ডেস্ক রির্পোট:- খুন, ছিনতাই, অপহরণ, ডাকাতি ও নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা কমছেই না। এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-আতঙ্ক। রাত যত গভীর হয় রাজপথে অপরাধীদের তৎপরতা আরও বাড়ে। প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। পুলিশের হিসাব মতে, গত চার মাসে সারা দেশে বিভিন্ন অপরাধে মামলা হয়েছে ৬০ হাজার ১৮২টি। এ সব মামলার বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে খুন, ছিনতাই, অপহরণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনা অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়েছে। তবে কমেছে সিঁধেল চুরিসহ বেশকিছু অপরাধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুরোপুরি কঠোর ও আরও সক্রিয়তা জরুরি। এদিকে উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রগুলো বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। প্রতিটি অপরাধের ঘটনায় মামলা, তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতে জোর দিতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) মোট চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ৫১টি, অপহরণ ৩০৪টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ৭ হাজার ১৩টি, খুনের ঘটনা ১ হাজার ২৪৬টি। এদিকে গত বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) এ সব অপরাধের ঘটনা কিছুটা কম ছিল। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম চার মাসে চুরি-ছিনতাই ৩ হাজার ২৪৬টি, অপহরণ ২০০টি, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ৫ হাজার ৫৪৬, খুন ১ হাজার ০৬টি। এবং এ বছরটিতে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) মোট চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ৮ হাজার ৬৫৫টি, অপহরণ ৬৪২টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৭ হাজার ৫৭১টি, খুনের ঘটনা ৩ হাজার ৪৩২টি।
গত ১৩ই মে রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চ এলাকায় দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) নিহত হন। তিনি ঢাবি’র শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও স্যার এএফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গত ২১শে এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মো. আরমান হোসেন (২২) নামের এক তরুণ নিহত হন। এদিকে শুক্রবার রাতে মোহাম্মদপুরে দুর্গা মন্দির গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে মো. নূর ইসলাম (২৬) নামে এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত নুর ইসলাম বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পূর্ব সুজন কাঠি গ্রামের আবুল ফকিরের ছেলে। তিনি শংকরে থাকতেন।
৪ মাসের মামলার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সারা দেশে জানুয়ারিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৭১টি, দস্যুতা ১৭১টি, খুন ২৯৪টি, দ্রুত বিচার ৯১টি, দাঙ্গা ৮টি, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ১ হাজার ৪৪০টি, পাচার-অপহরণ ১০৫টি, পুলিশ লাঞ্ছনা-হামলা ৩৮টি, সিঁধেল চুরি ২৬২টি, চুরি-ছিনতাই ৭৯৭টি, অন্যান্য ৬৬০৩টি। ঢাকায় ডাকাতি ৮টি, দস্যুতা ৫৪টি, খুন ৩৬টি, দ্রুত বিচার ২৪টি, দাঙ্গা ৭টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২৭টি, পাচার-অপহরণ ৩১টি, পুলিশ লাঞ্ছনা-হামলা ১০টি, সিঁধেল চুরি ৬০টি, চুরি-ছিনতাই ১৪৬টি, অন্যান্য ৬৭৯টি। ফেব্রুয়ারিতে ডাকাতি ৭৪টি, দস্যুতা ১৫৩টি, খুন ৩০০টি, দ্রুত বিচার ৮৩টি, দাঙ্গা ১০টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১ হাজার ৪৩০টি, পাচার-অপহরণ ৭৮টি, পুলিশ লাঞ্ছনা-হামলা ৩৭টি, সিঁধেল চুরি ১৯৩টি, চুরি-ছিনতাই ৬৭৩টি, অন্যান্য ৬০৫৮টি। ঢাকায় ডাকাতি ৬টি, দস্যুতা ৪৬টি, খুন ৩৮টি, দ্রুত বিচার ১৮টি, দাঙ্গা ৯টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৪২টি, পাচার-অপহরণ ১৮টি, পুলিশ লাঞ্ছনা-হামলা ৭টি, সিঁধেল চুরি ৩৬টি, চুরি-ছিনতাই ১১৭টি, অন্যান্য ৬৩৮টি। পুলিশের তথ্য মতে, মার্চ মাসে ডাকাতির ঘটনা ৬০টি, দস্যুতা ১৭১টি, খুন ৩১৬টি, দ্রুত বিচার ৯০টি, দাঙ্গা ১৬টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ২ হাজার ০৫৪টি, পাচার-অপহরণ ৮৩টি, পুলিশ লাঞ্ছনা-হামলা ৯৬টি, সিঁধেল চুরি ২০৬টি, চুরি-ছিনতাই ৮৬৬টি, অন্যান্য ৭৮৪৯টি। ঢাকায় ডাকাতি ৩টি, দস্যুতা ৩৮টি, খুন ৩৩টি, দ্রুত বিচার ১২টি, দাঙ্গা ১৫টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৬২টি, পাচার-অপহরণ ১৯টি, পুলিশ লাঞ্ছনা-হামলা ২৩টি, সিঁধেল চুরি ৪৩টি, চুরি-ছিনতাই ১৩৭টি, অন্যান্য ৬৯৯টি। এপ্রিল মাসে ডাকাতির ঘটনা ৪৬টি, দস্যুতা ১৪৯টি, খুন ৩৩৬টি, দ্রুত বিচার ৮৮টি, দাঙ্গা ৩টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ২ হাজার ০৮৯টি, পাচার-অপহরণ ৮৮টি, পুলিশ লাঞ্ছনা-হামলা ৫২টি, সিঁধেল চুরি ২১৯টি, চুরি-ছিনতাই ৭১৫টি, অন্যান্য ৭ হাজার ৮৬২টি। ঢাকায় ডাকাতি ৭টি, দস্যুতা ৩৭টি, খুন ২৯টি, দ্রুত বিচার ১২টি, দাঙ্গা ১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৯১টি, পাচার-অপহরণ ১৯টি, পুলিশ লাঞ্ছনা-হামলা ৭টি, সিঁধেল চুরি ৪৮টি, চুরি-ছিনতাই ১১৮টি, অন্যান্য ৫৪০টি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, বর্তমান সময়ে অপহরণ, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী এবং শিশু নির্যাতনসহ সব ধরনের অপরাধগুলো অনেক কমে আসার কথা, এটাই আমরা প্রত্যাশা করেছি কিন্তু বাস্তবতা তার বিপরীত। বর্তমানে যে অপরাধগুলো হচ্ছে তার প্রেক্ষাপটে আমরা এটি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়ে অপরাধীদের শক্তি অনেক বেড়ে গেছে। দেশে একটি চক্রই তৈরি হয়েছে যারা অপরাধটি তার আয়-উপার্জনের উৎস মনে করছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অপরাধ দমাতে আরও কঠোর হতে হবে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন অপরামানবজমিনকেধের ঘটনা ঘটছে। এটি সংখ্যায় কখনো কমে আবার কখনো বাড়ে। দেশে সকল অপরাধের মাত্রা যাতে কমিয়ে আনা যায় এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে।মানবজমিন