চট্টগ্রামে হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল, পাল্টে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
  • ২৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরে পাল্টে যাচ্ছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবার চিত্র। চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় একাধিক হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। নতুন এসব হাসপাতাল নির্মাণের পাশাপাশি দীর্ঘ দিন নির্মাণ কাজ থমকে থাকা হাসপাতালগুলোতেও নির্মাণে গতি ফিরছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে চট্টগ্রামে নতুন করে অন্তত পাঁচটি হাসপাতাল নির্মাণের পর চিকিৎসা সেবা শুরু হবে। এসব হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় বেশ কয়েকটি নতুন হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। যার মধ্যে রয়েছে- কালুরঘাটে একটি ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল হাসপাতাল। জেলার কর্ণফুলী উপজেলায় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, হাটহাজারীতে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন হাসপাতাল। অপরদিকে নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গত বুধবার (১৪ মে) নগরীর সার্কিট হাউসে এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ২৩ একর জমির দলিল হস্তান্তর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এদিকে রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা উন্মুক্ত হয়েছে সবার জন্য। রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পোষ্যদের পাশাপাশি এবার সর্বস্তরের লোকজন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল থেকে।

অনুমোদনের পরও চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ দীর্ঘ বছর পরও শুরু হয়নি। এসব হাসপাতাল নির্মাণে বাধা কাটিয়ে শিগগিরই নির্মাণ কাজ শুরুর আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ধরনের হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশে ১৫০ শয্যার একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। ২৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শিগগিরই এ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট এলাকায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ কাজ থমকে আছে। যেখানে রয়েছে চিকিৎসকদের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালুর লক্ষ্যে ১০টি ফ্যাকাল্টিসহ ৬৯টি চিকিৎসা বিভাগ। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। এ ছাড়াও চট্টগ্রামে ২০০ শয্যার একটি বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনাও দীর্ঘ দিন ধরে থমকে আছে। হাসপাতালটি নির্মাণে ২০১৭ সালে অনুমোদন হলেও জমি বরাদ্দ না হওয়ায় সেটির নির্মাণ কাজ এগোয়নি। বর্তমানে এ হাসপাতাল নতুন করে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে।

৮ বছর ধরে আলোর মুখ দেখছে না ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল

২০১৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রাম নগরীতে ২০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগ। ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট (পিএফডি) শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। যদিও পরে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নির্মাণ অধিশাখা থেকে বাকলিয়া মৌজার মোট দুই একর জমির প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হয়। কিন্তু ওই জমিতে স্থাপনা নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনাপত্তিপত্র গ্রহণ করতে গেলেই সৃষ্টি হয় জটিলতা। কেননা পছন্দের ওই জমির একটি অংশে সিডিএ’র মহাপরিকল্পনার আওতায় কর্ণফুলী রিভারফ্রন্ট রোড এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন শাহ আমানত ব্রিজ কানেক্টিং রোডের প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। অধিগ্রহণ করা এলাইনমেন্টের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট জমিতে (১ দশমিক ৪৬ একর) স্থাপনা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর অনাপত্তিপত্র প্রদান করে সিডিএ। এর মধ্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে একই জায়গায় ‘স্পোর্টস এরেনা’ নামে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেন জেলা প্রশাসক। ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি এ বিষয়ে তৎকালীন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী শিশু হাসপাতাল নির্মাণের নির্ধারিত জমিতে নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করতে চিঠি দেন। এখনও থমকে আছে প্রকল্পটি।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি জেলা সিভিল সার্জন হিসেবে নতুন যোগদান করেছি। শিশু হাসপাতালের বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন গোয়াছিবাগান এলাকায় ২৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ হাসপাতাল নির্মাণের কথা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে চীন সরকার। বাকি ১০৫ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। চলতি বছর এ হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে ২০২৬ সালের জুনে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণে যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে সব নির্মাণ সরঞ্জাম সরবরাহ করছে চীন। এ হাসপাতালে শিশুদের জন্য পাঁচটিসহ ২০টি বার্ন আইসিইউ শয্যা, ২৫টি এইচডিইউ শয্যা ও তিনটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার।

ছয় তলা বিশিষ্ট ইউনিটটির প্রথমতলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি, দোতলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), চারতলায় হাইডিপেন্সি ইউনিট (এইচইউ), চারতলায় ও পাঁচতলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড এবং ছয়তলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে কার্যালয়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘১৫০ শয্যা বিশিষ্ট বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণের মূল কাজ শিগগিরই শুরু হবে। ইতিমধ্যে ভৌত কাজ শুরু হয়েছে।’

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ চলতি বছরই শুরু হচ্ছে। এখানে থাকবে এক হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতাল। এক হাজার ৮৫৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭টি ভবন। এর মধ্যে ১৫ তলা ভবন ১১টি, ১০ তলা ভবন একটি, দ্বিতল ভবন দুটিসহ একতলা ভবন হবে ১৩টি। চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট সলিমপুরের ২৩.৯২ একর জমির ওপর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। পাশাপাশি বিভিন্ন চিকিৎসকদের পোস্টগ্র্যাজুয়েট কোর্স চালুর লক্ষ্যে ১০টি ফ্যাকাল্টিসহ থাকবে ৬৯টি চিকিৎসা বিভাগ।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত চার বছর। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ভবন থেকে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (এইচইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মনি কুমার শর্মা বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের ভৌত কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরেই মূল কাজ শুরু হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকবে।’

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানান, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও কর্ণফুলী উপজেলায় পৃথক দুটি হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কালুরঘাটে একটি ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। গত বুধবার (১৪ মে) চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

সেখানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আমি দেখেছি, যেখানে ধারণক্ষমতা ২২০০, সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার রোগী ভর্তি রয়েছে। এমনকি ব্রেন সার্জারির রোগীকেও ফ্লোরে শুইয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এমনকি টয়লেটের পাশেও রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই বাস্তবতা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হাটহাজারী ও কর্ণফুলীতে পৃথক দুটি হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হাটহাজারী উপজেলায় দুটি পৃথক ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল এলাকায় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটসহ একাধিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে এসব হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে চিকিৎসা সেবা চালুর আশা করা যাচ্ছে। এসব হাসপাতাল চালু হলে এ অঞ্চলের লোকজন খুব সহজেই চিকিৎসা সেবা পাবে।’বাংলা ট্রিবিউন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions