বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বহুমুখী অর্জন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫
  • ২৩ দেখা হয়েছে

রাজু আলীম:- বাংলাদেশের গণমানুষের ভালোবাসার নাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে-বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই মূলমন্ত্র যেন সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখছে তারা। দুর্নীতিমুক্ত থেকে গুণগত ও কারিগরি মান বজায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে সেনাসদস্যদের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষার বিকাশে এ বাহিনীর অবদান উল্লেখযোগ্য। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশকে আলোকিত করতে অবদান রাখছে।

সেনাবাহিনী ৪৪টি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ এবং ১৯টি ইংলিশ মিডিয়াম বা ভার্সনসহ সারা দেশে ১২টি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করছে। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও আধুনিক জ্ঞানচর্চার জন্য মিরপুর সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস। প্রকৌশল শিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারিত করার লক্ষ্যে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং কুমিল্লা, সৈয়দপুর ও কাদিরাবাদ সেনানিবাসে তিনটি আর্মি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পেশায় দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করছে। এছাড়া আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নামে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাভার ও সিলেট সেনানিবাসে পরিচালিত হচ্ছে।

পদ্মা সেতুতে জাজিরা ও মাওয়া অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ, নদীশাসন ও নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি ব্রিজ অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ সার্ভিস এরিয়ার কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট হিসাবে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছে এ বাহিনীর সদস্যরা। পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য সুপারভিশন পরামর্শক হিসাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে তারা। বিভিন্ন সড়কের উন্নয়নমূলক কাজ, ব্রিজ, ওভারব্রিজ, নদী ড্রেজিং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর মহিপাল ফ্লাইওভার, ঢাকা শহরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ৩০০ ফিট পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, মেঘনা-গোমতী ব্রিজের মেরামত কাজ, পদ্মা নদী ড্রেজিং প্রকল্প, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন সড়ক উন্নয়ন নির্মাণের কাজ ইত্যাদি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বিভিন্ন সড়ক নির্মাণ করায় এ অঞ্চলে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। পার্বত্য তিন জেলায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে এসেছে উন্নয়ন ও প্রাণের স্পন্দন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ, রক্ষণাবেক্ষণ, পারমাণবিক জ্বালানি পরিবহণ এবং প্রতিরক্ষার দায়িত্বে আছে সেনাবাহিনী। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র তথা ভোটার আইডি কার্ড, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং মেশিন রিডেবল ভিসা তৈরিতে তাদের ভূমিকা অনন্য।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ভূমিকা সারা বিশ্বের প্রশংসা পেয়েছে। ছাত্র-জনতার বুকে গুলি না চালিয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করেছে তারা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। অপারেশন উত্তরণের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি রক্ষা এবং সম্প্রীতি বজায় রেখেছে এ বাহিনী।

সিএমএইচ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করছে। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ এবং পাঁচটি আর্মি মেডিকেল কলেজ, যথাক্রমে বগুড়া, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর ও রংপুর সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে নারী অফিসাররা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। আর্মি মেডিকেল কোরের নারী অফিসাররা পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও বিভিন্ন দুর্যোগকবলিত অঞ্চলে সেনাবাহিনী আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। করোনা মহামারিতে এ বাহিনীর ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সদস্যরা শান্তিরক্ষী পরিবারের সদস্য হন। বিশ্বশান্তি রক্ষায় এ অবধি সেনাবাহিনীর ১২৫ জন সদস্য প্রাণ দিয়েছেন।

সেনাবাহিনীর নিরলস পরিশ্রমে পার্বত্য তিন জেলায় যোগাযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ফলে সৌন্দর্যপিপাসু হাজারো মানুষ এখন এসব জেলায় বিভিন্ন দুর্গম স্থানে ভ্রমণ করার সুযোগ পাচ্ছে। সেনাবাহিনীর উদ্যোগে নির্মিত নীলগিরি, সাজেক, থানচি, রাঙামাটি ও কাপ্তাই লেকে রিসোর্ট এবং ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ অতি গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভটি পর্যটনশিল্প বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। রেমাক্রী, বড়পাথর, বগা লেক, আলুটিলা, চিম্বুক, স্বর্ণমন্দির ইত্যাদি এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে পর্যটনশিল্প অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালিদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে।

জাতীয় পর্যায়ে লোকসানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি ২০০০ সালে এবং বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্ট লিমিটেড ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পর কাজের গুণগত ও কারিগরি মান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যথাযথ তদারকির কারণে সেগুলো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সেনাবাহিনী পরিচালিত সেনা কল্যাণ সংস্থা নির্ভেজাল দ্রব্য বাজারে সরবরাহ করে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে অবদান রাখছে। দরিদ্র ভূমিহীন জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্বল্প বাজেটের মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে ব্যারাক নির্মাণপূর্বক সুষ্ঠুভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করায় জাতীয় পরিমণ্ডলে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

গণতন্ত্রে উত্তরণ, মব কালচার নির্মূল, হত্যা-সন্ত্রাস-রাহাজানি বন্ধে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে এই বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য। সম্প্রতি গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইহুদি প্রতিষ্ঠান আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শোরুমে লুটপাট চালায় একশ্রেণির মানুষ। এদেরকে প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকায় দেখা যায় সেনাবাহিনীকে।

এখন অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর হলে এই বাহিনী ব্যারাকে ফিরে গিয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম আরও উজ্জ্বল করবে-এই প্রত্যাশায় দেশের জনসাধারণ। সূত্র : দৈনিক যুগান্তর

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions