আ.লীগের হাতে হিন্দু নির্যাতন ও মূর্তি ভাঙচুর বৈধ! মেনে নিলো দিল্লিও!

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৩৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার মুখাকৃতি বানানোর জেরে চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন ছাত্র ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই ঘটনাকে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং উদ্বেগ জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

এদিকে, অগ্নি সংযোগের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের আট সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার চারদিন পার হলেও এখনো রহস্যজনকভাবে এ ব্যাপারে নীরব রয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এই ঘটনায় দিল্লির পক্ষ থেকেও জানানো হয়নি কোন প্রতিক্রিয়া। নীরব রয়েছে বাংলাদেশবিরোধী প্রপাগাণ্ডা নিয়ে পড়ে থাকা দেশটির হলুদ মিডিয়াগুলি।

বাংলাদেশে হিন্দুসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মায়ের কোলের ন্যায় অত্যন্ত নিরাপদে বসবাস করে আসছে। তা সত্বেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর কোন নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়াই সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে অব্যাহতভাবে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ‌। একই ধরনের উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশের বিষয়ে নাক গলিয়ে আসছে ভারতও। পতনের পর গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগও এই সংখ্যালঘু ট্রাম্প কার্ড খেলে আসছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যুতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ‌, আওয়ামী লীগ ও ভারতের কূটীলতা দিনের মতো আরও স্পষ্ট হয়েছে। কেবল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই তারা বিভিন্ন সময় অন্যায়ভাবে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের প্রপাগাণ্ডাগুলোকে। দিল্লি এই নীরবতা দিয়ে প্রমাণ করলো, বাংলাদেশে যেকোনো হিন্দু নির্যাতন ও মূর্তি ভাঙচুরে তাদের সেবাদাস দল আওয়ামী লীগ জড়িত থাকলে তা ন্যায্য।

এদিকে,মমানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন, চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মানবেন্দ্র ঘোষ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি আরও বলেন, আটককৃতদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা মীর মোহাম্মদ রাফি ওরফে সিজন নামের একজন অগ্নিসংযোগের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল মিশন কমপ্লিট ব্রো। আশা করা যাচ্ছে তাকে কাছ থেকে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বিশেষত হিন্দু ধর্মাবলম্বী কারোর বিরুদ্ধে জমি জায়গা সংক্রান্ত এবং ব্যক্তি ও পারিবারিক বিরোধের জেরে কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের যে কোনো ধরনের হামলাকে সাম্প্রদায়িক বলে দাবি ও প্রচার করে আসছে দিল্লির সেবাদাস গোষ্ঠী। এমনকি বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সৃষ্ট আগুনকেও সাম্প্রদায়িক হামলা দাবি করে গলা ফাটাতে দেখা গেছে।

কিন্তু এবার চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় নিশ্চুপ তারা। উল্টো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের বিভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে মানবেন্দ্র ঘোষের ছবি পোস্ট করে নানা রকম হুমকি ধামকি দেয়া হয়।
চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ জানান, পহেলা বৈশাখের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সরাসরিভাবে তিনি হুমকির মধ্যে ছিলেন।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাগুলো নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নেই বলে সম্প্রতি জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সংগঠনটির প্রতিবেদনকে মোটিভেটেড বর্ণনা করে তিনি বলেন, মোটিভেটেড রিপোর্টের ওপরে বাংলাদেশকে অনেকেই পোর্ট্রেট করতে চাচ্ছে।
সেখানে দেখাতে চাচ্ছে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হচ্ছে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নিয়মিত অপরাধের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হিসেবে তুলে ধরছে বলে সেখানে মন্তব্য করেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে এই ধরনের প্রজেকশনটা করে এর আগে আরও দুটো প্রতিবেদন তারা দিয়েছিল। সেগুলো নিয়ে পুলিশ কেস টু কেস তদন্ত করে দেখে দুয়েকটা বাদে বাকিগুলোর ক্ষেত্রে সামপ্রদায়িক কারণ ছিল না।তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের ১১টি ঘটনার তদন্ত করেছে পুলিশ। তবে একটির সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাদের প্রত্যেকটা প্রতিবেদন স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করা হয়েছে। আমরা দেখছি সংগঠনটির প্রতিবেদন তৈরিতে স্বচ্ছতা নেই। তাদের প্রতিবেদন ধরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা হচ্ছে।

সাংবাদিক রাজিব আহমদ লিখেছেন, মানবেন্দ্র ঘোষের পক্ষে দাঁড়াবে না হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। কারণটা নীচে ব্যাখ্যা করা হলো।গত বছরের ডিসেম্বরে নিউজের অনুসন্ধানে পেয়েছিলাম, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ রিপন শীলের মৃত্যুকে সংখ্যালঘু নিপীড়ন বলে দাবি করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ! ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করতে এসে নিহত বন্দুকধারী আওয়ামী লীগ নেতা হারাধর রায় হারা মৃত্যুকেও সংখ্যালঘু নিপীড়ন বলে দাবি করা হয়। ময়মনসিংহের ত্রিশালে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সৃষ্ট আগুনে সাতটি দোকান পুড়ে যাওয়া, ঢাকার সবুজবাগে দুইজন আত্মীয় হিন্দুর মধ্যে মারামারিতে দোকান ভাঙচুরকেও সংখ্যলঘুদের ওপর হামলা বলে দাবি করা হয়।

ঐক্য পরিষদের দাবি ছিল, ৪ আগস্ট থেকে ২০১০টি হিন্দু নিপীড়ন হয়েছে। এ প্রতিবেদন নিয়ে ভারতীয় গোদি মিডিয়া দিনের পর দিন মিথ্যাচার করেছে। সমকাল ২৯৬টি ঘটনার অনুসন্ধান করে পেয়েছিল, ১৩৮টি ঘটনা গায়েবি। মানে ঘটেনি। বাকিগুলোর অধিকাংশ ছিল রাজনৈতিক। আক্রান্তরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই তাদের ওপর নিন্দনীয় হামলা হয়েছিল।

ঠিক একই কারণে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন সংখ্যালঘু নিপীড়ন নয়। অবশ্যই নয়। নববর্ষের মোটিফ তৈরি করায় শেখ হাসিনার সমর্থকরা যেভাবে মানবেন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে, তাঁর বাড়িতে আগুন দিয়েছে, এটা ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু ধরুন, ঘৃণা ছড়ানোর কাজটি শেখ হাসিনার সমর্থকরা না করে অন্য কেউ করেছে। কিংবা রাজনৈতিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত দ্বন্ধ শত্রুতার জেরে মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। তাহলে একে সংখ্যালগু নিপীড়ন আখ্যা দিয়ে বিবৃতি কর্মসূচি দিয়ে একাকার করে ফেলত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। দিনরাত এক করে দিত ভারতীয় গোদি মিডিয়া। সামাজিকমাধ্যম ভিত্তিক বাংলাদেশি ভারতীয় নানা সংগঠন প্রতিবাদে সয়লাব করে ফেলত। কিন্তু যখনই নিপীড়ক শেখ হাসিনার সমর্থক, তখনই চুপ।

হিন্দু ভাই বোনেরা : আপনার যতই ধার্মিক হিন্দু হন না কেন, শেখ হাসিনা ভারত এবং ঐক্য পরিষদ আপনাদের ওন করবে না, যদি আপনারা আপার সমর্থক না হন। আপাকে সমর্থন না করলে বরং পেটাবে। শত্রু মিত্র চিনতে শিখুন। আসুন ধর্ম নির্বিশেষে ফ্যাসিবাদকে মোকাবেলা করি।

সরকারের দায়িত্ব, শুধু মানবেন্দ্র ঘোষ নয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর যত হামলা হয়েছে, এর কঠোর বিচার করতে হবে। মানবেন্দ্র ঘোষের ঠিকানা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে কারা হামলার উস্কানি নিয়েছে, তা একদম স্পষ্ট। দেশে যেগুলো আছে, তাদের ধরুন। কঠোর শাস্তি দিন।

ফেসবুকে জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি ও সেখানে থাকা দেবী মূর্তি উড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে হিন্দু- বৌদ্ধ -খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে অতি আগ্রহী সাউথ ব্লকের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।ইনকিলাব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions