ডেস্ক রির্পোট:- সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদন আদালত গ্রহণ করায় শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য, সাবেক ১৭ মন্ত্রী ও ১৭ সংসদ সদস্য তাঁদের উৎসবহির্ভূত সম্পদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার এবং দলীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে উৎসবহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর দুদক তদন্তের স্বার্থে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করে।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া শেষে রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত হলে এসব অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।
গত ৯ এপ্রিল শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে থাকা ১৬ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত।
এর আগে ১১ মার্চ শেখ হাসিনার ছেলে জয় ও মেয়ে পুতুলের নামে থাকা ধানমণ্ডির সুধা সদন বাড়ি জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা সিদ্দিক, রেহানার সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও টিউলিপ সিদ্দিকের নামে থাকা জমিসহ বাড়ি ও আটটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
গত ৪ মার্চ পুতুলের নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান সূচনা ফাউন্ডেশনের ১৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
১৮ মার্চ হাসিনা, রেহানা, জয়, পুতুল ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে থাকা ৩১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। এসব হিসাবে ৩৯৪ কোটি ৬০ লাখ ৭২ হাজার ৮০৫ টাকা রয়েছে।
আওয়ামী সরকারের সাবেক ১২ মন্ত্রী ও পাঁচ প্রতিমন্ত্রীর নামে থাকা ৫১০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাবেক এক মন্ত্রী ও তিন প্রতিমন্ত্রীর নামে থাকা দুই হাজার বিঘা স্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
এ ছাড়া সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন ও সাবেক মন্ত্রী আমীর হোসেন আমু।
সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কারো কারো ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত।
সাবেক ১৭ এমপির ১২২০ ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ : সাবেক সংসদ সদস্য ও বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্য ও তাঁর সহযোগীদের নামে থাকা ৩৭২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। এসব হিসাবে ৫৫ কোটি ছয় লাখ ৪৭ হাজার ১১৭ টাকা রয়েছে।
তাঁর নামে লন্ডনে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ, বিদেশি দুটি ব্যাংক হিসাব ও কম্পানির শেয়ারও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি স্থাবর সম্পদ ও মিরপুরের একটি পাঁচতলা বাড়ি জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে ৫৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর স্ত্রী নূরজাহান বেগমের আটটি ফ্ল্যাট, ৫২ বিঘা জমি ও চারতলা ভবন জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর নামে থাকা শেয়ার ও ৩০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
এই তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের জান্নাত আরা হেনরী, বগুড়া-২ আসনের মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, জামালপুর-৩ আসনের মির্জা আজম, ঢাকা-৬ আসনের সাঈদ খোকন, কুমিল্লা-৬ আসনের আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সোলায়মান হক জোয়ার্দার ওরফে ছেলুন জোয়ার্দার।
আরো রয়েছেন চট্টগ্রাম-১৬ আসনের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা-১৩ আসনের সাদেক খান, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম, যশোর-৩ আসনের কাজী নাবিল আহমেদ, কুমিল্লা-১ আসনের সুবিদ আলী ভূঁইয়া, রাজশাহী-৩ আসনের ওমর ফারুক চৌধুরী, নরসিংদী-২ আসনের আনোয়ারুল আশরাফ খান।
তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও কারো কারো ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।কালের কণ্ঠ