শিরোনাম

ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আজ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫
  • ৫৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর চানখাঁরপুলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের গুলিতে শিক্ষার্থী আনাস হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আজ। এর আগে গত ২০শে এপ্রিল এই মামলায় ৮ জনকে অভিযুক্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এই প্রতিবেদন আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে। এর মধ্যদিয়েই মামলাটির আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সূত্র মতে, এই ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন, ডিএমপি’র সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম, মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। তবে ৮ আসামির মধ্যে শেষের ৪ জন কারাগারে, বাকিরা পলাতক।

গত ৫ই আগস্ট ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে গুলি চালানো হয়। এতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনী সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। আগ্নেয়াস্ত্র, এপিসি কার, লাখ লাখ বুলেট, হেলিকপ্টার, ড্রোন ব্যবহার করে এই আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে পুলিশ। এতে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।

তদন্তে উঠে এসেছে, চানখাঁরপুলের হত্যাকাণ্ডে পলাতক আসামি হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য আসামিরা ঘটনাস্থলে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। তারা অধীনস্থদের নির্দেশ প্রদান, সহযোগিতা ও সহায়তার মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটনে ভূমিকা রাখেন। এছাড়া তারা এসব অপরাধ সংঘটন থেকে অধীনস্থদের বিরত রাখেননি বা পরবর্তী সময়ে কোনো ব্যবস্থাও নেননি। এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ট্রাইব্যুনালে করা মামলাটির কম্প্লেইন রেজিস্ট্রার নম্বর-১৪৯। ৭ই অক্টোবর থেকে তদন্ত শুরু করে ১৯৫ দিনের তদন্ত শেষে ২০শে এপ্রিল চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত শেষে ৯০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে মোট ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সংযুক্ত আছে ১৯টি ভিডিও, ১১টি পত্রিকার প্রতিবেদন, ২টি অডিও, ১১টি বই ও রিপোর্ট এবং ৬টি মৃত্যু সনদ। প্রতিবেদনে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশে ৬ জনকে হত্যার ঘটনা উঠে আসে।

এতে ২টি অডিও কল রয়েছে। এর মধ্যে একটি অডিও কলে শেখ হাসিনা সরাসরি নির্দেশ দেয়ার রেকর্ড রয়েছে। এতে হাসিনার পুলিশকে গুলি করে মানুষ হত্যার নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়াও সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশনাও রয়েছে। হাসিনা যে মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেটি হাবিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে অন্য কর্মকর্তাদের জানাচ্ছিলেন। অর্থাৎ পুলিশ কমান্ড সেন্টার থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেয় হাবিবুর রহমান। এ ছাড়াও তদন্ত সংস্থা ১১টি বই দাখিল করেছেন। এর মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনও রয়েছে। আছে ৬ জন শহীদের ৬টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ফারুক আহমেদ বলেন, চানখাঁরপুল এলাকায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য গত ২২শে এপ্রিল ৪ সপ্তাহ সময় আবেদন করেন প্রসিকিউশন। তখন ট্রাইব্যুনাল ২৫শে মে দিন ধার্য করেন। প্রতিবেদনটি প্রসিকিউশন অফিস থেকে ফর্মাল চার্জ আকারে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হবে। পরে বিচার শুরু করতে আইন অনুযায়ী ৩ সপ্তাহ সময় দেয়া হবে। এ সময়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। সুতরাং ঈদের পরেই শুরু হবে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া।

এদিকে গতকাল ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এসএম মইনুল করিম বলেন, এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ২৫শে মে জমা দেয়ার দিন ধার্য আছে। তবে কোনো কারণে যদি প্রতিবেদনটি জমা দেয়া সম্ভব না হয় তাহলে ট্রাইব্যুনালে সময় আবেদন করবে প্রসিকিউশন।

এই মামলায় শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেনের আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন বলেন, আজকে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমার দিন ধার্য আছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে আমরা আসামির জামিন চাইবো। আমাদের জামিন আবেদন ট্রাইব্যুনালে পেন্ডিং আছে। এছাড়া প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরে আমরা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবো। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হলে এখানে এখন পর্যন্ত অভিযোগ এসেছে ৩৩৯টির মতো। তদন্ত চলছে ৩৯টির। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়েছে, তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে হত্যা ও গুমসহ ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগে ২২টি (বিবিধ) মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট অভিযুক্ত ব্যক্তি শেখ হাসিনাসহ ১৪১ জন। তাদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক ৮৭ জন। ১৪১ আসামির মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, ৬২ জন পুলিশ (র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য) এবং অবসরপ্রাপ্ত বা বরখাস্ত করা সামরিক কর্মকর্তা ৯ জন। এদিকে গত ৫ই আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে গুলি করে হত্যার পর ৬ মরদেহ পোড়ানোর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে প্রসিকিউশনের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা হবে বলে জানা গেছে।মানবজমিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions