ডেস্ক রির্পোট:- মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর যুুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এই ঘটনায় আহতের সংখ্যা ১৬৫ জন। তবে নিহতদের নাম পরিচয় সরকারিভাবে এখনো পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিহতদের নাম প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। আহতদের মধ্যে অনেকের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। অনেকেই আইসিইউতে বাঁচা-মরার লড়াই করছেন। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গতকাল সারা দেশে জাতীয় শোক পালন করা হয়েছে। নিহতদের আত্মার শান্তি ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে হয়েছে দোয়া ও প্রার্থনা। মর্মান্তিক এই প্রাণহানিতে শোকে মুহ্যমান পুরো দেশ।
ওদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের সুস্থ করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। নিহতদের মধ্যে এখনো ৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। দাবিদারের সঙ্গে নিহতদের ডিএনএ পরীক্ষা করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। কারণ কিছু মরদেহ আগুনে পুড়ে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব না।
গতকাল দিনভর আহতদের চিকিৎসা যেসব হাসপাতালে চলছে সেসব হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ড বয়রা কর্মব্যস্ত সময় কটিয়েছেন। রোগীর স্বজনদের কান্না- আহাজারির চিত্র দেখা গেছে গতকালও। যেসব রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক তাদের স্বজনরা উদ্বিগ্ন সময় পার করছেন। বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গেও স্বজনদের উপস্থিতি ছিল। অনেক মরদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মরদেহ গ্রহণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।
আইএসপিআর জানিয়েছে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত ৮ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই হাসপাতালেও এখন কেউ নিহত হননি। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৬। হাসপাতালটিতে ১০ জন নিহত হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন ৩ জন, নিহত হয়েছেন ১ জন। ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৮ জন। এই হাসপাতালে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। উত্তরা লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৩ জন। নিহত হয়েছেন ২ জন। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬০ জন। হাসপাতালটিতে নিহত হয়েছেন ১ জন। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে একজন আহত চিকিৎসাধীন আছেন। এ ছাড়াও শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ১ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত দু’জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জন নিহত হয়েছেন। আর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আহত তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতালটিতে কেউ মারা যাননি।
প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেছেন, রাজধানীর দু‘টি হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট একটি। এখানে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভর্তি আছে ৪২ জন, এর মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক, অন্যরা শিশু। আইসিইউতে আছে ৫ জন, এদের মধ্যে কয়েকজন ভেন্টিলেশনে আছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ সময় তিনি বলেন, সিএমএইচ হাসপাতালে ৬টি মরদেহ এখনো শনাক্ত হয়নি। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দু‘টি দেহাবশেষ চিহ্নিত করতে হবে। তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেল ভর্তি তিনজনের দুইজন আইসিইউতে আছে। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যাওয়া ১০ জন হলো তানভির (১৪), আফনান ফায়াজ (১৪), মাহরিন (৪৬), বাপ্পি (৯), মাসুকা (৩৭), এ বি শামীম (১৪), শায়ান ইউসুফ (১৪), আরিয়ান-১ (১৩), আরিয়ান (১৩) ও নাজিয়া (১৩)।
নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি, সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসক আসছেন: বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় কতোজন নিহত হয়েছেন এ নিয়ে রয়েছে নানা বিভ্রান্তি। আইএসপিআরের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমের কাছে আহত-নিহতদের তথ্য পাঠানো হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানও সাংবাদিকদের কাছে আহত নিহতদের সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন। প্রথম থেকেই মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। ডা. সায়েদুর রহমান বলেছেন নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন হতে আরও সময় লাগবে। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল থেকে একজনের মৃতদেহ সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে। সেই সংখ্যাটি নিয়ে আমাদের তথ্যের পার্থক্য দেখা দিয়েছে। আমরা বলেছি ১৫ জন, সিএমএইচে ১৫ জনের মৃতদেহ আছে। যদিও আইএসপিআরের তথ্যে ১৬ জন বলা আছে। তথ্যের পার্থক্যগুলো দূর হতে সময় লাগবে। যেহেতু মৃতদেহ আর দেহাবশেষ নিয়ে কিছু পার্থক্য আছে, তাই বিষয়টি নিয়ে আরেকটু সময় নিয়ে জানাতে পারবো। তিনি বলেন, রাতে (মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুরের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও দুইজন নার্স ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আহতদের উন্নত চিকিৎসায় সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দল বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের পর্যবেক্ষণ করবেন। কতোজনের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন সেই সিদ্ধান্ত দেবেন তারা। প্রয়োজনে আহতদের বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। এ সময় তিনি বলেন, বার্নে ভর্তি রোগীদের মধ্যে দু‘জনকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া শঙ্কামুক্ত রয়েছেন আরও ১০ জন। ৩০ জন এখনো ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এদিকে, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের দাফনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের কবরস্থ করার জন্য মাইলস্টোন স্কুলের সন্নিকটে উত্তরা ১২ নম্বরের সিটি করপোরেশন কবরস্থানে জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এই কবরস্থান তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে সংরক্ষণ করা হবে।