ডেস্ক রির্পোট:- হয়রানিমুক্ত নাগরিক সেবাসহজীকরণে মাঠ প্রশাসনে ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মৌখিক নির্দেশনার পর সেটি লিখিত আকারে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো: মামুন স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়ার জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
নির্দেশনাগুলো হলো, স্তূতিবাক্য পরিহারপূর্বক মূল কাজে মনোনিবেশ, সমন্বয়জনিত সমস্যা থাকলে তা সমাধানপূর্বক বাস্তবায়ন, নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিতকরণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ সব ভালো কাজে প্রতিযোগিতা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ জনগণের সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, নিজস্ব সৃজনশীলতা দিয়ে নিজেকে প্রকাশ, দুর্নীতি ছাড়াই জনগণের জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট, এনআইডি সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করণ, পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন রহিতকরণের বিষয়ে জনগণের মধ্যে প্রচার, জমি রেজিস্ট্রি, অনলাইনে খাজনা দেয়ার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে জনগণকে সেবাগুলো সহজে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ, ডিজিটালাইজড সেবাগুলো অফলাইনের পরিবর্তে অনলাইনে প্রদানের ব্যবস্থা, ভয়ভীতির ঊর্র্ধ্বে থেকে আইন মেনে কর্মসম্পাদন, প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনাগুলো বিশেষ গুরুত্ব প্রদানপূর্বক প্রতিপালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
গত ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগণ প্রধান বিচারপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ, সদয় নির্দেশনা গ্রহণ ও মতবিনিময় করেন। এবার মোট অধিবেশন ৩৪টি কার্য-অধিবেশন ৩০টি।
বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ১ হাজার ২৪৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৪টি প্রস্তাব কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলোতে জনসেবা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, জনদুর্ভোগ হ্রাস করা, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনের বিকাশ, আইনকানুন বা বিধিমালা সংশোধন, জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে।
ডিসি সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল, ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদারকরণ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ইগভর্ন্যান্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, সরকারের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে তার ফলও জনগণ ভোগ করতে শুরু করেছে। আপনারা এরই মধ্যে লক্ষ্য করেছেন বিগত কয়েকটি রমজানের চেয়ে এবারের রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে সহনীয় পর্যায়ে ছিল। ভোজ্যতেলের বাজারে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা করলে আমরা নিয়মিত বাজার ও গোডাউন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তা প্রতিহত করেছি। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি সরকারি অফিসে হয়রানিমুক্তভাবে জনসেবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।