প্রশাসনে আওয়ামী লীগ সুবিধাভোগীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হচ্ছে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
  • ৬৪ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- প্রশাসনে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী-লীগের নিয়োগ পাওয়া সুবিধাভোগী সচিবরা এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা থাকবে কি না সিদ্ধান্ত হবে আজ। পতিত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাসনে বঞ্চিত থাকা ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে অবশেষে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়েছে সরকার।

এর মধ্যে সচিব পদে ১১৯ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, গ্রেড-১ পদে ৪১ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন এবং উপসচিব পদে ৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তারপর অনেক কর্মকর্তা বঞ্চিত রয়েছে। এ সময়ে কমিটি ১৫৪০ জন কর্মকর্তা আবেদন করেছিলো। তা যাচাই-বাচাই করে পদোন্নতি দেয়া হয়। এখনো অনেকই পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছে। প্রশাসনে গতি ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানান উদ্যোগ নিলেও এখনো তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। প্রশাসনে পদোন্নতি হওয়া কর্মকর্তাদের আশঙ্কা বা ভালো পোস্টিং না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিগত সরকারের সঙ্গে থাকা কিছু সচিব বর্তমান সরকারে সাথে তাল মিলিয়ে একটি অংশ চরম অস্তিরতা শুরু করেছে। প্রশাসনে বঞ্চিতদের এখনো বঞ্চিত রাখা হয়েছে। বঞ্চিতদের পদোন্নতি ও পদায়নের দাবিতে গত ১৩ মে আওয়ামী সুবিধাভোগী পাঁচ সচিবকে দ্রুত অপসারণসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।

প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। এ সভায় প্রশাসনে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী-লীগের নিয়োগ পাওয়া সুবিধাভোগী সচিবরা এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের বিষয়টি চুড়ান্ত হতে পারে। এর আগে অর্থ উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব তাদের দাবিতে একমত পোষণ করেছেন। তাদের আশ্বাস দেয়ার পরে এ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। অপর দিকে আওয়ামী লীগ সরকারকে চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যে আমলারা সহায়তা করেছিল, ৫ আগস্টের পর তারা হারিয়ে গিয়েছিল। তারা নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছকু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির সভা হবে। এ সভায় প্রশাসনে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী-লীগের নিয়োগ পাওয়া সুবিধাভোগী সচিবরা এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের বিষয়টি রয়েছে। তবে হবে কি না তা জানা নেই।

গতকাল সোমবার গুলশানের হোটেল লেকশোরে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৫-২৬: নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সংলাপে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আগের আওয়ামী লীগ সরকারকে চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যে আমলারা সহায়তা করেছিল ৫ আগস্টের পর তারা হারিয়ে গিয়েছিল। তারা নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছে। দেবপ্রিয় বলেন, ৫ আগস্টের আগে চোরতন্ত্র কায়েম করা রাজনীতিকরা হারিয়ে গেছে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকার যে নীতি-কৌশল গ্রহণ করেছিল, তাতে কিছু ঘষামাজা ছাড়া কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের লক্ষ্য ছিল না।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির সভাপতি অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত থাকবেন, কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, কমিটির সদস্যসচিব তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিবে। জানা গেছে, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের কার্যক্রম স্থগিতের প্রজ্ঞাপন’কে যথাযথ সিদ্ধান্ত স্বাগত জানান এবং প্রশাসনের ভেতরে অবস্থানরত ‘ফ্যাসিস্ট দোসরদের’ অপসারণ ও ছয় দফা দাবিসহ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। একই সাথে আগামী সপ্তাহে সচিবালয় চত্বরে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বঞ্চিত সংগঠনের কার্যকারী সভাপতি ও সাবেক সচিব মো.আব্দুল খালেক পাঁচ সচিবকে দ্রুত অপসারণসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান। সাবেক সচিব বলেন, প্রশাসনে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী এ সরকারের আমলে যে সমস্ত কর্মকর্তারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন তাদের চুক্তি বাতিল করতে হবে। প্রশাসনে ফ্যাসিবাদীদের যে-সব দোসররা রয়েছে তাদের অপসারণ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবিএম আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে একাত্মতা পোষণ করে কর্মসূচি পালন করেছি। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদীদের দোসররা এখনো প্রশাসনে আছে। বর্তমান জনপ্রশাসন সচিব আমাদের হেয় করেছেন। তাদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এর আগে আওয়ামী সুবিধাভোগী পাঁচ সচিবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। সংগঠনটির নির্বাহী কমিটির তৃতীয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব কর্মকর্তারা হলেন, পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন, কৃষি সচিব মো.এমদাদ উল্লাহ মিয়া, সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব মফিদুর রহমান ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সংস্কার ও সমন্বয়) জাহেদা পারভীন। তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করাসহ পর্যায়ক্রমে তাদের অফিস ঘেরাও কর্মসূটি পালন করা হয়েছে বলে সাবেক সচিব মো.আব্দুল খালেক। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সদস্য সচিব ও সাবেক সচিব কাজী মেরাজ হোসেন, সাবেক সচিব আব্দুল বারীসহ প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকারী সভাপতি ও সাবেক সচিব মো.আব্দুল খালেক সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদায়ন ও পদেœানতি দেয়াসহ আওয়ামী সুবিধাভোগী পাঁচ সচিবকে দ্রুত অপসারণসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। পরে অর্থ উপদেষ্টার এবং জনপ্রশাসন সচিব আশ্বাস দিয়ে বলেছেন আজ জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ৫ সচিবের অপসাণের বিষয় সিদ্ধান্ত হবে। এবং চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে জনপ্রশাসন সচিব আশ্বাস দিয়েছেন। এটা দেখার পরে আমরা আজ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। অপরদিকে গতকাল ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক সচিব ফরিদ আহাম্মদকে বিদেশ যাওয়ার জন্য ডিপ্লোমেটিক পাসপোটের পরিবর্তে সাধারণ ই-পাসপোর্ট প্রদানে সরকারের অনাপত্তি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।ইনকিলাব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions