রাঙ্গামাটি:- রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের যৌথ খামার এলাকায় বয়োবৃদ্ধ দম্পতি সুরেশ চাকমা ও প্রতি রানী চাকমা। বাক ও মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে ও নাতী কলিন চাকমাকে নিয়ে থাকতেন ভাঙ্গা একটি ঘরে। অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটতো এই পরিবারটির।
২০২৫ সালের শুরুর দিকে এই পরিবারটিকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করে কয়েকটি গণমাধ্যম। বিষয়টি নজরে আসে কাউখালী উপজেলার প্রশাসনের সদ্য যোগদান করা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী আতিকুর রহমানের। পরদিনই উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিয়ে ছুটেযান জীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস করা সুরেশ প্রতিরানী দম্পতির ঘরে। তাৎক্ষণিক চাল, ডাল, কম্বল সহ বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য দিয়ে সহযোগিতা করেন তিনি।
সে সময় কথা দিয়ে এসেছিলেন একটি ঘর করে দিবেন সুরেশ প্রতিরানী দম্পতিকে। কথা রাখলেন ইউএনও আতিক। ঘর পেলেন সুরেশ প্রতিরানী দম্পতি। বুধবার উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারদের সাথে নিয়ে নতুন ঘর বুঝিয়ে দিতে যান তিনি। নিয়ে গেছেনে খাদ্যদ্রব্যও। এবারও কথা দিয়ে এসেছেন বিদ্যুৎ, ফ্যান, লাইট ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা।
এই সুরেশ প্রতিরানী দম্পতিকে ঘর দিতে পেরে খুব অনন্দিতই হয়েছেন হয়তো ইউএনও কাজী আতিকুর রহমান। আর সেজন্যই হয়তো তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ঘর পেলেন সেই সুরেশ চাকমা। কাউকে ওয়াদা দিয়ে রাখতে পারার আনন্দটা আসলেই অন্যরকম।
তাঁর ফেসবুক ওয়ালে তিনি লিখেন-
‘ঘর পেলেন সেই সুরেশ চাকমা
কাউকে ওয়াদা দিয়ে রাখতে পারার আনন্দটা আসলেই অন্যরকম।
এবছরের শুরুতে একটি সংবাদ মাধ্যম মারফত জানতে পারি সুরেশ চাকমা নামে এক অসহায় পরিবারের কথা যার পরিবারে আয় করার কেউ নেই। স্ত্রী, প্রতিবন্ধী মেয়ে আর এক নাতিকে ঘিরে যার সংসার।
কোনদিন পরিশ্রম করতে পারলে পেটে ভাত জোটে আর না হয় অভুক্ত থাকতে হয় তাদের। নুন আনতে পানতা পুরোয় যখন অবস্থা, তখন তাদের স্বপ্ন কেবল থাকার ভাঙা ঘরটাতে যেন পানি না পরে!
জানুয়ারিতে যখন যাই তখন কিছু আর্থিক সহায়তা, খাদ্য আর শীত নিবারণের জন্য কয়েকটি কম্বল দিয়ে এসেছিলাম।
গিয়ে দেখি বয়স আনুমানিক (এলাকাবাসীর অভিমতও তাই) সত্তরের উপরে হলেও জাতীয় পরিচয় পত্রে পঞ্চাশের কোঠায় তাই তাদের আর ভাতা মিলে না! সুবর্ণ নাগরিক কার্ড না থাকায় প্রতিবন্ধী মেয়েটিও কোন ভাতা পান না। নিজ এলাকা ছেড়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে যেতে না চাওয়ায় বিভিন্ন সময় চেষ্টা করেও ঘর দেয়া যায় নি।
সেদিন ফিরে আসার সময় শুধু বলেছিলাম ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো। অবশেষে কথা রাখতে পারলাম। নতুন ঘর পেলেন সুরেশ চাকমা আর ইতোমধ্যে মেয়েটিকেও ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
চোখে কম দেখা, কানে কম শুনতে পাওয়া সুরেশ প্রতিরানী দম্পতির সাথে কথাহয় এই প্রতিবেদকের, প্রতিবন্ধী মেয়ে, নাতীকে নিয়ে নিশ্চিতে ঘুমাতে পারার মত একটি ঘর পেয়ে নিজেদের ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন উপজেলা প্রশাসনের প্রতি। কথাগুলো বলতে বলতে মুখে ফুটছিলো কোটি টাকা মূল্যের চেয়েও দামী হাসি।পাহাড়২৪