ডেস্ক রির্পোট:- অন্তবর্তী সরকারের পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার অপসারণের দাবি তুললেন পাহাড়ের জনগোষ্ঠী। ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের এক বছর পার হতে না হতেই অপসারণের দাবি তুললেন তারা।
সুপ্রদীপ চাকমার জন্ম খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার কমলছড়ি গ্রামে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী থেকে প্রথম ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে সচিব পর্যায়ে প্রথম চাকমা হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। দেশে-বিদেশে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে চাকরি করার পর সর্বশেষ মেক্সিকো সিটির বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত পদ হতে ২০২১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের এই হাইপ্রোফাইল কর্মকর্তাকে ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয় অন্তবর্তী সরকার।
নিয়োগের এক বছর যেতে না যেতেই উপদেষ্টার জন্মস্থান খাগড়াছড়ি থেকে অপসারণের দাবি ওঠায় এর সাথে যুক্ত হয়েছে অন্য দুই পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দবানের সচেনতন নাগরিক সমাজ। উপদেষ্টার নানা অনিয়ম ও বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদের ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা।
বিক্ষুব্ধ খাগড়াছড়িবাসীর অভিযোগ, ‘অন্তবর্তী সরকারের পার্বত্য উপদেষ্টা কেবল একটি গোষ্ঠীকে সুযোগ দিয়ে ত্রিপুরা, মারমা ও বাঙালি জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করেছেন। পার্বত্য মন্ত্রণালয় কোনো একটি গোষ্ঠীর জন্য নয় এটি সকল সম্প্রদায়ের সকল মানুষের জন্য। কিন্ত উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার প্রত্যক্ষ নির্দেশে এখানে প্রচণ্ডভাবে বৈষম্য করা হয়েছে’। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ প্রকল্পে খাদ্যশস্যে অর্থ বরাদ্দের অনিয়মের সঙ্গে নাকি তিনি জড়িত। এই অনিয়মের প্রতিবাদ ও বৈষম্যমূলক বন্টনের অভিযোগে গত রোববার খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর মুক্তমঞ্চে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা।
বিক্ষুব্ধ ত্রিপুরা-মারমা জনগোষ্ঠী ও সচেতন নাগরিক সমাজ কেবল সুপ্রদীপ চাকমাকেই অভিযুক্ত করেননি। তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমাকেও সুপ্রদীপ বাবুর এসব অপকর্মের দোসর বলে আখ্যায়িত করে অপসারণ দাবি করেন। তারা দুজন মিলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের অর্থ ও খাদ্যসশ্য নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীকে বরাদ্দ দিয়ে বৈষম্য করে যাচ্ছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে উপদেষ্টা ও যুগ্ম সচিবের অপসারণ দাবি করে ২৯ জুন ২০২৫ রোববার আলটিমেটাম দেন বিক্ষুব্ধরা। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নায্যতার ভিত্তিতে সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতেরও দাবি তুলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।
এদিকে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আইডেনন্টিফিকেশনের জন্য একটি বিতর্কিত শব্দের স্বীকৃতি দাবি করে বক্তব্য দিলে এর প্রতিবাদেও ফুসে উঠেছে পাহাড়ের ছাত্র সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা। পাহাড়ের সংখ্যাগরিষ্ঠরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে ৩০ জুন সোমবার খাগড়াছড়ি ও একই দিনে রাঙ্গামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। এছাড়াও বিক্ষুব্ধ নাগরিকরা বলছেন, সুপ্রদীপ চাকমা উপদেষ্টা পরিষদের থাকার কারণে সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০ সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট ৭টি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের বিতর্কিত নামে নামকরণ করতে চায়।
তারা আরো দাবি করছেন যে, উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য যে বিতর্কিত স্বীকৃতি দাবি করছেন, তা সংবিধানবিরোধী অবস্থানকে উসকে দেয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ও সচেতন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ বলছেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে সংবিধান বিরোধী বক্তব্য দিয়ে উপদেষ্টা তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। এমন বক্তব্য কেবল অনভিপ্রেতই নয় বরং তা জাতিগত উত্তেজনা ও বিভাজনের রাজনীতিকে উৎসাহিত করে।
সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমার অপসারণের দাবিতে হঠাৎ করে কেনো ফুঁসে উঠলো পাহাড়ের সচেতন নাগরিক সমাজ? এই প্রশ্ন এখন কেবল পাহাড়ে নয়, সমতলেও সমানভাবে উচ্চারিত।পার্বত্যনিউজ