ডেস্ক রির্পোট:- জাতীয় সংসদের এক-চতুর্থাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা এবং এসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থাবিষয়ক সংস্কার কমিশন। পাশাপাশি কমিশন সংসদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০-তে উন্নীত করার সুপারিশও করেছে। এ সুপারিশের পক্ষে ঐকমত্য পোষণ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, এর মাধ্যমে তৃণমূল থেকে নারী নেতৃত্ব উঠে আসার বিস্তর সুযোগ তৈরি হবে এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। বর্তমানে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনায় ‘সিলেকশন’-এর কারণে নারীরা জাতীয় সংসদে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে না।
বর্তমানে সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন আছে ৫০টি। এই আসনগুলোয় সরাসরি নির্বাচন হয় না। সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত আসন সংখ্যার আনুপাতিক হারে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী প্রার্থীকে সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য মনোনীত করে রাজনৈতিক দলগুলো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, ‘মনোনীত করা হলে জনসমর্থনের বদলে নিজের রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুকূল্যের ওপর একজন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ভর করে। যে কারণে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা প্রকৃত ক্ষমতায়ন থেকে বঞ্চিত হন এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব প্রতীকী হিসেবেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়।’
এনসিপির নেতারা বলছেন, ‘বিদ্যমান পদ্ধতি অনুসারে আসনপ্রাপ্তির অনুপাতে বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এসব আসন বণ্টন এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের কিছু নারীর জন্য সংসদীয় আসন সীমাবদ্ধ থাকবে না। অন্য নারীরাও প্রার্থী হতে পারবেন। কোনো দলের ইচ্ছা বা দয়ার ভিত্তিতে নয়; বরং জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে ভোটারদের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হবেন নারীরা।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার বলেন, ‘এবার জাতীয় সংসদে ৪০০টি আসনের প্রস্তাব করা হয়েছে, এর মধ্যে ১০০ আসনে সরাসরি নারীদের জন্য ভোটের বিধান করা হোক। এটা জরুরি। আপনি যতটা আসন পাচ্ছেন, তার ভিত্তিতে আপনাকে সংরক্ষিত নারী আসন দিচ্ছে; তাতে এমপির বউ, এমপির খালা, এমপির চাচি চলে যাচ্ছেন সংসদে। তাই আমরা চাচ্ছি, ‘আসনভিত্তিক সরাসরি নারী ভোটের বিধান। এতে রাতারাতি সারা দেশে নারী নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে। এর ফলে ১০০ নারী সংসদ সদস্য পাওয়া যাবে। ফলে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ ও আইনি তৈরিতে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। যখন তারা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে এমপি হবেন, তাদের দায়দায়িত্বও অনেক বাড়বে।’
সারোয়ার তুষার আরও বলেন, ‘এখন তো যে ফরম্যাটে আছে সেটা ওয়েস্ট অব মানি, ওয়েস্ট অব টাইম। এর বিবেচনায় আমরা মনে করি, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকুক; কিন্তু তারা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উঠে আসুক। তৃণমূল থেকে উঠে আসুক।’
এনসিপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার সমন্বয় কমিটির সদস্য মনিরা শারমিন বলেন, ‘আমরা নারী আসনে সরাসরি ভোট চাই। নারীরা নারীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবে, সেখান থেকে জনগণ ভোটের মাধ্যমে নারী নেতৃত্ব নির্বাচিত করবে। বর্তমান পদ্ধতিতে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টি, যেটা বিএনপির পক্ষ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করতে বলা হচ্ছে; কিন্তু আমরা মনে করি, এভাবে ‘সিলেকশন মডেল’ অনুসরণ করে নারী আসন ভাগাভাগি করলে তৃণমূল থেকে নারী নেতৃত্ব উঠে আসার সুযোগ থাকে না। আমরা বিগত সময় দেখেছি, সংসদে নারী আসনে এমন নারীদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যারা ঠিকমতো বাংলাও পড়তে পারে না। এখানে সুযোগ দেওয়া হয় স্বজনপ্রীতির ভিত্তিতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে এমন অনেক নারী নেতৃত্ব আছেন যারা ভালো সংগঠক, যারা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অবদান রাখতে পারবেন। এর মাধ্যমে নমিনেশন দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে নারী নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে আসবে। নারীরা ১০০ আসনের বিপরীতে ২০০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আমরা মনে করি, স্বাধীনতার পর থেকেই যে বন্দোবস্ত আছে, তাতে রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার দ্বার রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমরা তৃণমূল থেকে নির্বাচিত সেই নারীকে জাতীয় রাজনীতিতে দেখতে চাই, যে নিজ মেধা ও যোগ্যতায় সংসদে যাবেন।’
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে প্রায় একমত পোষণ করেছে এনসিপি। আইন সভার ক্ষেত্রে একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইন সভা, যার একটি নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ এবং একটি উচ্চকক্ষ গঠন করা এবং উভয় কক্ষের মেয়াদ চার বছর করার বিষয়ে একমত এনসিপি। অবশ্য বিএনপি চার বছরের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছে। এনসিপি নিম্নকক্ষের প্রস্তাবিত ৪০০ আসনের মধ্যে ৩০০ আসন উন্মুক্ত থাকা এবং ১০০ আসনে নারী প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে মত দিয়েছে। আইনসভার স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি সবসময় বিরোধীদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হওয়া নিয়েও সংস্কার কমিশনের সঙ্গে একমত এনসিপি।
উচ্চকক্ষের সদস্যদের মধ্যে ১০০ জন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের সংখ্যানুপাতে নির্ধারিত হওয়া এবং বাকি পাঁচজন রাষ্ট্রপতির মনোনীত করার বিষয়ে একমত এনসিপি। তবে নির্বাচনের আগেই উচ্চকক্ষের প্রার্থী ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করার কথা বলেছে দলটি। পিআর পদ্ধতির বেলায় একমত হলেও ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের ওপরে গেলে তা রাউন্ড ফিগার করার (১ দশমিক ৪ শতাংশ=১ শতাংশ; ১ দশমিক ৬ শতাংশ=২ শতাংশ) মত দিয়েছে এনসিপি।কালবেলা