ফ্লাইটগুলো হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করছিল। নিরাপত্তাকর্মীর ভাষ্য এবং বিমানটির বিধ্বস্ত হওয়ার জায়গা পরিদর্শন করে বোঝা যায়, প্রশিক্ষণরত পাইলট যুদ্ধবিমানটি বিমানবন্দরে অবতরণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
গতকাল ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বিকাল ৩টা থেকে পরবর্তী আধাঘণ্টায় অন্তত ৭টি বিমান অবতরণের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করা গেছে। বিমানগুলো উত্তর পশ্চিম দিক থেকে এসে পূর্ব-দক্ষিণে বিমানবন্দরে অবতরণ করছিল। বিমানগুলো এত নিচ দিয়ে যাচ্ছিল যে বিমানের গায়ে লেখা ছোট গাণিতিক সংখ্যাগুলো স্পষ্ট পড়া যাচ্ছিল।
স্কুল প্রাঙ্গণে দুটো দশ তলা ভবন দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি প্রশাসনিক ভবন। যেটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পশ্চিম দিকে স্কুল মাঠের পাশে। আরেকটি দশ তলা ভবন স্কুলের উত্তর দিকের সীমান্তে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পূর্ব দিকেও প্রকল্প-পাঁচ নামে একটি সাত তলা ভবন দেখা গেছে। এলাকাবাসী বলছেন, সেটিও ওই স্কুলেরই ভবন। এ তিনটি ভবনই পড়েছে বিমান অবতরণের পথে।
সাবেক এয়ার কমোডর ইশফাক এলাহি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বিমান অবতরণের পথেই পড়েছে। এ ধরনের একটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করাটা ঠিক হয়েছে কি না সেটি বিবেচ্য বিষয়। এ ছাড়া এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না হয়ে হাসপাতাল কিংবা আবাসনও হতে পারতো।
ইশফাক এলাহি জানান, যতটুকু শুনেছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে সরকারের আপত্তি ছিল। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠান করার ক্ষেত্রে সিভিল এভিয়েশন ও রাজউকের অনুমতি নিতে হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ হয়তো প্রভাব খাটিয়ে সেই অনুমোদন নিতে পেরেছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিমানবন্দরটি যখন করা হয় তখন এই এলাকা এত জনবহুল ছিল না। এখন হয় বিমানবন্দর সরাতে হবে, নয়তো জনবসতি সরাতে হবে। তবে জনবসতি সরানো যেহেতু সম্ভব নয়, সেহেতু বিমানবন্দর সরানোর পরিকল্পনা সরকারের নেওয়া উচিত।বাংলাদেশ প্রতিদিন