অস্থিরতা কাটছে না শিক্ষাঙ্গনে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
  • ৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে অস্থিরতা থামছেই না। একের পর এক আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ছে ক্যাম্পাসগুলো। নানান দাবিতে মাঠে থাকছে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকার দুই বিশ্ববিদ্যালয় এখন উত্তাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কে। প্রায়শই বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজ। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে চলমান আন্দোলনও মাঝে মধ্যেই মাথা চাড়া দিচ্ছে। পলিটেকনিক ইন্সটিটিউশনগুলো দীর্ঘদিন ধরে অচল। দাবি আদায়ে সড়কে বেশ কয়েকবার নামেন ডিপ্লোমা নার্সিং শিক্ষার্থীরা। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিসি অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে সফল হন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও প্রায়শই আন্দোলন হচ্ছে। এপ্রিলে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি, ডিন ও বিভাগীয় প্রধানরা। আন্দোলনে রয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

সম্প্রতি শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ফের অস্থির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গত ১৩ই মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদল নেতা সাম্য। মুহূর্তে ফুঁসে ওঠে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছাত্রদল এবং বাম সংগঠনের নেতাকর্মীদের সেই থেকেই মাঠে বেশ শক্ত অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
সাম্য হত্যাকাণ্ডের পরেই ভিসি এবং প্রক্টরকে দায়ী করে ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো। এমনকি ভিসির সঙ্গে কথা-কাটাকাটিও হয়েছে তাদের।

এদিকে ১৫ই মে, বাম সংগঠন এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ভবনের তালা দেয়ায় বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীরা। উপরন্তু অভিযোগ এসেছে লাইব্রেরিতে অধ্যয়নরত অবস্থায়ও সকলকে বেরিয়ে যেতে বলেছে বাম এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। যদিও তাদের পক্ষ থেকে এটি অস্বীকার করা হয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টানা তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনশন কর্মসূচি পালন করে যাবেন। অনশন কর্মসূচিতে বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাবেক শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করেছেন।

এর আগে বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউসিজি)’র সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক করেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা বরাবর লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। ‘শান্তিপূর্ণ’ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের হামলায় শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিকসহ অনেকেই আহত হন। গণ-অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীন সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীকে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়।

তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও পরবর্তীতে হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবিতে একদফা বৃদ্ধি করা হয়। ফলে মোট চার দফা দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। দুই দিনের অবস্থান কর্মসূচির পর শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন চলমান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের তিন দাবি হলো- আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
একাডেমিক কার্যক্রম শুরু, নিরপেক্ষ নতুন তদন্ত কমিটি গঠন ও পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নিয়ে আবারো আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসেন। পরে ভেতরে প্রবেশ করে ফ্লোরে বসে পড়েন তারা। শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে গত সোমবার ৩৭ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কুয়েট কর্তৃপক্ষ। ১৫ই মে বিকাল ৫টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। এ সময় তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে প্রহসনের অভিযোগ তুলেছেন তারা।

কুয়েটের নবনিযুক্ত অন্তর্বর্তী ভিসি- শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করলেও সংকট নিরসন হয়নি। এ নিয়ে টানা ৮৬ দিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে।
উল্লেখ্য, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে দেড় শতাধিক আহত হন। ওইদিন কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী কুয়েটের অপসারিত ভিসি এবং প্রো-ভিসিকে মেডিকেল সেন্টারে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ ঘটনার পর থেকে কুয়েটে ক্লাস, পরীক্ষাসহ একাডেমিক সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এরপর বেশ কয়েকদিন ধরেই চলে অস্থিরতা। এরপর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার ভিসিকে অপসারণ করেন।

নারী হেনস্তা ও সমকামিতায় অভিযুক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক হাফিজুল ইসলামের স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলন চলছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইবনে সিনা ভবনে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এর আগে সকাল ১০টা থেকে রবীন্দ্র-নজরুল ভবনের গগন হরকরা মিলনায়তনে ২ ঘণ্টাব্যাপী ওই শিক্ষকের অভিযোগ ও শাস্তি পর্যালোচনার জন্য ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ড. আশরাফুর রহমানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদ জুমা ফের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, এর আগে তদন্ত কমিটির কছে ভুক্তভোগীর জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্তে হাফিজের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এর পরেও তাকে স্থায়ী বহিষ্কার না করে আবারো তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ড. আশরাফুর রহমান বলেন, যেহেতু বিষয়টি সাব-জুডিস অবস্থায় আছে সেহেতু কোনো মন্তব্য করবো না।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ই অক্টোবর হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ, কথা না শুনলে মার্ক কম দেয়া ও ছাত্রদের জোরপূর্বক সমকামিতায় বাধ্য করাসহ নানা অভিযোগ ওঠে। পরে তার অপসারণের দাবিতে প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ভিসি’র কাছে তারা লিখিতভাবে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পায়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে গত ২২শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় তার বার্ষিক একটি ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। তবে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা হাফিজের এই শাস্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাফিজকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানায়। এরই প্রেক্ষিতে সর্বশেষ সিন্ডিকেটে শাস্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

সাত কলেজ নিয়ে কালক্ষেপণ করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ডেকেছেন সংবাদ সম্মেলন। এ থেকে আসতে পারে নতুন কর্মসূচি। শনিবার বিকাল ৪টায় রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের ১ নম্বর গেটে এ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের অর্গানাইজিং উইং জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের দাবি জানিয়ে আসছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোতে ধীরগতি, দায়িত্বহীনতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলন থেকে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে আভাস দেয়া হয়।

দীর্ঘ আন্দোলন শেষে কিছুটা শান্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। আওয়ামীপন্থি বিতর্কিত শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারীদের নতুন নতুন দায়িত্ব দেয়া ও পদায়ন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বাজেট আনতে ব্যর্থ হওয়া, যথাসময়ে ফাইলে স্বাক্ষর না করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার মনপুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. মনিরুল ইসলামের চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও রেজিস্ট্রার হিসেবে বহাল রাখায় ভিসি’র প্রতি ক্ষোভ থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।

ছয় দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে সারা দেশের পলিটেকনিক কলেজগুলোতে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে একাডেমিক কার্যক্রম। সম্প্রতি তারা মহাসড়ক অবরোধ করে পুরো রাজধানীবাসীকে যানজটে নাকাল করেছেন। গত ৭ই মে পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন কর্মসূচি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ ও পরীক্ষা বর্জন করার ঘোষণা দেয়া হয়। মানবজমিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions