রাঙ্গামাটি;- চাঁদাবাজির লাগামহীন দানবীয় সংস্কৃতির বলি হলেন আবারও এক নিরীহ পাহাড়ি। রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতুলি ইউনিয়নের উত্তর হাগলাছড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা সাধন বিকাশ চাকমা সম্প্রতি ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) সন্ত্রাসীদের বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
জানা যায়, সাধন বিকাশ চাকমা তার নিজস্ব জুমভূমিতে উৎপাদিত ঝাড়ুফুল সংগ্রহ করে বোয়ালখালী বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে দীঘিনালার দিকে একটি চাঁদের গাড়িতে করে রওনা দেন। আনুমানিক বাজারমূল্য এক লক্ষ টাকার এই ঝাড়ুফুল তার পরিবারের একমাত্র আয়ের ভরসা ছিল।
তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত শনিবার (৫ এপ্রিল) দীঘিনালার পথে শুকনাছড়া নামক স্থানে পৌঁছালে ইউপিডিএফ (প্রসীত)-এর সশস্ত্র সদস্যরা তার গতিরোধ করে এবং তার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। সাধন বিকাশ চাকমা এই ঝাড়ুফুলগুলো নিজের জুমে শ্রমে উৎপাদিত বলে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, উক্ত সন্ত্রাসীরা তৎক্ষণাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর শুরু হয় অমানুষিক মারধর ও শারীরিক নির্যাতন।
চোখে অন্ধকার দেখার মতো অবস্থা হয় সাধনের। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, তার শরীরের উপর উপচে পড়া ঘুষি, লাথি ও রডের আঘাত বর্ষিত হয়। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে দাগের চিহ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শুধুমাত্র আর্থিক চাঁদা না দেওয়ার কারণে ইউপিডিএফ নিজ জাতিভুক্ত একজন নিরীহ মানুষকে যে হিংস্রতা ও বর্বরতার সঙ্গে আক্রমণ করেছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।
এরপর তার ঝাড়ুফুলগুলো গাড়ি থেকে নামিয়ে এনে রাস্তায় ফেলে দিয়ে পিষে নষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের অনুনয়-বিনয়ের পর সন্ত্রাসীরা বাধ্য হয় তাকে ছেড়ে দিতে। তবে এই শর্তে যে, কেউ যেন কোথাও এই ঘটনা প্রকাশ না করে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র হিলনিউজবিডি কে জানায়, ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলে চাঁদা আদায়ের নামে স্বজাতির উপরই ভয়াবহ নিপীড়ন চালাচ্ছে। ‘জাতীয় মুক্তি’র নামে পরিচালিত এ সংগঠনের কার্যক্রম এখন পাহাড়িদের দৈনন্দিন জীবনধারাকে একপ্রকার জিম্মি করে ফেলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউপিডিএফ (প্রসীত)-এর এহেন আচরণ শুধু রাষ্ট্রবিরোধিতাই নয়, বরং নিজ জাতির মধ্যেই বিভাজন ও অবিশ্বাস সৃষ্টির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে পাহাড়ি সমাজের ভিত্তিকে দুর্বল করছে।
এই ঘটনার জন্য এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি, কারণ ভুক্তভোগী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা ভয় ও হুমকির মুখে নীরব থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ইউপিডিএফ (প্রসীত)-এর বিরুদ্ধে এর আগেও পাহাড়ে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও রাজনৈতিক অস্পষ্টতা এ ধরনের অপরাধকে উৎসাহিত করছে বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।