ডেস্ক রির্পোট:- পহেলা বৈশাখের উন্মাদনা ছিল ঘরে ঘরে। দীর্ঘ দেড় যুগ পর দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষ মুক্ত বিহঙ্গের মতোই ১৪৩২ সনকে স্বাগত জানিয়েছেন। ওই আনন্দ-উল্লাসের মধ্যেও আলোচনা ছিল ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ কী চূড়ান্ত হবে? বৈঠকের মাধ্যমে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘টাইমফ্রেম’ ধোঁয়াশা কাটবে এমন প্রত্যাশা ছিল সবার। নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে হবে নাকি আগামী বছরের জুনে হবে সেটার চেয়েও নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ তথা ‘প্রকৃত সময়’ জানতে উদগ্রীব ছিল আমজনতা। কিন্তু মানুষের সেই প্রত্যাশায় ছাই দিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই’ বক্তব্য। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে পরিষ্কার করে বলেছি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে।’ যদিও বিএনপির এ বক্তব্যের পরপরই আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সরকারের কালবিলম্বের বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না, তেমন নয়। আমরা বলেছি, এই সময়ের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করা হবে।’ আইন উপদেষ্টা ‘নির্বাচন কালবিলম্বের ইচ্ছা নেই’ বার্তা দিলেও অনেকেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। গত ১৫ এপ্রিল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশি জনগণই নির্ধারণ করবে। ওই দেশে গণতন্ত্রও একটি ইস্যু। এসব ইস্যু মোকাবিলায় জনগণের পদক্ষেপই ম্যাটার করে’।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন অপরিহার্য। তবে বিএনপির ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামা উচিত হবে না। কারণ ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলেও মার্চ মাসের মধ্যেই হবে। বিএনপি আন্দোলনে নামলে মানুষ মনে করবে ভারত ও আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপশনে বিএনপি মাঠে নেমেছে। তখন জামায়াত-এনসিপি ড. ইউনূসের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে ‘মার্চ ফর ঢাকা’ কর্মসূচি করলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হবে। হিন্দুত্ববাদী ভারত ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্যই বিএনপির উচিত ড. ইউনূসের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। বড় দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে তা সম্ভব’। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘এনসিপি ও জামায়াতের কোনো গণভিত্তি নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা হবে আত্মঘাতী’। গতকাল জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা আগামী রমজানের আগে নির্বাচন দাবি করছি’। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ন্যূনতম সংস্কার নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের জন্য কাজ করছি। এই পরিবর্তনগুলো ছাড়া নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সেই নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি না, সেটাও বিবেচনাধীন থাকবে’।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্যে পরিষ্কার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ দেয়া হয়নি। তবে আগামী ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। আসিফ নজরুল দাবি করে বলেন, ‘বৈঠকে তাঁদের (বিএনপির প্রতিনিধিদল) হ্যাপি মনে হয়েছে। তারা অনেক বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন এবং তাদের সন্তুষ্ট মনে হয়েছে।’ অথচ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা কোনো সুনির্দিষ্ট ডেডলাইন তাঁদের দেননি। তিনি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন’। বিএনপির প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে প্রধান উপদেষ্টা কিছু বলেননি। তবে তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করবেন না, তা বলেননি। বিএনপি এতে সন্তুষ্ট হয়নি’।
ডিসেম্বরে নির্বাচন করা না গেলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব নয় মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তারা বলছেন, ডিসেম্বরের পর মার্চে রোজা শুরু হবে। মে-জুন পর্যন্ত বর্ষাকাল। এছাড়াও নানামুখী প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস রয়েছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর স্কুল-কলেজ-মাদরাসার পরীক্ষা। অতএব চলতি বছরের ডিসেম্বর পার করলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হবে সে নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া নির্বাচন যতই পেছাবে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট ততই বাড়বে। একদিকে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকা ভোটাররা অধৈর্য হয়ে পড়বেন অন্য দিকে চানক্যনীতির ভারতের ষড়যন্ত্রের ডালপালা ছড়াতে থাকবে। ভঙ্গুর অর্থনীতির গতিধারা আরো নিম্নগামী হবে। ফলে বিএনপি যে আশঙ্কা করছে তা অমূলক নয়।
অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তথা নির্বাচিত সরকার ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। বিনিয়োগকারীরা চান তাদের পুঁজি বিনিয়োগ করে লাভসহ তুলে নিতে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া তা সম্ভব নয়। হাসিনা পালানোর পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অর্থনৈতিক অগ্রগতি হলেও সংকট কাটেনি। বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে রয়েছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না, বেকারত্ব বাড়ছে। ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ প্রবাদের মতো শেখ হাসিনার আমলের পরিসংখ্যান নির্ভর অর্থনীতি এখনো বিদ্যমান। হিন্দুত্ববাদী ভারতের মোদি এবং পলাতক হাসিনা এখনো বাংলাদেশ ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়েই যাচ্ছেন। এ অবস্থায় বিএনপির মতো জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মাঠে নামলে ‘বিপর্যয়’ নেমে আসবে। কারণ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াত যতই বাগাড়ম্বর করুক এবং গণমাধ্যম তাদের পক্ষে যতই প্রচারণা করুক না কেন জনসমর্থনের দিকে তাদের তেমন অবস্থান নেই। সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন কোনো কাজে আসবে না।
‘মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে’ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দিশেহারা জাতিকে দিশা দেখিয়েছেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করে জাতিকে রক্ষা করেছেন। দেশের মানুষ মনে করেন ড. ইউনূস নেতৃত্ব গ্রহণ না করলে হিন্দুত্ববাদী ভারত চরম ক্ষতি করতো বাংলাদেশের। ভারতীয় আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করা ড. ইউনূসকে মানুষ দেখতে চায় তিনি সরকার থেকে চলে যাওয়ার পরও যেন এমন সম্মান নিয়ে থাকতে পারেন। সফল নেতৃত্ব দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে সেটা সম্ভব। তার সে আন্তরিকতার অভাব আছেÑ মানুষ সেটা মনে করে না। কিন্তু কিছু উপদেষ্টার ‘ক্ষমতার লালসা’ প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করা হলে বা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা হলে তার উজ্জ্বল ইমেজ কালিমালিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ অনেকেই বলছেন, ড. ইউনূস পরিচ্ছন্ন এবং নির্লোভ ব্যক্তিত্ব। কিন্তু তার সরলতার সুযোগ নিয়ে সরকারে কিছু উপদেষ্টা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার ধান্দা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একজন উপদেষ্টা কয়েক দিন আগে বলেছেন, ‘জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়’। আরেক জন উপদেষ্টা বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার অনির্বাচিত নয়’। সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক চলছে। সূত্র মতে, ড. ইউনূসের প্রতি ১৮ কোটি মানুষের শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাস থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকের প্রতি মানুষ সন্দিহান। সরকারের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের ১৭ জনই বিদেশি নাগরিক। একাধিক উপদেষ্টা রয়েছেন যারা পশ্চিমা দেশের টাকায় এনজিও প্রতিষ্ঠা করে বিদেশিদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে অভ্যস্ত। কেউ হটকারী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র জাসদের কর্নেল (অব:) তাহেরপন্থি হিসেবে ছিলেন, কেউ কেউ মস্কো ও দিল্লিতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরার রাজনীতি করেছেন। আবার উপদেষ্টাসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেছেন অথচ তাদের নাম আগে কেউ শোনেনি। এমনকি পতিত হাসিনার অলিগার্ক ছিলেন এমন ব্যক্তিও উপদেষ্টা হয়েছেন। আমলাদের মধ্যে তো এখনো হাসিনা অনুসারীর সংখ্যা বেশি। উপদেষ্টাদের অনেকের অতি কথনের কারণে বিতর্কিত হয়েছেন। কেউ কেউ সমালোচনার মুখে পড়েছেন। কারো কারো বিরুদ্ধে এনসিপিকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ উঠেছে। এদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। শুধুমাত্র ড. ইউনূসের মতো ব্যক্তিত্ব প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকায় মানুষ তাদের উপদেষ্টা হিসেবে মেনে নিয়েছে। নির্বাচন যতই বিলম্বিত হবে একদিকে সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভারতীয় ষড়যন্ত্র’ ডালপালা ছড়াবে। অন্যদিকে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকা জনগণ অধৈর্য হয়ে পড়লে সরকারের দায়িত্বশীল বিতর্কিত উপদেষ্টা ও কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেগুলো ছড়িয়ে পড়বে। অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র সমন্বয়ক বর্তমানে এনসিপি নেতাদের হাত ধরে ক্ষমতায় আসার দাবি করলেও এনসিপি সরকারের রাজনৈতিক ভ্যানগার্ড হয়ে টিকতে পারবে না। কারণ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী দূরের কথা তাদের কোনো গণভিত্তি গড়ে ওঠেনি। আর এনসিপির সুরে সুর মিলিয়ে রাজনীতি করা জামায়াত কার্যত জনসমর্থনহীন কর্মীনির্ভর দল। অন্যদিকে বিএনপি বড় দল। অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বিঘেœ পথ চলতে বিএনপির সমর্থন অপরিহার্য। বিএনপিকে বিক্ষুব্ধ করে সুস্থিরভাবে ক্ষমতায় থাকা প্রায় অসম্ভব। বিএনপি ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, তারা ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামবে। বিএনপি মাঠে নামলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সত্যিই কঠিন হবে। কারণ হাসিনা রেজিমে ১৫ বছর খুন-গুম-জুলুম-নির্যাতন ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অর্ধলাখ মামলা দিয়েও বিএনপিকে দমানো যায়নি।
এদিকে নির্বাচন ইস্যুতে সেনাবাহিনীর প্রধান তার অবস্থান অনেক আগেই পরিষ্কার করেছেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ উপলক্ষে মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমার অন্য কোনো আকাক্সক্ষা নেই। আমার একটাই আকাক্সক্ষা দেশ এবং জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে ছুটি নিতে চাই। আই হ্যাড এনাফ লাস্ট সেভেন-এইট মান্থস, আই হ্যাড এনাফ। আমি চাই, দেশ এবং জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসব। আমরা দেশে একটা ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। আমি যতবারই ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছি, কমপ্লিটলি অ্যাগ্রিড উইথ মি। দেয়ার শুড বি ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশন, অ্যান্ড দ্যাট ইলেকশন শুড বি উইথইন ডিসেম্বর, অর ক্লোজ টু দ্যাট। যেটা আমি প্রথমেই বলেছিলাম যে, ১৮ মাসের মধ্যে একটা ইলেকশন’।
ভারতের দাসী হাসিনা এখনো প্রতিদিন হম্বিতম্বি করছেন। তিনি যেকোনো সময় দেশে ফেরার ঘোষণা দিয়ে দলের নেতাদের সংঘাতে জড়ানোর উস্কানি দিচ্ছেন। হিন্দুত্ববাদী ভারত ও হাসিনার ব্যাপারে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ। কাজেই হাসিনা যাতে কোনো সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে বাংলাদেশ কোন পথে চলবে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। অতএব জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে মাঠে ঠেলে দেয়া যেমন অনুচিত তেমনি বিএনপিকেও হিসাব করেই এগোতে হবে। এ প্রসঙ্গে ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ইংরেজিতে একটি প্রবাদ রয়েছে, ‘লুক বিফোর ইউ লিভ (ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না)’। ৫ আগস্টের পর ছাত্র সমন্বয়করা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল। সে প্রস্তাব মেনে নিলে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনরত ছোট দলগুলোর কিছু উপদেষ্টা পেলেও মূল দায়িত্ব চলে যেত বিএনপির হাতে। তখন বিএনপি যেটাই চাইতো এখন সেটাই হতো। জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি রাজনৈতিক ভুল করেছে। হাসিনা পালিয়েছে। এখন বিএনপিকে সেদিনের ভুলের মাসুল দিতে হচ্ছে ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামার হুঙ্কার দিয়ে। তবে তারেক রহমান অনেক পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক। তিনি ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে ভারত ও হাসিনাকে রাজনীতিতে ফিরে আসার সুযোগ দেবেন বলে মনে হয় না। আর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলদের বুঝতে হবে বিএনপিকে দূরে ঠেলে দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা হবে আত্মঘাতী।ইনকিলাব