রাঙ্গামাটি :- দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর বন্ধ থাকার পর রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিলস পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনদীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর বন্ধ থাকার পর রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিলস পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন
দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর বন্ধ থাকার পর রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিলস পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি)। জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ টেক্সটাইল মিলস একসময় কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর পদচারণায় মুখর থাকতো। পরে এটি বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে চালুর খবরে সবার মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। এখানে স্থানীয় হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিটিএমসির কর্মকর্তা ও কারখানা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে মিলসটিতে যেসব সরঞ্জাম রয়েছে, সেগুলো অনেক পুরোনো। এতে উৎপাদিত সুতার বাজারে চাহিদা কম। পুরোনো মেশিনের বিদ্যুৎ খরচও বেশি। এ কারণে বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে স্থাপনাগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিটিএমসির কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে বিনিয়োগকারী চাইলে সবকিছু পরিবর্তন করে ফেলতে পারবেন। সুতা থেকে তৈরি পোশাক—যেকোনো ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সরকারের কোনও বাধা থাকবে না।
কারখানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩১ একর জায়গায় রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিলস স্থাপিত। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন সরকার এ অঞ্চলের বেকার সমস্যা দূরীকরণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এটি স্থাপন করে। ওই বছরই উৎপাদন শুরু হয়। বিটিএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন সুতা তৈরির কারখানাটি শুরুতে ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু পরে সরকারি ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে মিলসটি লোকসানে পড়ে। অব্যাহত লোকসানের মুখে ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। তখন কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক মিলে জনবল ছিল এক হাজারের মতো।
মিলসটি পুনরায় চালু করতে সম্প্রতি অর্থ, শিল্প ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল কারখানাটি পরিদর্শন করেছেন। সেইসঙ্গে নতুন করে চালুর কথা বলেছেন তারা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কারখানাটিতে আবার প্রাণচঞ্চলতা ফিরে আসবে। এটা চালু হলে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কারখানা ভবনের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। সেখানে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। ছাদ চুইয়ে পড়া পানি থেকে যন্ত্রপাতি রক্ষা করতে কোথাও কোথাও দেওয়া হয়েছে পলিথিন। এরপরও পানি পড়ে যন্ত্রে মরিচা ধরেছে।
কারখানার সাবেক শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে তুলা থেকে উৎপাদন করা হতো উন্নতমানের সুতা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন না করাসহ বেশি কিছু কারণে বেড়ে যায় লোকসান। ফলে ২০০৭-০৯ সালে ধাপে ধাপে শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানো হয়। এরপর দুই দফায় সার্ভিস চার্জের ভিত্তিতে কোনোরকমে কারখানাটি চালু করা হলেও পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে লাভের মুখ না দেখায় সফলতা আসেনি। পরে কারখানাটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
কারখানার সাবেক কর্মচারী মো. কাশেম মিয়া বলেন, ‘কারখানাটি যখন বন্ধ হয়েছিল তখন আমার চাকরির বয়স ছিল ১৮ বছর। ওই সময় হঠাৎ চাকরি হারিয়ে অন্যদের মতো আমিও বিপাকে পড়েছি। তখন মিলস কর্তৃপক্ষ সবাইকে স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠান। কিছু টাকা দিয়েছিল। তা দিয়ে মুদি ব্যবস্যা শুরু করি। এখনও এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছি। মিলসটি চালু হলে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’
রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিলসের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘বর্তমানে কারখানার যে বয়স এবং যন্ত্রপাতির যে অবস্থা, তা দিয়ে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব নয়। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে যে পরিমাণ উৎপাদন হতো তাতে লাভ না হওয়ায় তখন বন্ধ রাখা হয়। পরে দুই দফায় ২০২১ সাল পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ পদ্ধতির মাধ্যমে চালু থাকলেও এসব যন্ত্রপাতির কারণে লাভ না হওয়ায় চালু করা হয়নি। ১৯৮৩ সাল থেকে এখানে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছিল। ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে কীভাবে চালু করা যায়, তা নিয়ে কয়েক দফায় উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন টিম সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম জাহিদ হাসান বলেন, ‘তিন জেলার মধ্যে এটি একমাত্র টেক্সটাইল মিলস। যার মাধ্যমে এ অঞ্চলের অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে এটি আবার চালুর কাজ শুরু হয়েছে। কীভাবে চালু করা যায়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি) মাধ্যমে চালু করা যায় কিনা সেটিও ভাবছি আমরা। যাতে এ
অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কারখানাটির ধরন পরিবর্তন করে নতুনভাবে চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এরপর এটি চালুর কাজ শুরু করবো আমরা।’বাংলা ট্রিবিউন