হাসিনাসহ আ’লীগের দেড় শতাধিক মন্ত্রী-এমপি দুদকের মামলাজালে,৭ মাসে সাবেক মন্ত্রী এমপি আমলা পুলিশসহ প্রায় ৩০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
  • ৫৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ দেড় শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রভাবশালীদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা ছাড়াও কয়েকজন আমলা রয়েছেন। গত সাত মাসে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবারও অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও তার পবিবারের বিরুদ্ধে তিনটি এবং শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।

মামলার বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো: আক্তার হোসেন বলেন, প্রতিটি মামলারই দুদকের বিধি বা আইন অনুযায়ী যথাসময় তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাসহ আড়াই শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত কার্যক্রম চলমান। অনেকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে মামলা করা হয়েছে, বাকিদের বিরুদ্ধেও মামলার প্রস্তুতি চলছে।

অপর দিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক তা জনগণ প্রত্যাশা করে। কাউকে ছাড় না দিয়ে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তা হলে দুদক নিয়ে আবার মানুষের হতাশা বাড়বে।

দুদকের জনসংযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ও পূর্বাচলে প্লট জালিয়াতির ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও তাদের পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে জানুয়ারি মাসে ৯টি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

এ ছাড়া জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, বিদেশে টাকা পাচার, টাকা আত্মসাৎ ও জালজালিয়াতির ঘটনায় শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫০টি মামলা দায়ের করা হয়।

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর তার পরিবার ও তার শাসনামলের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ প্রায় ৩০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। দুদক সূত্র জানায়, অনুসন্ধান ও মামলা ছাড়াও দুদক বিতর্কিত ব্যবসায় গ্রুপ এস আলম, বেক্সিমকোসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সম্পদ জব্দ করেছে। গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুরসহ পাঁচজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে।

হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা

তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে মোট ২০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গত ১৪ জানুয়ারি পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে দুদক। একই অভিযোগে শেখ রেহানা ও তার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক (রূপন্তী) এবং ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের (ববি) বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। এই তিন মামলায় রেহানার আরেক মেয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক এবং রেহানার বোন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়।

তিনটি বিমানবন্দরের চার প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করা হয়।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক হয়েছিলেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এই অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়। এ ছাড়া তার সূচনা ফাউন্ডেশন ও আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। পাশাপাশি গাজীপুরে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বাগানবাড়ি নিয়েও অনুসন্ধান শুরু হয়। অনুসন্ধান শেষে গত বৃহস্পতিবার সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

এই মামলার একটিতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ব্যাংকের সিএসআর খাত থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে ৩৩ কোটি টাকা সহায়তার নামে আত্মসাতের অভিযোগে এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকেও আসামি করা হয়েছে।

গতকাল আরো এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। ৩৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমু, তার শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

গত ১৩ মার্চ আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। লন্ডনে ৭৬ কোটি টাকা পাচার ও ঋণের ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে বেক্সিমকো এলপিজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ৩ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো: আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।

গত ৪ মার্চ সাবেক মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।

গত ৫ মার্চ সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার স্ত্রী হাসিনা গাজীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

গত ৬ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও তার স্ত্রী আইরিন মালবিকা মুনশির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ৯ মার্চ জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ব্যাংক হিসাবে সন্দেজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী ডা: মো: এনামুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।

গত ১২ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৪৫০ কোটি টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো: ওমর ফারুক চৌধুরী এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

গত ১৪ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল ও সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুদক। মামলায় মেহের আফরোজ চুমকির স্বামী ও শেখ হেলালের স্ত্রীকে আসামি করা হয়েছে। গত ১৬ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও প্রায় ১২ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও তার স্ত্রী আফরোজা হকের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে দুদক।

গত ১৮ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস ও তার স্ত্রী নিলীমা দাসের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুদক প্রথম মামলা করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ৯ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। এর আগে সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৫১ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়।

জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত প্রায় ৯ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তার স্ত্রী মোছা: হোসনে আরা বেগম এবং তাদের ছেলে মো: রাকিবুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ছাড়াও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ একাধিক আমলা ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধ মামলা দায়ের করেছে দুদক।

দুদকের সূত্র বলছে, গত বছর প্রায় ১৬ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮০ ভাগ অভিযোগ এসেছে।

দুদক সূত্র জানায়, গত ১৫ বছরে বড় বড় প্রকল্পেও দুর্নীতি হয়েছে।নযাদিগন্ত

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions